ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শিশুর জ্বর হলে যা করবেন, যা করবেন না

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ১৯ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিশুর জ্বর হলে যা করবেন, যা করবেন না

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : শিশুর জ্বর বা তাপ কিভাবে সামলাবেন? দ্য এশিয়ান প্যারেন্ট ডটকমের প্রতিবেদনে শিশুকে জ্বর থেকে মুক্তি দিতে বিজ্ঞানী ও ডাক্তারদের দেওয়া কার্যকরী উপদেশ তুলে ধরা হয়েছে।

গ্লেনইগলস হসপিটাল সিঙ্গাপুরের এসবিসিসি বেবি অ্যান্ড চাইল্ড ক্লিনিকের ডাক্তার রত্না শ্রীদজাজা বলেন, শরীরের অভ্যন্তরীণ থার্মোস্ট্যাট স্বাভাবিক তাপমাত্রাকে ছাড়িয়ে গেলে জ্বর উদ্ভুত হয়। এই থার্মোস্ট্যাট হাইপোথ্যালামাসে অবস্থান করে। হাইপোথ্যালামাস হল মস্তিষ্কের সেই অংশ যা শরীরের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে।

শিশুর ইনফেকশন বা রোগে হাইপোথ্যালামাস শরীরের তাপমাত্রাকে বাড়িয়ে তুলে। একে শরীরের রেসপন্স বা শরীরের পাল্টা জবাব বলে। ডা. শ্রীদজাজা বলেন, গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে, তাপমাত্রা বাড়ার মানে হল জীবাণুর বিরুদ্ধে শরীরের যুদ্ধ চলছে যার ফলে ইনফেকশন সৃষ্টি হয়।

এভাবে আপনার শিশুর শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে বোঝা যাবে যে তার ইমিউন সিস্টেম ইনফেকশন বা রোগের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ পর্যায়ের লড়াই করছে।

জ্বরের সাধারণ কারণ

প্রায় সবসময় ইনফেকশনের দ্বারা জ্বর হয়ে থাকে। বিশেষভাবে বলতে হয়, ভাইরাস শিশুকে ব্যাকটেরিয়ার চেয়ে ১০ গুণেরও বেশি আক্রমণ করে।

* ভাইরাল ইনফেকশন : কোল্ড বা ঠান্ডা, ফ্লু এবং অন্যান্য কমন ভাইরাল ইনফেকশন হচ্ছে, অল্পবয়সী শিশুদের মধ্যে জ্বর হওয়ার স্বাতন্ত্র্যসূচক কারণ। প্রকৃতপক্ষে, অল্পবয়সি শিশুদের প্রতিবছর ৭ থেকে ১১টি জ্বরসহ ভাইরাল রোগ হতে পারে। প্রায়ক্ষেত্রে, জ্বর হচ্ছে প্রাথমিক উপসর্গ যা পিতামাতারা প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লক্ষ্য করে। এরপর শিশুর কাশি বা রানি নোজ (ঠান্ডা বা অ্যালার্জির কারণে নাক থেকে তরল আসা) হতে পারে।

* ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন : শিশুদের জ্বর হওয়ার দ্বিতীয় কমন কারণ হচ্ছে ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন। এ কারণে মেয়ে শিশুদের ক্ষেত্রে ব্লাডার ইনফেকশন হতে পারে। আনেক্সপ্লেনড ফিভার বা অজ্ঞাত জ্বরও কমন ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশনের উপসর্গ হতে পারে।

* নাকের সাইনাস ইনফেকশন : নাকের সাইনাস ইনফেকশন হচ্ছে, কোল্ড বা ঠান্ডাজনিত সমস্যা। এর সঙ্গে জ্বর ফিরে আসার সম্পর্ক রয়েছে (সঙ্গে সাইনাস পেইন থাকবে)।

* ভ্যাকসিনেশন : ভ্যাকসিনেশন বা টিকা প্রদানের পর অনেক শিশুর জ্বর আসে। সাধারণত প্রথম ১২ ঘণ্টার মধ্যে জ্বর উদ্ভুত হতে পারে এবং জ্বর ২/৩ ঘণ্টা থাকতে পারে। এ জ্বর সম্পূর্ণরূপে স্বাভাবিক, জ্বর নির্দেশ করে যে ভ্যাকসিন বা টিকা কাজ করছে।

* ওভারহিটিং : ওভারহিটিং বা অতিরিক্ত তাপ অথবা ওভারলোডিং বা অতিরিক্ত ভার কিংবা ওভারড্রেসিং বা অতিরিক্ত কাপড় পরার কারণে শিশুদের তাপমাত্রাজনিত সমস্যা বা জ্বর হতে পারে। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে শিশুকে শীতল জায়গায় নিতে পারেন কিংবা অতিরিক্ত জামাকাপড় খুলে ফেলতে পারেন। স্বাভাবিক তাপমাত্রা পুনরুদ্ধারে তরল সাহায্য করতে পারে।

যখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন

ডা. ব্যারোন বলেন, যদি আপনার তিনমাসের কম বয়সি শিশুর তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে থাকে, তাহলে জরুরিভিত্তিতে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন হবে। আবার খুব নিম্ন তাপমাত্রাও (-৩৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) দুশ্চিন্তার কারণ।

