ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

আবার চালু হচ্ছে মাগুরার একমাত্র বস্ত্রকল

মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৭ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আবার চালু হচ্ছে মাগুরার একমাত্র বস্ত্রকল

মাগুরা প্রতিনিধি : দীর্ঘ ৯ বছর বন্ধ থাকার পর আবার চালু হতে যাচ্ছে মাগুরার পুরোনো ও একমাত্র বস্ত্রকল।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন বস্ত্রকলটির উৎপাদন কার্যক্রম চলতি সপ্তাহেই আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

পাশাপাশি প্রায় ১৪০ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে কারখানাটি পুনরায় চালুর পথটি কতটা মসৃণ হবে, তা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা।

মাগুরা বস্ত্রকলের সহকারী ব্যবস্থাপক (কারিগরি) ও মিলটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, বিটিএমসি ও মাগুরার আলী ট্রেডার্সের মধ্যে মাসিক দেড় লাখ টাকা ভাড়ার ভিত্তিতে সম্পাদিত দুই বছর মেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে বস্ত্রকলটি আবার উৎপাদনে যাচ্ছে।

মাগুরা বস্ত্রকলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উৎপাদন পুনরায় চালুর লক্ষ্যে যন্ত্রপাতি মেরামতসহ রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে।

এক প্রশ্নের জবাবে নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ‘চলতি সপ্তাহে বস্ত্রকলটির উৎপাদন ফের চালুর জন্য আমরা এখানকার যন্ত্রপাতিগুলো মেরামতের কাজ শুরু করেছি।’

মিলটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তিনি জানান, প্রায় ৯ বছর ধরে বন্ধ থাকায় এখানকার অনেক যন্ত্রপাতিই মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে তারা কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতিও এনেছেন।

মিলের সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা অনুকূল বিশ্বাস জানান, ১৯৮৫ সালে উৎপাদনে যাওয়া শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত মুনাফা অর্জনে ব্যর্থ হয়ে ১৯৯৯, ২০০২, ২০০৫ ও ২০০৮ সালে মোট চারবার বন্ধ হয়েছে। ১৯৮৫ থেকে ২০১৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মাগুরা বস্ত্রকলের লোকসান দাঁড়িয়েছে ১৩৯ কোটি ৮৫ লাখ ৮৭ হাজার টাকা।

১৯৮৫ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত বস্ত্রকলটির উৎপাদন কার্যক্রম চলে সরকারি ব্যবস্থাপনায়। ওই পর্যন্ত ৬৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা লোকসানসহ কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় এক বছর বন্ধ থাকার পর বিটিএমসি কর্তৃপক্ষ ২০০০ সালে পাবনার কর্ণফুলী ট্রেডার্সের সঙ্গে দুই বছরের চুক্তিতে সার্ভিস চার্জের ভিত্তিতে পুনরায় বস্ত্রকলটি চালু করে। তবে এ সময়ে আরো ২২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা লোকসানের শিকার হয় প্রতিষ্ঠানটি।

এবার প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকে মাগুরা বস্ত্রকল। পরে কর্ণফুলী ট্রেডার্সের সঙ্গে আবারো দুই বছরের চুক্তি করে বিটিএমসি। কিন্তু চুক্তির মেয়াদ শেষের আগেই ২০০৫ সালে আরো ১৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে কারখানাটি আবারো বন্ধ হয়ে যায়।

প্রায় এক বছর বন্ধ থাকার পর ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে ১০৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা লোকসানের বোঝাসহ বস্ত্রকলটি নতুন ব্যবস্থাপনার অধীনে চতুর্থবারের মতো চালু করা হয়। এবার প্রতিষ্ঠানটি দুই বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় মাগুরার আলী ট্রেডার্সের সঙ্গে।

এ সময় প্রতি বেল সুতা উৎপাদনের মাধ্যমে কারখানাটির আয় হতো ৬ হাজার টাকা। এ আয় থেকেই মিলটির কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতাদি পরিশোধ করা হতো। তবে এ দুই বছরেও লাভের মুখ দেখেনি মাগুরা বস্ত্রকল; বরং আরো ৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা লোকসান হয়। এ অবস্থায় চুক্তি নবায়ন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এ কারণে ২০০৮ সালের আগস্টে আবারো কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়।

অনুকূল বিশ্বাস জানান, নয় বছর বন্ধ থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণ ও প্রশাসনিক ব্যয়, পাঁচজন স্থায়ীসহ ১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা, বিদ্যুৎ বিল, পৌরকর ও যন্ত্রপাতির অবচয়ের কারণে প্রতিবছর বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হয়েছে মাগুরা বস্ত্রকলকে। তার হিসাবমতে, চালু থাকা অবস্থায় লোকসান তো ছিলই; পাশাপাশি বন্ধ থাকার কারণেও কারখানাটির লোকসান হয়েছে প্রায় ২৪ কোটি ২ লাখ টাকা।




রাইজিংবিডি/মাগুরা/৭ মার্চ ২০১৭/ মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন/রুহুল/এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়