ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বাম কিংবা মালিশ ব্যথা উপশমে কতটুকু কার্যকর

ডা. সজল আশফাক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:২১, ৩ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাম কিংবা মালিশ ব্যথা উপশমে কতটুকু কার্যকর

ডা. সজল আশফাক : মালিশ একটি অতি প্রচলিত চিকিৎসা-পদ্ধতি। গা ব্যথা, কোমর ব্যথা, গিঁটে ব্যথা, এমনকি মাথা ব্যথাতেও বাম কিংবা মালিশের ব্যবহার হরহামেশাই দেখা যায়।

ব্যথা উপশমে বাম কিংবা মালিশের স্তুতি তুলে ধরতে গিয়ে নানা ধরনের বিজ্ঞাপনগুলোও কম যায় না। এসব চটকদার বিজ্ঞাপনে বাম, মালিশ, স্প্রে ইত্যাদিকে ব্যথা উপশমে তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর উপকরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষ বাম বা মালিশ ব্যবহারের ব্যাপারে আকর্ষণ অনুভব করে। এ ছাড়া বিভিন্ন অসুখে বুকে-পিঠে, হাতে-পায়ের তালুতে তেল মালিশের প্রচলন তো রয়েছেই।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বাম কিংবা মালিশ ব্যবহারে কি আসলেই কোনো উপকার হয়?  যারা বাম কিংবা মালিশ ব্যবহার করে, তাদের ধারণা, এ জাতীয় বাম ত্বকের গভীরে অবস্থিত মাংসপেশিতে তাপ সঞ্চালনের মাধ্যমে ব্যথা কমায়। সর্বসাধারণের মনে এই ধারণা হয়েছে রাস্তাঘাটে ওষুধ বিক্রেতার লেকচার থেকে শুরু করে টিভির কাল্পনিক বিজ্ঞাপন-চিত্রের মাধ্যমে। অনেক বিজ্ঞাপন চিত্রেই অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী করে দেখানো হয় ব্যথা উপশমকারী বিভিন্ন বাম কিংবা মালিশের জাদুকরী উপশম-প্রক্রিয়া। কম্পিউটারের বদৌলতে বর্তমানে সেই কৌশল আরো বেশি বিশ্বাসযোগ্য ও আকর্ষণীয় হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ওসবের কোনো কিছু সত্য নয়। বিজ্ঞাপন চিত্রের ব্যথা উপশমের প্রক্রিয়াটিও বিজ্ঞানসম্মত নয়। কারণ বাম কিংবা মালিশের মলম বা তেল খুব বেশি হলে ত্বকের খানিকটা অভ্যন্তরে হয়তো যেতে পারে, কিন্তু সেই মলমের প্রভাবে মাংসপেশি পর্যন্ত পৌঁছানো কিছুটা অসম্ভবই বটে! আর মাংসপেশি পর্যন্ত পৌঁছে সেখানে তাপ উৎপাদন করে ব্যথা উপশমের ব্যাপারটা অলৌকিকই। বাজারে ব্যথা উপশমের জন্য যেসব বাম, মালিশ পাওয়া যায়, উপাদান হিসেবে এগুলোতে থাকে ক্যাম্পফর, মেনথল, মিথাইল স্যালিসাইলেট। এগুলো ত্বক ঠাণ্ডা অথবা গরম অনুভূতির উদ্রেক করে এবং সেই সঙ্গে কিছুটা ব্যথা নিরাময় ও অবশ ভাব আনে। এর ফলে সাময়িকভাবে ব্যথার উৎস থেকে ব্যথার অনুভূতি অন্যতে ছড়াতে পারে না।

সম্ভবত এটা ব্যথার সংকেতকে সরাসরি অথবা স্নায়ুটি উত্তেজিত করে এই কাজটি করে থাকে। এ ধরনের উপাদানকে বলা যেতে পারে কাউন্টার ইরিটেন্ট অর্থাৎ শরীরে নতুন উত্তেজনার উদ্রেক করে পুরনো উত্তেজনা থেকে মনকে সরিয়ে আনা। এতে লাভ যা হওয়ার, বাম কোম্পানিরই হয়। রোগীর এতে কোনো লাভই হয় না। বিশেষ করে কোমর ব্যথা, হাঁটুর ব্যথা কিংবা ঘাড়ের ব্যথা ও গিঁটের ব্যথার সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। এগুলোর কোনো-কোনোটির খুব ভালো চিকিৎসা রয়েছে। কাজেই সঠিক রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা করা উত্তম। আর সামান্য মাংসপেশির ব্যথা এমনিতেই সেরে যায়। শরীরের নিজেরই সেই ক্ষমতা আছে। মাংসপেশি থেঁতলে গেলে সেক্ষেত্রে মালিশ করা নিষেধ আছে। অধিকাংশ মালিশেরই থাকে ঝাঁঝালো গন্ধ। এই ঝাঁঝালো গন্ধও রোগীর ব্যথা উপশমে মানসিকভাবে কাজ করে। ফলে ব্যথা উপশমের একটি মিথ্যা অনুভূতি যোগায়, যা খুবই ক্ষণস্থায়ী।

এসব বাম বা মালিশ কখনই ওষুধ হিসেবে গণ্য নয়, যে কারণে এগুলো পাওয়া যায় রাস্তাঘাটে, বাসে, ট্রেনে ক্যানভাসারের হাতে। এগুলো ওষুধ নয় বলেই এগুলোর বিজ্ঞাপন প্রচারের সুযোগ পায়। সাধারণের কোনো ওষুধের বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে রোগীকে আকর্ষণ করার প্রচেষ্টা বেআইনি বলে গণ্য। সারা পৃথিবীতেই এ নিয়ম চালু আছে। আর মানুষ সহজে রোগমুক্তি চায় বলে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মানুষের সেই কাঙ্খিত ফলাফলকেই চিত্রায়িত করে প্রলুব্ধ করা খুব সহজ। যারা বাম কিংবা মালিশ জাতীয় জিনিস চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করছেন কিংবা ব্যবহার করার উৎসাহ বোধ করছেন, তাদের উদ্দেশে শেষ কথা হচ্ছে, বাম মাংসপেশির গভীরে ঢুকে ব্যথা উপশম করে না।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, নাক কান গলা বিভাগ, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ মার্চ ২০১৭/এসএন/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়