ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সুঁই সুতায় ভাগ্য বদল

আশরাফুল আলম লিটন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৫, ১৮ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সুঁই সুতায় ভাগ্য বদল

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : মানিকগঞ্জের ৪০ হাজার নারী এখন ব্যস্ত পাঞ্জাবি-ফতুয়ায় নকশার কাজ নিয়ে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নামকরা ফ্যাশন হাউসগুলোর পোশাকে এই গ্রামীণ নারীরা নিপুণ নকশা তুলছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুই দশকেরও বেশি সময় আগে ব্র্যাকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে গ্রামীণ নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে শুরু করে সুঁই সুতার নকশার কাজ। ব্র্যাক তাদের নিজস্ব সেলস সেন্টার আড়ং-এর মাধ্যমে নারীদের এই পোশাক বিক্রি করেন। এরপর ব্যক্তিগত ও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে শুরু হয় পাঞ্জাবির ভরাট কাজ। এভাবেই গত দুই দশকে এই নকশার কাজে ঘটে গেছে নীরব বিপ্লব। শুরুর দিকে কাজটিকে ছোট করে দেখা হলেও বর্তমানে সেই দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই পাল্টে গেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক শিক্ষিত তরুণ-তরুণী এই কাজে জড়িয়ে পড়েছেন। প্রতি ঈদ মৌসুমে এখান থেকে হাতে কাজ করা এক লাখেরও বেশি পাঞ্জাবি চলে যায় বিভিন্ন শো-রুমে।

সদর উপজেলার কেওয়ারজানি গ্রামের রাবেয়া সুলতানা জানান, নকশার আকার অনুয়ায়ী একেকটি পাঞ্জাবিতে ভরাট কাজ করে পাওয়া যায় ২০০ থেকে ১০০০  টাকা। একটি পাঞ্জাবির নকশা করতে তিন থেকে চার দিন সময় লাগে। এ ছাড়া তারা শাড়ি, থ্রি-পিস সেলাই করে থাকেন।

একই গ্রামের কলেজ ছাত্রী লিবিয়া আক্তার জানান, পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে তিনি এই কাজ করে থাকেন। আগে এই কাজে সবাই আসতে চাইত না। এখন দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাওয়ায় অনেক শিক্ষিত তরুণী এই কাজ করছেন।

দিঘী গ্রামের রোখসানা জানান, তার স্বামী নেই। দুই সন্তান ও মা-বাবা নিয়ে তার সংসার। বাড়িতে হাঁস-মুরগি পালনের পাশাপাশি তিনি পাঞ্জাবি সেলাইয়ের কাজ করেন। এতে তার সংসারে বাড়তি আয় হয়।

স্থানীয় অনেক নারী শ্রমিক জানিয়েছেন, সুঁই সুতা দিয়ে নকশা তৈরির কাজ অনেক পরিশ্রমের। পরিশ্রম অনুযায়ী মজুরি দিচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। মজুরি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

জননী ক্রাফটসের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম পরান জানান, প্রথম দিকে ব্র্যাক এই কাজটি শুরু করলেও এখন অনেক উদ্যোক্তা কাজ করছেন। এসব উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে জেলায় প্রায় ৪০ হাজার নারী এখন সুঁই সুতার কাজ করছেন। তাদের তৈরি এসব পোশাক ঢাকার বিভিন্ন নামি-দামি শো-রুমে চলে যাচ্ছে। কাজ অনুযায়ী শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হচ্ছে।

জাগির ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান, গ্রামীণ এসব নারী নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখছেন। তবে শো-রুমগুলোর আন্তরিকতা আর ন্যায্য মজুরি পেলে এই শিল্পকে আরো উন্নত করা সম্ভব হবে।



রাইজিংবিডি/মানিকগঞ্জ/১৮ জুন ২০১৭/আশরাফুল আলম লিটন/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়