ডা. শ্রীদজাজা শিশুর তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে বলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে নিচে উল্লেখিত লক্ষণগুলোর যেকোনো একটি বা একাধিক লক্ষণ থাকতে পারে:

* পর্যাপ্ত তরল পান না করা

* বারবার বমি বা ডায়রিয়া হওয়া

* ডিহাইড্রেশন হওয়া (ডিহাইড্রেশনের কয়েকটি লক্ষণ হচ্ছে: পূর্বের মতো সক্রিয় না হওয়া, অশ্রু ছাড়া কান্না করা, টয়লেটে কম যাওয়া)

* প্রস্রাবের সময় ব্যথা অনুভূত হওয়া

* ৭২ ঘণ্টার অধিক সময় ধরে তাপমাত্রা না কমা

* র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি ওঠা।

ডা. শ্রীদজাজার মতে, আপনার তিনমাসোর্ধ্ব শিশুকে অতি শিগগির ডাক্তার দেখানো উচিত, যদি নিচে উল্লেখিত উপসর্গগুলো দেখা যায়:

* অতিরিক্ত কান্না করা এবং অতিমাত্রায় খিটখিটে হওয়া

* হাঁটতে অসুবিধা হওয়া

* চর্মে র‍্যাশ বা লাল ফুসকুড়ি অথবা পার্পল স্পট বা রক্তবেগুনি দাগ কিংবা কালশিটে দাগ হওয়া (যা শিশু অসুস্থ হওয়ার পূর্বে ছিল না)

* মাথাব্যথা করা

* ঠোঁট ও জিহ্বা নীল হওয়া

* শ্বাসকষ্ট হওয়া

* মুখ থেকে অত্যধিক লালা ঝরা।

শিশুর জ্বর হলে যা করবেন এবং যা করবেন না

১. আপনার শিশুর ওজন এবং বয়স অনুসারে প্যারাসিটামল বা ইবুপ্রোফেন দেওয়া উচিত। সঠিক ডোজ দেওয়ার জন্য সিরিঞ্জ সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা। ওষুধের পরিমাণ নির্ধারণ করতে ঘরের চা চামচ ব্যবহার পরিহার করুন, কারণ এতে শিশুকে ভুল ডোজ দেওয়ার ঝুঁকি থাকে।

২. ট্রপিক্যাল ফিভারের ভাইরাস দ্বারা জ্বর হয়নি নিশ্চিত না হয়ে ইবুপ্রোফেন দেবেন না। কারণ এ ভাইরাস প্লেটলেটকে প্রভাবিত করে যা রক্তজমাটবদ্ধতার জন্য দায়ী। এ ভাইরাস অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের সম্ভাবনাকে বৃদ্ধি করে। ইবুপ্রোফেন গ্রহণেও একই প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। যার ফলে ট্রপিক্যাল ফিভারের ভাইরাস এবং ইবুপ্রোফেনের সমন্বয় অবস্থাকে আরো বেশি সমস্যাপূর্ণ করে তুলতে পারে।

৩. ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যাসপিরিন দেবেন না, কারণ এটির সঙ্গে মারাত্মক রেই সিন্ড্রোম জড়িত থাকে।

৪. ছয় মাসের কম বয়সি শিশুকে বুকের দুধ পান করানো আবশ্যক। মায়ের বুকের দুধে শক্তিশালী অ্যান্টিবডি থাকে যা ইনফেকশনের বিরুদ্ধে সংগ্রামকে অধিক কার্যকরী করে।

৫. দুই মাসের কম বয়সি শিশুকে প্যানাডোল ও ইবুপ্রোফেন দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যদি ডাক্তার অনুমতি দেন, তবে দিতে পারেন।

৬. আপনার শিশুর তাপ কমাতে ওয়ার্ম কম্প্রেস ব্যবহার করতে পারেন। এটিকে বগল, কপাল এবং কটিদেশে রাখুন।

৭. শিশুকে ঠান্ডা পানিতে নিমজ্জিত করবেন না। এর পরিবর্তে স্নানপাত্রে কিছু ঠান্ডা পানি নিন এবং তাতে একটি ন্যাকড়া ভিজিয়ে শিশুর শরীর মুছে নিন।

৮. তাপমাত্রা কমাতে শিশুর শরীরকে অ্যালকোহল দিয়ে ডলবেন না।

৯. ওষুধ নিয়ে তাড়াহুড়ো করবেন না। সতর্কতার সঙ্গে নির্দেশিকা পড়ুন, ডোজের পরিমাণ ঠিক রাখুন এবং ডোজসমূহ প্রদানে প্রয়োজনীয় বিরতি নিন।

১০. জ্বরের কারণে আপনার শিশু খেতে না চাইলে সায় দেবেন না। সে যা পছন্দ করে তা খেতে দিন, কারণ খাবার খেলে ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি অর্জিত হয়।

১১. শিশুকে গরম কম্বলে মোড়াবেন না। বেশি কাপড় ও কম্বল শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

১২. শিশুকে অধিক হারে বিশ্রামে রাখা প্রয়োজন। অত্যধিক সক্রিয়তা জ্বর বৃদ্ধি করে।

১৩. জ্বর থাকাকালীন সময়ে শিশুকে স্কুলে পাঠানোর প্রয়োজন নেই।

তথ্যসূত্র : লিফটার
 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ অক্টোবর ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়