ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

নদী তীরবর্তী শতাধিক পরিবারের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন

মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪০, ২৩ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নদী তীরবর্তী শতাধিক পরিবারের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন

মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন, মাগুরা : জেলার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের ভাঙনকবলিত মধুমতি নদীর তীরে কাশিপুর গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের টেকসই ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের দিকে। বর্ষার আগেই কাজ শেষ হবে হবে জানিয়েছেন নির্মাণ সংস্থার দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ।

এতে নদীর ভাঙনে হুমকির মুখে থাকা কবরস্থান, স্কুল, মসজিদ ও হাটবাজারসহ বহু স্থাপনা রক্ষা পাবে। একই সঙ্গে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন সর্বস্বান্ত  হওয়া নদী তীরের শতাধিক পরিবার।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায়  মহম্মদপুর উপজেলার অন্তর্গত কাশিপুরের তৎসংলগ্ন এলাকাকায় মধুমতি নদীর ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। প্রকল্পে আর্থিক সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়।

তিন প্যাকেজে ৩০৫ মিটার দৈর্ঘ্যের তীর সংরক্ষণ কাজে ব্যয় হচ্ছে তিন কোটি  ৪১ লাখ ১৮ হাজার ৮৪৯ টাকা। ২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল কার্যাদেশ পায় খন্দকার আলী হায়দার নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। একই মাসের ১৬ তারিখে প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মাগুরা ২ আসনের সাংসদ, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. শ্রী বীরেন শিকদার।  চলতি বছরের ২৪ মে কাজ শেষ হওয়ার কথা।

 



সরেজমিন মধুমতি তীরে গিয়ে দেখা গেছে, নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আরসিসি ব্লক স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে। নদী তীরে ব্লক তৈরি করে রাখা হয়েছে। বিশেষ ধরনের কাপড়ে তৈরি বস্তায় বালু ভর্তি করে মেশিন দিয়ে সেলাই করা হচ্ছে। রাতদিন কাজ চলছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৯৫ ভাগ কাজ শেষ।

মধুমতি তীরের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যারা মধুমতি নদীর ভাঙনের ভয়ে বসতভিটা জমি-জিরাত পানির দরে বিক্রি করে অন্যত্র যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তারাও এখন ফিরে আসছেন। মধুমতি নদী ঘেরা মহম্মদপুর  সদর ইউনিয়নের নদী তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা কাশিপুর গ্রামের মানুষ এখন নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন।

পঞ্চাশোর্ধ আসমা বেগম নামে স্থানীয় এক নারী বলেন, ‘নদীর কুলি এ বছর থাকতি পারব বলে আশা ছিল না। বান্দাল (বাঁধ) দিয়ায় আমগের বাড়ি ঘর টিহে গিলো।’

শারমিন আক্তার ও রাফেজা ইয়াসমিন এই বছর এসএসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। তারা জানায়, রাতে নদীর গর্জনের শব্দে জানালা খুলতে ভয় পেত তারা। সব সময় আতঙ্ক ছিল কখন বাড়ি নদীর গর্ভে বিলীন হয়। এই বছরই বর্ষার আগে তাদের বাড়ি-ঘর সরিয়ে নেওয়ার কথা ছিল। তীর সংরক্ষণের কাজ হওয়ায় বসত বাড়ি ছাড়তে হচ্ছে না তাদের। এ জন্য তারা দারুণ খুশি।

ভাঙনকবলিত এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের মকবুল হোসেন মুকুল নামে এক সাধারণ সদস্য জানান, তার ওয়ার্ডে নদীভাঙন প্রধান সমস্যা। ভাঙনে শতশত পরিবার সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছে।দেরিতে হলেও তীর সংরক্ষণের কাজ হওয়ায় শতাধিক পরিবার নতুন করে জীবন শুরু করতে পারবে।

কাশিপুর গ্রামের রইস মোল্যা (৫০),  নওশের শেখ (৫৫) ও অলিয়ার রহমান (৬০) জানান, বছরের পর বছর ধরে নদীর ভাঙনে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তিন চারবার নদীভাঙনে বসতবাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন। এখন তীরে পাকা বাঁধ হয়েছে। এখন আর নদীভাঙনের ভয় নেই।তাই ফিরে এসেছেন।

বসুরধুলজুড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও  নদী তীরের বাসিন্দা রিয়াজুর রহমান  বলেন,  ‘এমপি ড. শ্রী বীরেন শিকদার উদ্যোগ নেওয়ায় আজ মধুমতি নদী তীরবর্তী শত শত মানুষ আবার ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে।’

তিনি বলেন,  ‘গত বর্ষায় মসজিদ  বসতবাড়িসহ একে একে ১০-১৫টি বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এখন টেকসই বাঁধ নির্মাণ হচ্ছে। তাই নদীভাঙনের আতঙ্ক আর নেই। এই প্রকল্পের ফলে রক্ষা পাবে  উপজেলার সবচেয়ে বড় কবরস্থান ও ঈদগাহসহ হাজার হাজার একর জমি ও শহর রক্ষা বাঁধ।’

জানতে চাইলে মাগুরা ২ আসনে সাংসদ, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. শ্রী বীরেন শিকদার বলেন, ‘মধুমতি নদীর ডান তীর সংরক্ষণের কাজ শেষ পর্যায়ে। এরপর  ভাঙন কবলিত অন্যান্য এলাকার জন্য পর্যায়ক্রমে প্রকল্প নেওয়া হবে।’

 



মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ বলেন, ‘নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ শেষ পর্যায়ে। কাজের গুণগত মান বজায় রেখে কাজ চলছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিবিড় তত্ত্বাবধানে কাজের প্রতিটি স্তরে মান বজায় রাখা হচ্ছে।’ 

তিনি বলেন, ‘এখানে তিনটি প্যাকেজের মধ্যে একটির কাজ শেষ। বাকি দুটির কাজ এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ হবে।’

প্রসঙ্গত, আশির দশকে পদ্মার শাখা মধুমতি নদীর ভাঙন তীব্র হয়। প্রতি বর্ষায় মহম্মদপুর উপজেলার মধুমতি তীরবর্তী তিনটি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামে ভাঙন ভয়াবহ রুপ ধারণ করে। এর মধ্যে মধুমতি গ্রাস করেছে আবাদি জমি, বসতভিটা, বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ, কবরস্থান ঈদগাহ ও মাদ্রাসাসহ অসংখ্য স্থাপনা। এসব এলাকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ জায়গা জমি, ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। গৃহহারা এসব মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন বাঁধ ও চরাঞ্চলে। সবচেয়ে ভাঙন কবলিত এলাকা হচ্ছে সদর ও পলাশবাড়িয়া ইউনিয়ন।



রাইজিংবিডি /মাগুরা/ ২৩ এপ্রিল ২০১৭/ মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়