ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কোলন ক্যানসার: উপসর্গ, কারণ ও চিকিৎসা

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ২৪ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কোলন ক্যানসার: উপসর্গ, কারণ ও চিকিৎসা

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : বৃহদান্ত্রে (পাকস্থলীর নিম্নাংশ থেকে মলদ্বার পর্যন্ত) টিউমার বেড়ে গেলে কোলন ক্যানসার হয়। আক্রমণের দিক থেকে এটি যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম ক্যানসার। ক্যানসার সম্পর্কিত মৃত্যুর দিক দিয়েও এটি সেখানে তৃতীয় স্থান দখল করে আছে।

কোলন ক্যানসার এবং রেক্টাল ক্যানসার একত্রে হতে পারে। তখন এটাকে বলা হয় কোলরেক্টাল ক্যানসার। রেক্টাল ক্যানসার হয় রেক্টামে (বৃহদান্ত্রের শেষের দিক বা মলদ্বারের নিকট)।

কোলন ক্যানসারের কয়েকটি দিক

* বৃহদান্ত্রের প্রাচীরে পলিপ (মাংসপিণ্ড) সৃষ্টির মাধ্যমে এটির শুরু হয়।

* চূড়ান্ত পর্যায়ে না যাওয়া পর্যন্ত উপসর্গ দেখা নাও দিতে পারে। যদিও দেখা দেয় তা গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল সমস্যা (যেমন- পায়খানা ক্লিয়ার না হওয়া বা অল্প পায়খানা হওয়া, বমি হওয়া, মিউকাস ডায়রিয়া ইত্যাদি)।

* কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি ও সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়।

* উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার, কম চর্বিযুক্ত খাদ্য কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ করে।

* নিয়মিত স্ক্রিনিং করলে এ রোগের প্রাথমিক পর্যায় ধরা পড়তে পারে।

* ৫০ বছর বয়স বা তদুর্ধ্বে এ রোগের বিস্তার হচ্ছে কিনা জানতে নিয়মিত স্ক্রিনিং করা উচিত।

কোলন ক্যানসার কি?

কোলনে (মলাশয়) বা বৃহদান্ত্রে কোষের অস্বাভাবিক বা অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি হলে কোলন ক্যানসার হয়। বেশিরভাগ কোলন ক্যানসার হয় ননক্যান্সারাস বা বিনাইন টিউমার (এডিনোমেটাস পলিপ) থেকে, যা ম্যালিগন্যান্ট (অতি ক্ষতিকর) টিউমারে রূপ নেয়। ম্যালিগন্যান্ট টিউমার থেকে ক্যানসারযুক্ত কোষ রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়াতে পারে। ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি হয় এবং শরীরের সুস্থ টিস্যুকে আক্রমণ বা ধ্বংস করে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় মেটাস্টেসেস। ফলাফল মারাত্মক হয়ে চিকিৎসার বাইরে চলে যায়।

উপসর্গ

এ রোগে প্রাথমিক পর্যায়ে উপসর্গ দেখা দেয় না বললেই চলে। তবে ক্যানসার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপসর্গেরও বিকাশ হতে পারে।

* ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া
* মলত্যাগের সূচি পরিবর্তন হওয়া
* অনিয়ন্ত্রিত কিংবা অল্প পায়খানা হওয়া
* রেক্টালে রক্তপাত বা মলের সঙ্গে রক্ত বের হওয়া
* পেটে ব্যথা ও পেটে গ্যাসের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হওয়া
* ঘনঘন মলত্যাগ করা
* দুর্বলতা ও ক্লান্তি অনুভূত হওয়া
* অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস
* লোহিত রক্তকণিকার অভাব (আয়রন ডেফিশিয়েন্সি এনিমিয়া) হওয়া।

কোলন ক্যানসারের কারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

সাধারণত শারীরিক কোষ সুশৃঙ্খলভাবে বেড়ে ওঠে, বিভাজিত হয় এবং মারা যায়। কিন্তু ক্যানসার হলে কোষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পায় ও কোষের মৃত্যু ঘটে না। কোলন ক্যানসারের সঠিক কারণ এখনও অজ্ঞাত। তা স্বত্ত্বেও এই ক্যানসারের কিছু সম্ভাব্য কারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় নির্ধারণ হয়।

