ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ফুসফুস ক্যানসার সম্পর্কে ১১ তথ্য

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৫২, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফুসফুস ক্যানসার সম্পর্কে ১১ তথ্য

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : আপনি সম্ভবত জানেন যে, ধূমপানের কারণে ফুসফুসে ক্যানসার হয়। হ্যাঁ আসলেই তাই। ফুসফুস ক্যানসারের প্রধান কারণ হচ্ছে, ধূমপান করা। ধূমপানকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে রেখে ফুসফুস ক্যানসারের গল্প এগিয়ে যায়।

এ প্রতিবেদনে ফুসফুস ক্যানসার সম্পর্কে ১১টি তথ্য উপস্থাপন করা হলো।

* ক্যানসারে মৃত্যুর মধ্যে ফুসফুস ক্যানসারে মৃত্যু সবচেয়ে বেশি

ধূমপান ছেড়ে দিলে ফুসফুস ক্যানসারের সম্ভাবনা কমে যায়। ধূমপান যে ফুসফুসের ক্ষতি করে সে সম্পর্কে অবগত আছেন কি? ক্যানসার বিশেষজ্ঞ এবং ডানা-ফারবার ক্যানসার ইনস্টিটিউটের ফুসফুস ক্যানসার গবেষক জ্যাকব স্যান্ডস বলেন, ‘ধূমপান ফুসফুসের সঙ্গে বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থের পরিচয় ঘটায় যা ফুসফুস কোষের ডিএনএ-কে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এসব টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ মিউটেশনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে, যা ফুসফুস কোষের ডিএনএ-তে ডেভেলপ হয়।’ যখন কিছু মিউটেশন রেপ্লিকেট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তাকে ক্যানসার বলে।

* আপনার ঝুঁকি ডোজের ওপর নির্ভর করে

আপনি যত বেশি ধূমপান করবেন (বা অতীতে করেছেন), আপনার ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি তত বেশি। ডা. স্যান্ডস বলেন, ‘ফুসফুস ক্যানসার ধরা পড়ার ঝুঁকি কমানোর জন্য ধূমপান বর্জন করা সর্বোত্তম উপায় হলেও এর মানে এই নয় যে ঝুঁকি চলে গেছে। ফুসফুস ক্যানসার রোগীদের ৫০ শতাংশ হচ্ছে প্রাক্তন ধূমপায়ী।’ তাই বলে হতাশ হয়ে আবারো ধূমপান শুরু করবেন না। যারা যত আগে ধূমপান ছাড়ে তাদের ঝুঁকি তত হ্রাস পায়। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুল অনুসারে, প্রাক্তন ধূমপায়ীর ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি ১০ বছরের মধ্যে ৫০ শতাংশ কমে যায় এবং ১৫ বছর পর ঝুঁকি অধূমপায়ীদের পর্যায়ে চলে যায়, কিন্তু ফুসফুস ক্যানসার যে হবে না, এমনটা জোর দিয়ে বলা যায় না।

* সোশ্যাল স্মোকাররাও ঝুঁকিতে আছে

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত একটি মিথ হচ্ছে, বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে অল্প ধূমপানের মানে স্মোকার হওয়া নয়। ডা. স্যান্ডস বলেন, ‘লোকজনের জন্য কমন একটি বিষয় হচ্ছে, তারা বিশ্বাস করে যে সোশ্যাল স্মোকিং তাদের ক্ষতি করবে না। প্রকৃতপক্ষে, একজনের স্মোক করা একটি সিগারেট পরিমাপযোগ্য পরিবর্তন সৃষ্টি করে যা লক্ষ্য করা যায়। ১০০টি সিগারেট পোড়ানোর পর ফুসফুস ক্যানসার বিকাশের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।’ অনেকে অল্প ধূমপান করে। কিন্তু গবেষণার একটি রিভিউ থেকে জানা যায়, হালকা ও অনিয়মিত ধূমপান উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করে।

* সেকেন্ডহ্যান্ড ও থার্ডহ্যান্ড স্মোকও ক্যানসারের কারণ হতে পারে

মেমোরিয়াল স্লোয়ান কেটারিং ক্যানসার সেন্টারের ক্লিনিক্যাল অ্যাফেয়ার্স অব দ্য থোরাসিক সার্জারি সার্ভিসের ডেপুটি চিফ বার্নার্ড পার্ক বলেন, ‘ফুসফুস ক্যানসারে ভোগা ২৫ শতাংশ রোগী কখনো ধূমপান করেনি।’ কিন্তু সেকেন্ডহ্যান্ড স্মোক এবং থার্ডহ্যান্ড স্মোকও (কাপড় ও পৃষ্ঠের ওপর পড়ে থাকা নিকোটিনের অবশেষ) ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে। ডা. পার্ক বলেন, ‘প্রমাণ আছে যে, সেকেন্ডহ্যান্ড স্মোক এক্সপোজার অধূমপায়ীদের মধ্যে ফুসফুস ক্যানসার বিকাশের বর্ধিত ঝুঁকির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, বিশেষ করে তাদের মধ্যে যারা সক্রিয় ধূমপায়ীদের সঙ্গে বসবাস করেন।’ ঝুঁকির মাত্রা ডোজের ওপর নির্ভরশীল এবং ধূমপানমুক্ত পরিবেশে বসবাসরত অধূমপায়ীদের চেয়ে ধূমপানযুক্ত পরিবেশে বসবাসরত অধূমপায়ীদের ঝুঁকি ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। যদি আপনি কোনো ধূমপায়ীর সঙ্গে বসবাস করেন, তাদেরকে বাইরে গিয়ে ধূমপান করতে বলুন, তারপর হাত ধুতে বলুন এবং ঘনঘন কাপড় ধুতে বলুন।

