বাওয়েল মুভমেন্ট আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে যা বলে
প্রতীকী ছবি
এস এম গল্প ইকবাল : টেক্সাস এ অ্যান্ড এম কলেজ অব মেডিসিনের ক্লিনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর এবং ফ্যামিলি মেডিসিন ডা. গ্যাব্রিয়েল নিলের মতে, ‘বাথরুমে আপনার প্রাইভেট টাইম আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে ভালো ইঙ্গিত দিতে পারে।
‘কিভাবে জানবেন যে আপনার বাওয়েল মুভমেন্ট বা মলত্যাগ স্বাভাবিক আছে?’ বিশেষজ্ঞরা বাওয়েল মুভমেন্টের স্বাভাবিকতা এবং অস্বাভাবিকতা নিয়ে কথা বলেছেন। এ নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।
স্বাভাবিক বাওয়েল মুভমেন্টের ক্ষেত্রে, মলত্যাগে বেশি জোর দিতে হবে না। অনুরূপভাবে, বাওয়েল মুভমেন্ট আপনাকে ব্যথা দেবে না। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট এবং “হোয়াট’স ইউর পু টেলিং ইউ?” এর লেখক টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, আদর্শগতভাবে, আপনার প্রায় জিরো এফোর্ট বা কোনো প্রচেষ্টা ব্যতিরেকে বর্জ্য বা মলত্যাগ করা উচিত এবং পুরোপুরিভাবে বর্জ্য খালি হয়েছে এমন অনুভূতি হবে।
মলে বাদামী বা সবুজের ছায়া থাকা ভালো। ডা. নিল বলেন, ‘সাধারণত আপনি যেসব খাবার খান তা পরিপাক থেকে বর্জ্য বা মল হওয়া পর্যন্ত তিনদিন সময় নেয়।’ মলে যদি সবুজের ছায়া থাকে তাহলে তা হজম হতে অল্প সময় নিয়েছে এমন হতে পারে, কিন্তু সাধারণত এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। যদি মল কালো বা আলকাতরার মতো হয়, তাহলে তাতে রক্তের উপস্থিতি থাকতে পারে। ডা. শেঠ টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, ‘মল যত বেশি কালো হবে, আপনার জিআই ট্র্যাক্ট বা গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট বা পরিপাকতন্ত্র থেকে তত বেশি রক্ত আসার সম্ভাবনা।’ তিনি ব্যাখ্যা দেন যে, আলসার বা পাকস্থলী সমস্যার কারণে নিঃসৃত হওয়া রক্ত ডাইজেস্টিভ সিস্টেম অতিক্রম করার সময় কালো হবে।
যাদের বাওয়েল মুভমেন্ট স্বাভাবিক আছে, তাদের যদি কোনো সময় সপ্তাহে তিনবার বা তার চেয়ে কম বাওয়েল মুভমেন্ট হয়- তাহলে তা সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্যের ইঙ্গিত দেয়। অন্যদিকে অত্যধিক বাওয়েল মুভমেন্টের ক্ষেত্রে, একটি মানুষ কেন প্রতিদিন অধিক বার টয়লেটে যায় তার উত্তর দেওয়া কঠিনতর বটে। কিছু লোক জেনেটিক্স কারণে, আবার কিছু লোক লাইফস্টাইলের কারণে অত্যধিক মলত্যাগকারীতে পরিণত হয়। তাদের দিনে তিনবার বা তার অধিক বার টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। আপনি যদি বাওয়েল মুভমেন্ট সমস্যায় ভোগার পর দীর্ঘসময় আপনার বাওয়েল মুভমেন্ট স্বাভাবিক থাকলে ঠিক আছে। ডা. নিল বলেন, যদি আপনার ডাইজেস্টিভ ক্লক হঠাৎ করে একসপ্তাহে তিনবার বা একদিনে তিনবার বাওয়েল মুভমেন্টের কথা বলে, তাহলে তা শরীরের অন্তর্নিহিত কোনো সমস্যার লক্ষণ হতে পারে এবং একে অবহেলা উচিত নয়। অল্প বাওয়েল মুভমেন্ট পুনরাবৃত্তি বা সামান্য কোষ্ঠকাঠিন্য সাধারণত সমস্যার ইঙ্গিত করে না। এ প্রসঙ্গে ডা. নিল বলেন, ‘সম্ভবত আপনি এমন কিছু খেয়েছেন যা আপনার পাকস্থলী সহ্য করেনি অথবা আপনি ডিহাইড্রেটেড হয়েছেন। এসব এবং অন্যান্য রুটিন ফ্যাক্টর মলের রঙ, আকৃতি, পুনরাবৃত্তি এবং ঘনত্ব পরিবর্তন করতে পারে।’