১. পলিপ

সচরাচর কোলন ক্যানসারের উদ্ভব হয় বৃহদান্ত্রের প্রাচীরে থাকা প্রিক্যান্সারাস পলিপ থেকে। পলিপকে প্রধানত দুভাগে বিভক্ত করা হয়। যেমন-

এডিনোমাস : এসব পলিপকে মলাশয়ের আস্তরণের উপাদানের মতোই লাগে। কিন্তু অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখলে পার্থক্য ধরা পড়ে। এসব পলিপ ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারে।

হাইপারপ্লাস্টিক : এসব পলিপ থেকে ক্যানসার খুব কমই হয়ে থাকে। সাধারণত এসব পলিপ ক্ষতিকর হয় না।

যদি প্রাথমিক পর্যায়ে এডিনোমাস ও হাইপারপ্লাস্টিক পলিপ নির্মূল করা না হয় তাহলে তারা ধীরে ধীরে বিপজ্জনক কোলন ক্যানসারে রূপ নেবে।

২. জিন

জেনেটিক সমস্যা বা ক্ষতি থাকলে অনিয়ন্ত্রিত বা অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি হতে পারে। পারিবারিক সদস্যের কাছ থেকে এ সমস্যা চলে আসে। কিছু মানুষ জেনেটিক মিউটেশন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে যা তাদের শরীরে ক্যানসারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিছু ক্ষেত্রে জেনেটিক সমস্যা কিংবা জেনেটিক মিউটেশন নিয়ে জন্মগ্রহণ করলেও ক্যানসার উপযোগী পরিবেশের অভাবে ক্যানসার হতে পারে না।

৩. বৈশিষ্ট্য, অভ্যাস ও খাদ্য

কোলন ক্যানসারের জন্য বয়স একটি বিষয়। কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত ৯১% রোগীর রোগ ধরা পড়ে ৫০ বছর বয়সে কিংবা তদুর্ধ্বে। স্থূল মানুষের ও ধূমপান বা তামাক সেবনকারীর কোলন ক্যানসার হতে পারে।

কোলন বা মলাশয় পরিপাকক্রিয়ার একটি অংশ। তাই খাদ্যের ওপর ভিত্তি করেও এ সমস্যা হতে পারে। কম আঁশযুক্ত খাদ্য, বেশি চর্বিযুক্ত ও ক্যালরিযুক্ত খাদ্য, লাল মাংস, প্রক্রিয়াজাত মাংস এবং অ্যালকোহলের আধিক্যে কোলন ক্যানসার হতে পারে।

৪. শারীরিক সমস্যা ও চিকিৎসা

কিছু কিছু শারীরিক সমস্যা ও চিকিৎসার কারণে কোলন ক্যানসার হতে পারে। যেমন-

* ডায়বেটিস

* হরমোন সমস্যার কারণে দেহের কোনো অংশের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা গ্রোথ হরমোন ডিসঅর্ডার

* অন্ত্রে বা মলাশয়ে প্রদাহ কিংবা ক্রোন’স ডিজিজ

* অন্যান্য ক্যানসারের জন্য রেডিয়েশন চিকিৎসা।

রোগ নির্ণয়

রোগ নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসক শারীরিক পরীক্ষা নেন ও রোগীর ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক মেডিক্যাল বা রোগের ইতিহাস জেনে নেন। সাধারণত কোলনস্কোপি বা বেরিয়াম এনিমা এক্স-রে করলে কোলন ক্যানসার ধরা পড়ে।

চিকিৎসা

ক্যানসারের ধরন ও পর্যায়ের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা করা হয়। এ সময় রোগীর বয়স, স্বাস্থ্যগত অবস্থা ও শরীরের অন্যান্য দিকও বিবেচনায় রাখা হয়। যেকোনো ক্যানসারের জন্য একক কোনো চিকিৎসা নেই। সার্জারি, কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশন থেরাপির মাধ্যমে কোলন ক্যানসারের চিকিৎসা করা হয়।
 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ জুলাই ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়