ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

স্কুল নিয়ে শিক্ষকরা এক ইউনিয়ন ছেড়ে অন্য ইউনিয়নে..

বাদশাহ সৈকত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্কুল নিয়ে শিক্ষকরা এক ইউনিয়ন ছেড়ে অন্য ইউনিয়নে..

বিদ্যানন্দ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর অভাবে পড়ে আছে বইয়ের স্তুপ

কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা: নদী ভাঙ্গনের কারণে কুড়িগ্রাম রাজারহাটের বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের একমাত্র বিদ্যাপিঠ  বিদ্যানন্দ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ৫ কিলোমিটার দূরে সরিয়ে নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চরম ব্যহত হচ্ছে।

তিস্তা নদীর ভাঙ্গনের শিকার হয়ে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের এই বিদ্যাপিঠটি পার্শ্ববর্তী নাজিম খাঁ ইউনিয়নে তালতলা নামক স্থানে স্থাপনের পর থেকে  বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। এতে এলাকার শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবার আশংকা করছেন অভিভাবক মহল।

সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, গত প্রায় এক বছর আগে বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের পর থেকে এই আগস্ট মাস অবধি ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত হাজিরা খাতায় কোন শিক্ষার্থীর নামই তোলা হয়নি। অথচ খাতায় বিগত মাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি শতভাগ দেখানো হয়েছে। ক্লাস নিয়মিত না হলেও শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি পেয়েছে এবং শিক্ষকরাও নিয়মিত বেতন উত্তোলন করছে।

স্থানান্তরের পর লেখাপড়া ব্যহত হলেও নানা ধরনের দুর্নীতির আবহ তৈরি হয়েছে বিদ্যালয়টি ঘিরে। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থানান্তর, অনুদান এবং অন্যান্য খাতে প্রতিষ্ঠানের অন্তত ৫লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

তিস্তা পাড়ের বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের এই নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯১ সালে ৩০শতক জায়গার উপর স্থাপিত হয়। ওই বছরই বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়। বিদ্যালটিতে  প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষকসহ স্টাফ রয়েছেন ১০জন।

গত বছর জুন মাসে নদী ভাঙ্গনের মুখে পড়লে পার্শ্ববর্তী তৈয়ব খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমিতে স্থানান্তর করা হয়। বিদ্যালয়ের জন্য জেলা প্রশাসক নতুন ঘর নির্মাণে ৩০হাজার টাকা এবং ১০ বান্ডিল ঢেউ টিন অনুদান দেন। কিন্তু এর কিছুদিন পর বিদ্যালয়টির শিক্ষকরা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে রাতারাতি ৫ কিলোমিটার দূরের নাজিম খাঁ ইউনিয়নে তালতলায় স্থানান্তর করে।

বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তৈয়ব খাঁ গ্রামের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম, আব্দুল হাই জানান, প্রধান শিক্ষক তার ব্যক্তিস্বার্থের কারণে বিদ্যালয়টি অন্য ইউনিয়নে নিয়ে গেছেন। তারা গ্রামবাসিরা বিদ্যালয়ের জন্য জমি দিতে চেয়েছিলেন তারপরও  প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়টি অন্য ইউনিয়নে নিয়ে যান। তারা জানান, বিষয়টি বিভিন্ন মহলে লিখিত ভাবে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। অথচ স্থানান্তরকৃত তালতলা এলাকার আধা কিলোমিটার দূরে কালিরহাট দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়, বাছড়া আজিজিয়া আলিম মাদরাসা এবং এক কিলোমিটার দূরে ডাংরারহাট দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় এবং নাজিম খা উচ্চ বিদ্যালয় রয়েছে।

স্কুলের শিক্ষার্থী ৮ম শ্রেণির ছাত্রী (রোল-১) রীপা রাণী, জেসমিন আক্তার (রোল-৬), ৭ম শ্রেণির ছাত্র মাইদুল জানায়, স্কুল দূরে হওয়ায় অনেকেই স্কুল যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। তারা এখন বাবা-মায়ের সাথে খেতে-খামারে কাজ করে। যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব ভাল না। পায়ে হেটে স্কুল যেতে পা ব্যথা হয়। কাঁচা রাস্তা হওয়ায় বৃষ্টি হলেই কাদা মাটিতে হাটা দায় হয়ে যায়। ফলে একরকম স্কুল যাওয়াই বন্ধ তাদের।

তৈয়ব খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘স্কুলটি ভেঙ্গে যাবার পর আমাদের বিদ্যালয়ের জমিতে টিনের ঘর করে কয়েক মাস ক্লাস হয়েছিল। আকস্মিকভাবে সে ক্লাস বন্ধ হয়ে যায়। পরে জানতে পারি তালতলায় স্কুলের নতুন ঘর করে সেখানেই স্কুলটি চালু করেছে। আমার বিদ্যালয়ের একটি রুমে তাদের আসবাবপত্র রয়ে গেছে। বেশ কয়েকবার বলার পরেও সেগুলো নিয়ে যায়নি।’

এদিকে বিদ্যালয়টি স্থানান্তরের সময় প্রধান শিক্ষক লোকনাথ বর্মণের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের ৩ লাখ টাকা মূল্যের ৫টি রেইনট্রি, ১০টি মেহগনি, ১০টি ইউক্যালিপটাসসহ ২৫টি গাছ কর্তন এবং বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনের ১লাখ ৬০হাজার মূল্যের ২০হাজার ইট বিক্রির টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে।

লোকনাথ বর্মণ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করলেও নিয়মিত ক্লাস না হওয়ার বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। আর বিদ্যালয় স্থানান্তরের বিষয়ে তিনি জানান, ওখানে জায়গা না পাওয়ায় অফিসের সাথে কথা বলে নাজিম খাঁ ইউনিয়নের তালতলায় স্থানান্তর করা হয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আশরাফ উজ জামান সরকার জানান, এক ইউনিয়ন থেকে অন্য ইউনিয়নে  বিদ্যালয় স্থানান্তর কোনো বিধিতে নিষেধ আছে কিনা তার জানা নেই।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ রাশেদুল হক প্রধান জানান, বিদ্যালয় স্থানান্তরের বিষয়টি মাসিক সমন্বয় মিটিংয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং পরবর্তীতে স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে আলোচনা করে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এতে কাজ  না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান তিনি।




রাইজিংবিডি/কুড়িগ্রাম/৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮/বাদশাহ্ সৈকত/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়