আপনার বাওয়েল মুভমেন্টের দুর্গন্ধ কি কক্ষের সদস্যকে নাক ঢাকতে বাধ্য করে? যদি তাই হয়, এটি হতে পারে আপনি যা খাচ্ছেন তার কারণে, অথবা তা কোনো মেডিক্যাল সমস্যার উপসর্গ হতে পারে। ডা. নিল ব্যাখ্যা করেন, ‘যেসব খাবার ঠিকভাবে হজম হয় না তা কোলন বা মলাশয়ে পৌঁছে এবং সেখানে গাঁজন প্রক্রিয়া শুরু করে শর্করাকে গ্যাসে পরিণত করে।’ এর ফলে তীব্র দুর্গন্ধযুক্ত মল হতে পারে। সুস্থ পাচকতন্ত্র খাদ্যকে ক্ষুদ্রান্তে ভেঙে ফেলে এবং যথাসম্ভব কোলনে পৌঁছে গাঁজন প্রক্রিয়া সৃষ্টির জন্য খাদ্যকে অবশিষ্ট রাখে না। আপনার মল স্বাভাবিক দুর্গন্ধের মাত্রাকে অতিক্রম করলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন। আপনার ফুড ইন্টলারেন্স বা ফুড সেনসিটিভিটি বা খাদ্য সংবেদনশীলতা থাকতে পারে যা চিহ্নিত করা প্রয়োজন।
ন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর সেলিয়াক অ্যাওয়ারনেসের মতে, ‘সেলিয়াক রোগ আমেরিকার জনসংখ্যার ১ শতাংশকে আক্রমণ করে এবং এ রোগে আক্রান্ত আমেরিকানদের ৮৩ শতাংশ জানে না যে কেন তাদের এটি হয়েছে।’ প্রিভেনশন ডটকমের মতে, ‘আপনার মলে লক্ষণ হতে পারে এ রোগের বড় লক্ষণগুলোর একটি অথবা হতে পারে এটিই একমাত্র লক্ষণ।’ সেলিয়াক রোগীদের শরীর গ্লুটেন নামক প্রোটিন সহ্য করতে পারে না যা গম, রাই ও বার্লিতে পাওয়া যায়। ভক্ষণকৃত গ্লুটেন ক্ষুদ্রান্তের আঙুলসদৃশ ভিলাইকে ধ্বংস করে এবং শরীর ভক্ষণকৃত খাদ্য থেকে পুষ্টি শোষণে ব্যর্থ হয়। এর ফলে মল শিথিল হতে পারে এবং দিনে কয়েকবার বাথরুমে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। আপনার ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন, যিনি প্রয়োজনে সেলিয়াক রোগ আছে কিনা জানতে স্ক্রিনিং করবেন। গ্লুটেনমুক্ত খাবার খান (গ্লুটেনমুক্ত খাবার শোষণে সাহায্য করতে পারে), মল ঘন করুন এবং অন্যান্য সম্পর্কিত উপসর্গ (যেমন- ক্লান্তি, ব্যথা, পেট ফোলা, বিষণ্নতা এবং র্যাশ) চিহ্নিত করুন।
প্রিভেনশন ডটকমের মতে, যখন মল টয়লেটের তলদেশে ডুবে না থেকে টয়লেটে ভেসে থাকে, তখন এটি বোঝা যেতে পারে যে আপনার ডাইজেস্টিভ ট্র্যাক্ট বা পরিপাকতন্ত্রে অত্যধিক গ্যাস রয়েছে। ডা. শেঠ বলেন, ‘যদি আপনি প্রচুর পরিমাণে শিম, অঙ্কুরিত বীজ, বাঁধাকপি, অথবা খুব বেশি খাবার খেয়ে থাকেন- তাহলে গ্যাসের কারণে মল ভাসা সম্পূর্ণরূপে স্বাভাবিক এবং এটি উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো বিষয় নয়।’ কিন্তু যদি আপনার ফ্লোটার বা ভাসন্ত মল খুব কমন ঘটনা হয়ে থাকে এবং যদি মলে তেলের আস্তরণ দেখেন, তাহলে তার দ্বারা বোঝা যেতে পারে যে কোনো কিছু আপনার শরীরকে খাবার থেকে চর্বি শোষণে বাঁধা দিচ্ছে। এ ঘটনার ক্ষেত্রে, আপনার অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ ও ইনফেকশন আপনাকে যথেষ্ট পরিমাণে ডাইজেস্টিভ এনজাইম বা পাচক উৎসেচক উৎপাদনে অসমর্থ করে তুলে। ফুড অ্যালার্জি অথবা ইনফেকশন আপনার অন্ত্রের আস্তরণকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে যা শোষণ ক্ষমতাকেও বিনষ্ট করতে পারে। মলে চর্বি থাকলে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন এবং প্রয়োজনে স্টুল স্যাম্পল টেস্ট বা মল পরীক্ষা করান। ডা. শেঠ বলেন, সমস্যার মূল বা ভিত্তি জানতে অতিরিক্ত ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা প্রয়োজন হতে পারে।
তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ নভেম্বর ২০১৭/ফিরোজ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন