ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

রোগীরা যেভাবে রোজা রাখবেন

ডা. সজল আশফাক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:২৭, ৩ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রোগীরা যেভাবে রোজা রাখবেন

ডা. সজল আশফাক : রোজার এই মাসে একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান রোজা রাখবেন এটাই স্বাভাবিক। অসুস্থতার কারণে অনেকেই হয়তো রোজা রাখতে পারেন না ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও। আবার অনেকে আছেন যারা হাইপারটেনশন, অ্যাজমা, পেপটিক আলসার কিংবা ডায়াবেটিসের মতো রোগ নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে। এ ধরনের ব্যক্তিদের অনেকেই ইচ্ছে থাকার পর রোজা রাখতে পারছেন না সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব রোগ ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সেক্ষেত্রে খুব সহজেই রোজা রাখা সম্ভব। এই সব রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা চাইলেই রোজা রাখতে পারেন বলে জানিয়েছেন ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক। ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ রমাদান ফাস্টিং রিসার্চ’ জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধে গবেষকরা বলেছেন, বিভিন্ন রোগের জন্য ব্যবহৃত ওষুধগুলো পরিবর্তন করে নিলেই রোজা রাখার পাশাপাশি রোগ নিয়ন্ত্রণ বা নিরাময় সম্ভব। ধরা যাক, কারো শ্বাসতন্ত্রের রোগ হয়েছে। এই রোগের জন্য কোনো এন্টিবায়োটিক দেয়ার দরকার পড়লে, রোগী রোজা রাখতে চান এই কথাটি জানিয়ে দিলেই ডাক্তর রোগীকে যথার্থভাবে কার্যকর এমন ওষুধ দিয়ে দিতে পারবেন যা দিনে মাত্র দুইবার বা একবার খেতে হবে। এভাবে প্রত্যেকটি রোগের ক্ষেত্রেই ডাক্তারকে আগেভাগে রোজা রাখার ইচ্ছার বিষয়টি জানিয়ে দিলেই সে অনুযায়ী ওষুধ নির্বাচন করার সুযোগ রয়েছে।

 

বাজার এখন অনেক ধরনের এন্টিবায়োটিক রয়েছে। এখন আর সেই দিন নেই যে, একটি মাত্র ওষুধই হাতে আছে আর সেটি খেতে হবে দৈনিক ৩-৪ বার। এন্টিবায়োটিক ছাড়া পেপটিক আলসারের রোগীর জন্য প্রযোজ্য ওষুধের ক্ষেত্রেও একই কথা। এখন অনেক ওষুধ আছে যেগুলো এসিডিটি নিয়ন্ত্রণের জন্য দৈনিক একবার খেলেই চলে। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের বেলায়ও একই ব্যবস্থা অবলম্বন করা যায়। তবে কথা হচ্ছে, এক্ষেত্রে ওষুধ পরিবর্তন করার সময় অবশ্যই নিয়মিত চিকিৎসকের তত্ত্ববধানে থাকতে হবে। কারণ ওষুধ পরিবর্তনের ফলে রক্তচাপ খুব সহজে নিয়ন্ত্রণে নাও আসতে পারে। তাই উচ্চ রক্তচাপের রোগী যাঁরা নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খেয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন তাঁরা যদি রোজা রাখার জন্য নতুন সিডিউলে ওষুধ গ্রহণ করতে চান সেক্ষেত্রে সপ্তাহখানেক আগে থেকে নতুন সিডিউলের ওষুধ গ্রহণ করে ট্রয়াল দিতে হবে। ট্রয়ালে যদি দেখা যায় নতুন ওষুধে সহজেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে তাহলে রোজা রাখা সহজ হবে।

ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রেও অবলম্বন করতে হবে একই রকম সতর্কতা। যেসব ডায়াবেটিক রোগী বিশেষ খাবার এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন তাঁদের জন্য রোজা রাখা খুব সহজ ও উপকারী বলে উল্লেখ করা হয়েছে ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ রমাদান ফাস্টিং রিসার্চ’ জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধে। তবে যারা মুখে ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখছেন তারাও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোজা রাখতে পারবেন তবে ব্যায়াম করার ব্যাপারে সর্তক হতে হবে যাতে করে ব্যায়ামের ধকল বেশি হয়ে না যায়। আর ইনসুলিন গ্রহণকারী রোগীরাও রোজা রাখতে পারবেন তবে এক্ষত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে  ব্যবস্থা নিতে হবে।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, নাক কান গলা বিভাগ, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ জুন ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়