ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

এসব কারণেও হার্ট অ্যাটাক!

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এসব কারণেও হার্ট অ্যাটাক!

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে অধিকাংশ লোক মনে করে যে, অত্যধিক চর্বিযুক্ত খাবার এবং আলস্য জীবনযাপন এর জন্য দায়ী।

হ্যাঁ, এটা সত্য যে, খাবার এবং জীবনযাপন প্রণালী হার্ট অ্যাটাকে ভূমিকা রাখে। কিন্তু এছাড়াও আরো কিছু কারণ রয়েছে যা হার্টের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

এমন কিছু কারণে হার্টের ক্ষতি হতে পারে যা সম্ভবত আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। এখানে হার্ট অ্যাটাক বা হার্টের সমস্যা সম্পর্কিত ১৫টি বিষয়ের উল্লেখ করা হলো।

১. আপনার প্রতিবেশী

দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে ২০০১ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় পাওয়া যায়, যেসব লোকেরা নিম্ন আয়ের প্রতিবেশীদের সঙ্গে থাকেন তাদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের পরিমাণ সমৃদ্ধশালী জনগোষ্ঠীতে একই আয়, শিক্ষা এবং পেশায় কর্মরত প্রতিবেশীদের সঙ্গে থাকা লোকদের তুলনায় তিনগুণ পর্যন্ত বেশি ছিল। গবেষকরা ৯ বছর ধরে চারটি রাজ্যে ৪৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সের লোকদের হার্ট অ্যাটাক পর্যবেক্ষণ করেন।

২. অ্যান্টিবায়োটিক

২০১২ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, জনপ্রিয় অ্যান্টিবায়োটিক অ্যাজিথ্রোমাইসিন (যা সাধাররণত জেড-প্যাকস প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়) হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর উচ্চ ঝুঁকির কারণ, বিশেষ করে যাদের হৃদরোগ আছে। ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হসপিটাল হার্ট সেন্টারের কোরিগ্যান উইমেন’স হার্ট হেলথ প্রোগ্রামের এমডি এবং সহপরিচালক ম্যালিসা জে উড বলেন, ‘হার্ট অ্যাটাক সম্পর্কিত মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে এ প্রমাণটি যথেষ্ট ছিল না।’ তবুও তিনি পরামর্শ দেন, আপনার যদি হৃদরোগ থাকে তাহলে চিকিৎসককে বলুন যেন অ্যাজিথ্রোমাইসিন অ্যান্টিবায়োটিকের পরিবর্তে অন্য অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়।

৩. ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট

২০১২ সালে ২৩,০০০ লোকের ওপর গবেষণা চালিয়ে পাওয়া যায় যে, ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণকারীদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির পরিমাণ বেশি, যদিও খাবারের সঙ্গে গৃহীত ক্যালসিয়ামের কারণে এ সমস্যা দেখা যায় না। তাই ক্যালসিয়াম গ্রহণের ব্যাপারে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কিছু গবেষণায় দেখা যায় যে, ক্যালসিয়াম হার্টকে সুরক্ষা দিতে পারে।

ড. উডের পরামর্শ, ‘আমি হার্টের রোগীদেরকে তাদের খাবার তালিকায় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার রাখতে বলি। অন্যান্য ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে সপ্তাহে দুবার তৈলাক্ত মাছ খান।’

৪. ইনফেকশন

আপনার যদি ফ্লু বা শ্বাসযন্ত্রে ইনফেকশন ধরা পড়ে তাহলে বুঝবেন যে, অন্যান্য রোগের তুলনায় আপনি পাঁচগুণ বেশি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিতে রয়েছেন। এর কারণ হচ্ছে ইনফেকশন প্রদাহমূলক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, যা হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের দিকে ধাবিত করে। একটি ফ্লু ভ্যাকসিন গ্রহণে ইনফেকশন প্ররোচিত হার্টের স্ট্রেস থেকে রক্ষা পেতে পারেন।

