ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

নীরব ঘাতক মেটাবলিক সিনড্রোম সম্পর্কে ৬ তথ্য

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:০১, ২৭ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
 নীরব ঘাতক মেটাবলিক সিনড্রোম সম্পর্কে ৬ তথ্য

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথের মতে, বিশাল ভুঁড়ি বা মেদবহুল পেট, ট্রাইগ্লিসেরাইডের উচ্চমাত্রা (রক্তে একপ্রকার চর্বি), এইচডিএল বা উপকারী কোলেস্টেরের নিম্নমাত্রা, উচ্চ রক্তচাপ এবং হাই ফাস্টিং ব্লাড সুগার (একপ্রকার প্রিডায়াবেটিস)- এই পাঁচ রিস্ক ফ্যাক্টরের মধ্যে কমপক্ষে তিনটি রিস্ক ফ্যাক্টর বা ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় বিদ্যমান থাকাকে সাধারণত মেটাবলিক সিনড্রোম বলে।

এসবের প্রত্যেকটি হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে এবং এদের সমন্বয় আরো মারাত্মক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানসের বোর্ড অব ডিরেক্টরসের সদস্য এবং ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান মট ব্লেয়ার বলেন, ‘আপনার ভাস্কুলার সিস্টেমের ওপর এসব ফ্যাক্টরের প্রত্যেকটির নিজস্ব প্রতিকূল প্রভাব রয়েছে। এদের সমন্বয় আপনার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে, তাই এদের প্রতি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।’

* মেটাবলিক সিনড্রোম বৃদ্ধি পাচ্ছে

ফ্লোরিডা আটলান্টিক ইউনিভার্সিটির গবেষকরা সতর্ক করেন, ‘মেটাবলিক সিনড্রোমের প্রাদুর্ভাব খুব বেশি করে বৃদ্ধি পেয়েছে, এটি একটি নতুন নীরব ঘাতক যাকে ১৯৭০ সালের হাইপারটেনশনের সঙ্গে তুলনা করা যায়।’ গবেষকরা রিপোর্ট করেন, ‘তিনজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন এবং ৪০ বা তদোর্ধ্ব প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে আনুমানিক ৪০ শতাংশ লোক মেটাবলিক সিনড্রোম দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে।’ ডা. ব্লেয়ার জানান, তিনি ১০ বা ১৫ বছর আগের তুলনায় বর্তমানে মেটাবলিক সিনড্রোমে আক্রান্ত রোগী আরো বেশি দেখছেন।

* মেটাবলিক সিনড্রোম প্রধানত ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত

কেন মেটাবলিক সিনড্রোমের প্রাদুর্ভাব এত বেশি হচ্ছে? বোস্টন মেডিক্যাল সেন্টারের সেন্টার ফর নিউট্রিশন অ্যান্ড ওয়েট ম্যানেজমেন্টের পরিচালক এবং এন্ডোক্রাইন সোসাইটির ২০১৫ ওবেসিটি ট্রিটমেন্ট গাইডলাইন্সের সভাপতি ক্যারোলিন অ্যাপোভিয়ান বলেন, ‘নিম্নমানের ডায়েট এবং এক্সারসাইজের অভাব যুক্তরাষ্ট্রে বড় সমস্যা সৃষ্টি করছে। আমরা স্থূলকায় লোকদের মধ্যে খুব তাড়াতাড়ি টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ হতে বেশি বেশি করে দেখছি।’

