ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

শিশু কতটা পানি খাবে

ঝুমকি বসু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ৮ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিশু কতটা পানি খাবে

প্রতীকী ছবি

ঝুমকি বসু : একটি শিশু যখন জন্ম নেয় তখন তার ওজনের প্রায় ৩/৪ ভাগই থাকে পানি।

শিশুর এক বছর বয়স হলেই সেই পানির পরিমান দাঁড়ায় ওজনের ৬০%। বয়ঃসন্ধির সময় তা আরও কমে হয়ে যায় প্রায় ৫০%। শরীরে যখন মাংশপেশি এবং চর্বি জমতে শুরু করে তখন পানির ভাগ আস্তে আস্তে কমতে থাকে।

আমরা অনেককেই সর্বদা বলতে শুনি, আমাদের প্রত্যেকের প্রচুর পানি পান করা উচিত। কিন্তু শিশুদের কতটা পানি পান করা উচিত সেটা নিয়ে আমরা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগি। তাই এ বিষয়ে পরামর্শ চাওয়া হয় ঢাকা শিশু হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমানের কাছে, তিনি রাইজিংবিডিকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান।

শিশুদের কখন থেকে পানি খাওয়াবেন
শিশু জন্মের পর প্রথম ৬ মাস মায়ের বুকের দুধ ছাড়া আর কোনো কিছু খাওয়ানোর প্রয়োজন হয় না। দুধে পানির পরিমান ৬০-৭০% থাকে তাই আলাদা করে পানি খাওয়াতে হবে না।

৬ মাস পর যখন শিশুটি আস্তে আস্তে শক্ত খাবারে অভ্যস্ত হবে তখন থেকে তাকে পানি খাওয়ানো শুরু করতে হবে। প্রতিবার শক্ত খাবার খাওয়ানোর পরে ২-৪ চামচ ফোটানো পানি খাওয়াতে হবে।

এ প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার, পানি সবসময় ফুটিয়ে খাওয়ানো উচিত। শিশুরা প্রায়ই পানিবাহিত রোগ যেমন আন্ত্রিক, টাইফয়েড কিংবা হেপাটাইটিস-এ তে আক্রান্ত হয়, সেজন্য খাওয়ার পানি ফোটানো বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত।

শিশুদের কতটা পানি দরকার
পানি একেবারে নিয়ম করে খাওয়ানো যায় না। বয়স অনুযায়ী বা ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে পানির চাহিদা কমে-বাড়ে। তবে মোটামুটিভাবে বলা যায়, শিশুর ওজন ১০ কেজি হলে দিনে ১ লিটার পর্যন্ত জলীয় পদার্থের প্রয়োজন হয়।

১৫ কেজি ওজনের শিশুর দরকার দেড় লিটার জলীয় পদার্থ।

মোটামুটিভাবে কেজি প্রতি ২০ মিলিলিটার জলীয় পদার্থের দরকার হয়। এই পানির পরিমান আবার নির্ভর করে শরীর থেকে জলীয় পদার্থ বেরিয়ে যাওয়ার ওপরে। সাধারণত মলমূত্র থেকে যে পানি বেরিয়ে যায় তা আমরা পরিমাপ করতে পারি। শিশুর যখন ডায়রিয়া হয়, তখন মলের সঙ্গে অনেক পানি বেরিয়ে যায়, শরীরে পানির প্রয়োজন বেড়ে যায়, শিশুটিকে তখন বেশি করে পানি খাওয়ানোর প্রয়োজন হয়। একইরকমভাবে যদি প্রস্রাবের সঙ্গে বেশি পানি বেরিয়ে যায় (যেমন ডায়াবেটিস) সেক্ষেত্রেও পানির চাহিদা বেড়ে যায়।

মলমূত্র ছাড়াও ঘামের মাধ্যমেও শরীরের পানি বেরিয়ে যায়। গরমে যখন বেশি ঘাম হয় কিংবা দৌঁড়ানোর পরে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে গেলে তেষ্টা পেয়ে যায়, তখন শরীরে পানির চাহিদা বাড়ে।

সুতরাং শরীরের ওজন অনুযায়ী অঙ্ক কষে ন্যূনতম পানির প্রয়োজন বের করা সম্ভব। এছাড়া বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন ডায়রিয়া বা গরমকালে যখন শরীরে পানির চাহিদা বাড়ে, তখন নিয়মের বাইরে বেশি বেশি পানির প্রয়োজন হয়।

জোর করে পানি খাওয়ানো কি ঠিক 
আমাদের শরীরের মস্তিষ্ক, কিডনি, শিরা-ধমনী পারস্পরিক বোঝাপড়ায় কাজ করে। গরমে ঘামের মাধ্যমে শরীরের পানি বেরিয়ে গেলে মস্তিষ্কে সে খবর পৌঁছায়। মস্তিষ্ক বেশি করে পানি পানের নির্দেশ দেয়। কিডনির কাছেও পানি ধরে রাখার নির্দেশ পৌঁছায়। ফলে মূত্রের পরিমানও কমে। একইভাবে বর্ষাকালে বা শীতকালে শরীরে পানির চাহিদা কমে। তাই শিশুরা পানি কম পান করে। এটা সম্পূর্ণই ফিজিওলজিক্যাল ব্যাপার তাই শিশুদের জোর করে পানি খাওয়ানোর প্রয়োজন হয় না।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ জুন ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়