৫. সোরিয়াসিস

ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার ডার্মাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জোয়েল এম গেলফ্যান্ড বলেন, ‘কিছু রোগীর ক্ষেত্রে সোরিয়াসিস হার্ট অ্যাটাকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় যার ঝুঁকিপূর্ণ দিকটাকে ডায়াবেটিসের সঙ্গে তুলনা করা যায়।’ সোরিয়াসিস হল ত্বকের একপ্রকার প্রদাহজনিত রোগ এবং সাধারণত এটি নির্মূলে মেডিকেল সেবা অত্যাবশ্যক। তীব্র মাত্রার সোরিয়াস রোগীদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা ধূমপান, স্থূলতা এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো ঝূঁকিপূর্ণ বিষয়গুলোকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। ড. গেলফ্যান্ড গবেষণায় দেখান যে, সোরিয়াস একটি স্বাধীন ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় এবং এটি একটি অটোইমিউন ডিসঅর্ডার বা রোগ যা দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি করে হার্ট অ্যাটাক ঘটাতে পারে।

আসলে অটোইমিউন রোগ সাধারণত হার্ট অ্যাটাকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কারণ। ড. উড বলেন, লুপাস স্কিন ডিজিজে (যেমন- সোরিয়াস ব্যাধি) আক্রান্ত লোকদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হল হার্ট অ্যাটাক।

৬. সম্পর্কের সমস্যা

আক্ষরিকভাবে আপনার গুরুত্বপূর্ণ লোকদের সঙ্গে নেতিবাচক সম্পর্ক আপনার হার্টে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের এপিডেমিওলজিস্ট দ্বারা পরিচালিত গবেষণার মতে, সম্পর্কের সমস্যা আপনার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ৩৪% পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে।

৭. নিম্ন এইচডিএল কোলেস্টেরল

ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটির এক গবেষক প্রায় ৭,০০০ লোকের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় এইচডিএল বা উপকারী কোলেস্টেরল এবং মেজর করোনারি ইভেন্টের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করেন। গবেষণায় দেখা যায় যে, প্রায়র হার্ট ডিজিজ এবং বয়সের পর নিম্ন এইচডিএল কোলেস্টেরল হচ্ছে করোনারি ইভেন্টের তৃতীয় শক্তিশালী কারণ।

স্মার্ট অ্যাট হার্টের গ্রন্থকার ড. উড বলেন, যদি অল্প বয়সিদের হার্ট অ্যাটাক হয় তাহলে আমি প্রায়সময় বলব যে, তাদের এইচডিএল বা উপকারী কোলেস্টেরল কম রয়েছে। তিনি বলেন, উপকারী কোলেস্টেরল বাড়ানোর উপায় রয়েছে। সবচেয়ে শক্তিশালী দুটি মাধ্যম হল ব্যায়াম করা এবং ওজন কমানো।

৮. কিডনি সমস্যা

নেদারল্যান্ডসের রটারডামে বয়স্কদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় পাওয়া যায়, দুর্বল কিডনির লোকদের (এমনকি কিডনি রোগ না থাকলেও) হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক বেশি।

১০,০০০ মানুষের ওপর চালিত অন্য এক গবেষণায় দেখা যায়, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগীদের যাদের কিডনি রোগ নেই তাদের তুলনায় দুই গুণ বেশি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি রয়েছে।

৯. শহুরে জীবনযাপন

এক জার্মান গবেষণা অনুযায়ী, আপনি কার, বাইক বা জনসাধারণের পরিবহনের মাধ্যমে যেখানে ভ্রমণ বা চলাচল করেন সেখানে যদি ভারী যানবাহন থাকে তাহলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা দ্বিগুণ বেড়ে যেতে পারে। এর আগের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রধান সড়কের কাছে বসবাসকারী লোকদের মধ্যে প্রায় দ্বিগুণ বেশি কার্ডিওপালমোনারিজনিত মৃত্যু হয়ে থাকে।