* মেটাবলিক সিনড্রোম উপশমযোগ্য

কোনো একটি ওষুধ বিশেষভাবে মেটাবলিক সিনড্রোমের উপশম নাও করতে পারে, কিন্তু এটি সাময়িকভাবে থামানো এবং এমনকি সম্পূর্ণভাবে উপশম করার জন্য অনেক উপায় রয়েছে। যদি আপনার মধ্যে এটি ধরা পড়ে, প্রথম পদক্ষেপ হবে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনধারা মেনে চলা। ডা. ব্লেয়ার বলেন, ‘আমি আমার রোগীদের এ ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য শারীরিক কার্যক্রম বাড়াতে ও ভালো খাবার নির্বাচনে প্ররোচিত করি।’ তিনি যোগ করেন, ‘প্রথমে ডাক্তার দিয়ে পরীক্ষার করানোর পর দৈনিক ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে পাঁচবার শারীরিক কার্যক্রমের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করুন।’ স্বাস্থ্যসম্মত আহারের জন্য শর্করা এবং পাউরুটি, পাস্তা ও চালের মতো পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট সীমিত করুন এবং টাটকা, ধাতুপাত্রে সংরক্ষিত ও হিমায়িত খাবার খান। ডা. ব্লেয়ার বলেন, ‘লোকে জীবনধারায় অনেক পরিবর্তন আনতে পারে যা তাদের স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ুর জন্য অসাধারণ ভূমিকা রাখবে এবং এসব মেনে চলা কঠিন নয়।’

* মেটাবলিক সিনড্রোম প্রেরণাদায়ক

ডা. ব্লেয়ার বলেন, ‘আপনার মেটাবলিক সিনড্রোম আছে এটা জানাটা হতে পারে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনধারা মেনে চলার জন্য চমৎকার প্রেরণা। রোগীরা সাধারণত অধিক মারাত্মক সমস্যার বিকাশ হওয়া প্রতিরোধ করতে চায়। এটি আপনার নিজের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সাহায্য করে। এসব রিস্ক ফ্যাক্টরের প্রকাশ আপনাকে এসব সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে, সুস্থ হতে, ভালো অনুভব করতে এবং দীর্ঘজীবন লাভ করতে কিছু দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নির্ধারণে প্রেরণা দিতে পারে।’

* মেটাবলিক সিনড্রোম প্রতিরোধযোগ্য

একটি সুসংবাদ হচ্ছে, অধিকাংশ লোকের প্রথম থেকেই ওজন বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে মেটাবলিক সিনড্রোম প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আছে। ডা. অ্যাপোভিয়ান বলেন, ‘আমি আমার রোগীদের সঙ্গে সাধারণত জীবনধারার চারটি স্তম্ভ সম্পর্কে কথা বলি।’ তিনি স্বাস্থ্যকর ডায়েট আহার এবং দৈনিক ৩০ মিনিট এক্সারসাইজ ছাড়াও প্রতিরাতে আট ঘণ্টা ঘুম ও স্ট্রেস কমাতে ইয়োগা অথবা মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশনের মতো উপায় অবলম্বনের জন্য পরামর্শ দেন।

* মেটাবলিক সিনড্রোম হলে যে অভ্যাসটি ছাড়বেন

অনুমান করুন তো, কোন অভ্যাসটি মেটাবলিক সিনড্রোমের অল্প আগুনে কেরোসিন ঢালার মতো ফল দেয়? হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন, ধূমপান। ডা. ব্লেয়ার বলেন, ‘যে একটি অভ্যাস আপনি অবশ্যই ত্যাগ করবেন, বিশেষ করে যদি আপনার মেটাবলিক সিনড্রোমের সঙ্গে জড়িত রিস্ক ফ্যাক্টর থাকে, তা হচ্ছে ধূমপান- এটি নিঃসন্দেহে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।’ তিনি যোগ করেন, ‘আমি মর্মাহত হই যখন দেখি কেউ ধূমপান করছে, বিশেষ করে তরুণ। কারণ একজন চিকিৎসক হিসেবে আমি তার কথা চিন্তা করি, ‘হায়রে! আপনি যদি জানতেন এর দ্বারা আপনার ভবিষ্যত কি হবে; প্রকৃতপক্ষে এটি খুব ক্ষতিকর।’

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ জানুয়ারি ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়