ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

‘জোকার’ ওদের নাম

আমিনুর রহমান হৃদয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩৩, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘জোকার’ ওদের নাম

আমিনুর রহমান হৃদয়: শুধুমাত্র শারীরিক কারণে সমাজের অনেক মানুষের কাছে তারা হাসির পাত্র। কেউ তাদের যোগ্য মূল্যায়ন করে না। কাজ চাইতে গেলে জোটে না। অথচ তাদেরও রয়েছে পেটে ক্ষুধা, আছে মানবিকতা। মৌলিক অধিকার তাদেরও প্রাপ্য। তারপরও এ সমাজে তারা জন্ম থেকেই ব্রাত্য। এত দুঃখ নিয়ে বেড়ে উঠেছেন যারা তারাই মানুষকে আনন্দ দেয়ার পেশা বেছে নিয়েছেন।

বলছিলাম ঊনমানুষদের কথা। উচ্চতায় তাদের অনেকেই তিন ফুটের চেয়ে কম। সম্প্রতি ঠাকুরগাঁয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ ওরস মেলায় দ্য গ্রেট রওশন সার্কাসে কথা হয় তাদের সঙ্গে। তারা ঊনমানুষ। সার্কাসের শিল্পীরা যখন বিভিন্ন শারীরিক কসরত দেখাচ্ছিলেন তখন তারা ঘুরে ঘুরে নানান অঙ্গভঙ্গি ও মজার কথা বলে দর্শক হাসাচ্ছিলেন। অথচ ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তাদের জীবন ভরে আছে নিরানন্দে।  তাদের সেই দুঃখের অন্যতম একটি কারণ মানুষ তাদের দেখে মজা পায় কিন্তু সম্মান করে না- এমনটিই বলছিলেন আবুল কাশেম। ৩৮ বছর বয়সি কাশেমের বাড়ি বগুড়ার মহাস্থানগড়। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন মজার অভিনয় ও কৌতুক করে মানুষকে হাসাই তখন তারা হাততালি দেয়। কিন্তু রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে কেউ কথা বলে না। উল্টো হাসাহাসি করে।’

 


শৈশব থেকেই সার্কাসে ‘জোকার’ হিসেবে কাজ করছেন জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘সার্কাসে জোকারের কাজ ছেড়ে অন্য পেশা নিতে চেয়েছি। কিন্তু কেউ কাজ দেয়নি। পরে বাধ্য হয়ে এ পেশায় থেকে গেছি। এখন এখান থেকেই যা আয় করছি, তাই দিয়ে সংসার চালাচ্ছি।’

ঘরে দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে কাশেমের। তবে তারা বামন নয়, উচ্চতায় স্বাভাবিক। এ জন্য তার খুশির শেষ নেই। ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন আমার জীবনে আর কোনো কষ্ট নাই। ভালো আছি। তবে পরিবার থেকে দূরে থাকতে হয় সার্কাসে কাজ করার জন্য। তাদের জন্য মন কাঁদে। কিন্তু যেতে পারি না।’

 


বাগেরহাটের রামপাল থানায় বাড়ি ৩৭ বছর বয়সি খালিদ হাসানের। তিনি জানালেন, শৈশব থেকে মাছের ঘেরে কাজ করলেও গত ৫ বছর সার্কাসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তার এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা তো আল্লাহর সৃষ্টি, তারপরও সমাজের অনেক মানুষ আমাদের দেখে হাসাহাসি করে। তাই মানুষ হাসানোকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি। তাদের হাসাতে ভালোই লাগে। এখন কোনো কষ্ট নাই।’

২৬ বছর ধরে সার্কাসে জোকার হিসেবে কাজ করছেন আব্দুল মজিদ। তার ভাষায়, ‘খাটো মানুষকে কেউ কাজে নিতে চায় না। সার্কাসে কাজ করে যে টাকা পাই তেই দিয়ে সংসার কোনোমতে চলে। তবে বর্তমান সময়ে বছরে মাত্র ৩-৪ মাস সার্কাস চলে। সার্কাস বন্ধ থাকলে আমার মতো খাটো মানুষদের খুব কষ্ট হয়।’
 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ ডিসেম্বর ২০১৭/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়