১০. অ্যাসপিরিন বন্ধ করা

অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে, হার্টের রোগীদের অ্যাসপিরিন থেরাপি বা অন্যান্য ননস্টেরয়েডাল প্রদাহনিরোধক ড্রাগ সেবন বন্ধ করার পর অন্তত এক সপ্তাহের জন্য হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর এমডি এবং কার্ডিওলজিস্ট ম্যাথিউ সরেনটিনো সতর্ক করে বলেন, আপনার যদি হৃদরোগ থাকে বা হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে এবং অ্যাসপিরিন গ্রহণ বন্ধ করতে চাইলে তাহলে কোনো ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলে তা ধীরে ধীরে করুন।

১১. বিষণ্নতা

ড. উড বলেন, ‘বিষণ্নতা এবং হার্ট অ্যাটাকের মধ্যে যোগসূত্রের যথেষ্ঠ তথ্য রয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বিষণ্নতামুক্ত লোকদের তুলনায় বিষণ্নতায় ভোগা লোকদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির পরিমাণ বেশি।’

২০০৯ সালে অ্যামেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজি জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় পাওয়া যায়, বিষণ্নতামুক্ত নারীদের তুলনায় বিষণ্ন নারীদের হৃদরোগের বিকাশ দ্বিগুণ বেশি ছিল।

১২. আপনার বস

২০০৫ সালের এক গবেষণায় গবেষকরা ব্রিটিশ সরকারের শ্রমিকদের পর্যবেক্ষণ করেন এবং দেখেন যে, যারা মনে করেন না যে তাদের বসেরা তাদের মতামতকে বিবেচনা করেন এবং যারা অনুভব করেন যে সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের অংশ বা গুরুত্ব নেই তাদের মধ্যে হৃদরোগের বিকাশ এসব বিষয় নিয়ন্ত্রণ করা লোকদের তুলনায় বেশি ছিল।

অন্যান্য গবেষণায় দেখা যায় যে, চাপপূর্ণ কাজে নিয়োজিত লোকদের হৃদরোগের ঝুঁকি ২৩ শতাংশ বেশি ছিল।

১৩. মাড়ির রোগ

গবেষণায় দেখা গেছে যে, ভালো দন্ত স্বাস্থ্যের অধিকারীদের তুলনায় মাড়ির রোগে আক্রান্ত লোকেরা ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেশি হৃদরোগের ঝুঁকিতে থাকে।

মাড়ির রোগ থেকে হৃদরোগ হয়ে থাকে মুখের ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে। মুখের ব্যাকটেরিয়া ব্লাড ভেসেল বা রক্তবাহিতে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। ড. উড বলেন, ‘যদি আপনার শরীরের কোনো অংশের ব্লাড ভেসেলে রোগ থাকে তাহলে তা অন্যান্য অংশের ব্লাড ভেসেলেও ছড়িয়ে পড়ে।’

১৪. ডায়াবেটিস

যদিও ডায়াবেটিস রোগীরা অ্যাম্পিউটেশন (অঙ্গচ্ছেদ) এবং ভিশন লসের (দৃষ্টিশক্তি হারানো) ভয়ে থাকেন, প্রকৃতপক্ষে সবচেয়ে বড় ঝুঁকির একটি হল হৃদরোগ।

ডায়াবেটিস নেই এমন লোকদের তুলনায় ডায়াবেটিস রোগীদের দুই থেকে চার গুণ বেশি হৃদরোগ সংক্রান্ত মৃত্যু হয়ে থাকে। সুসংবাদ হল যে, উপযুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেয়ে এবং ব্যায়ামের অনুশীলন করে ডায়াবেটিস রোগীরা হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে পারে।

১৫. প্রোস্টেট ক্যানসারের চিকিৎসা

২০০৬ সালে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষকদের একটি গবেষণা অনুযায়ী, প্রোস্টেট ক্যানসার বা মূত্রথলির ক্যানসারের হরমোন চিকিৎসা হার্ট অ্যাটাকে আকস্মিক মৃত্যুর সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। গবেষকরা বলেন যে, তাদের পর্যবেক্ষণ প্রমাণ করে না যে উভয়ের মধ্যে সরাসরি যোগসূত্র আছে, কিন্তু প্রোস্টেট ক্যানসারের চিকিৎসার সময় এ বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।

তথ্যসূত্র : হেলথ
 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়