* সকল প্রকার ধূমপানে ফুসফুস ক্যানসার হতে পারে

আপনার ঝুঁকি কমানোর এক নম্বর উপায় হচ্ছে, সব ধরনের ধূমপান ছেড়ে দেওয়া। ডা. পার্ক বলেন, ‘অন্যান্য টোবাকো এক্সপোজার যেমন- সিগার, পাইপ অথবা মারিজুয়ানাও ফুসফুস ক্যানসারের কারণ হতে পারে।’ আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি অনুসারে, ‘কোনো নিরাপদ টোবাকো প্রোডাক্ট নেই যেমন- হ্যান্ড-রোলড, হার্বাল, মেনথল, ক্লোভ এবং সেসব যা ন্যাচারাল হিসেবে বাজারে ছাড়া হয়।’ হুঁকার সঙ্গেও ক্যানসারের সম্পর্ক আছে। এমনকি ই-সিগারেটও ত্যাগ করুন, কারণ এ অভ্যাসেও ক্যানসারসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

*র‌্যাডন সম্পর্কে সতর্ক থাকুন

র‌্যাডন টেস্টিং সম্পর্কে প্রত্যেক বাড়ির মালিকের জানা উচিত। ডা. স্যান্ডস বলেন, ‘র‌্যাডন হচ্ছে বর্ণহীন ও গন্ধহীন গ্যাস যা মাটিতে বিদ্যমান থাকে এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রে কমন, যা ফুসফুস ক্যানসারের দ্বিতীয় প্রধান কারণ।’ র‌্যাডন বাড়ির নিচের ফ্লোর বা বেসমেন্টের মতো কোনো বদ্ধ জায়গায় আটকা পড়লে র‌্যাডনের মাত্রা বেড়ে অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে চলে যেতে পারে। তাই র‌্যাডনের মাত্রা টেস্ট করা উচিত।

* ফুসফুস ক্যানসারের অন্যান্য কারণ

ডা. পার্ক বলেন, ‘রেডিয়েশন এক্সপোজার (পরিবেশগত বা পেশাগত), অ্যাসবেস্টস, ফুসফুসের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহমূলক রোগ যেমন- ব্রংকিয়েকটেসিস বা ক্রনিক ব্রংকাইটিস, এনভায়রনমেন্টাল এক্সপোজার যেমন- দূষণ ও ধূলিকণাও ক্যানসারের দিকে চালিত করতে পারে। এছাড়া ফুসফুস ক্যানসারের জন্য জেনেটিক এলিমেন্টও দায়ী হতে পারে, কিন্তু যদি আপনি ধূমপান না করেন, তাহলে এটি সম্ভবত ভূমিকা রাখতে পারবে না।’

* ফুসফুস ক্যানসারের প্রাথমিক উপসর্গ বিরল

প্রায়ক্ষেত্রে ফুসফুস ক্যানসারের উপসর্গ অগ্রসর বা চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রকাশ পায়। ডা. স্যান্ডস বলেন, ‘এ কারণে ফুসফুস ক্যানসার নির্ণীত হওয়া বেশিরভাগ লোকের মেটাস্ট্যাটিক ডিজিজ (যে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়েছে) থাকে। ৭০ শতাংশ ফুসফুস ক্যানসার ধরা পড়ে ৪র্থ পর্যায়ে এবং তা নিরাময়যোগ্য নয়। এছাড়া ধূমপায়ীদের মধ্যে ফুসফুস ক্যানসারের উপসর্গ খুব কমন।’ কাশির সঙ্গে রক্ত, পুনরাবৃত্তিমূলক রেসপিরেটরি ইনফেকশন, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, কাঁধ বা পিঠ বা বুকে ব্যথা, শ্বাস নিতে সমস্যা, কর্কশতা, বুকে হুইসেলের মতো শব্দ এবং ক্লান্তি- এসব উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।

* কিছু লোকের স্ক্রিনিং করানো উচিত

প্রিভেন্টেটিভ স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ক্যানসারের অনেক মারাত্মক ঘটনা এড়ানো যেতে পারে। ডা. পার্ক বলেন, ‘সেসব লোকদের লো-ডোজ সিটি চেস্ট স্ক্যানের মাধ্যমে প্রতিবছর স্ক্রিনিং করানো উচিত, যাদের ফুসফুস ক্যানসার হওয়ার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে, যেমন- ৫৫ থেকে ৭৫ বছর বয়স্ক লোক, ধূমপানের ৩০ বছর ইতিহাস আছে এমন লোক এবং ১৫ বছর আগে ধূমপান ছেড়েছে এমন ব্যক্তি। এটি প্রাথমিক ও নিরাময়যোগ্য পর্যায়ে ক্যানসার নির্ণয়ের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করবে।’ তিনি যোগ করেন, ‘ফুসফুসের স্ক্রিনিং প্রোগ্রামের সময় নির্ণীত ৭০ শতাংশ ক্যানসার ১ম পর্যায়ে ধরা পড়ে।’

* রিকভারি সম্ভব

যদি আপনার মধ্যে ফুসফুস ক্যানসার ধরা পড়ে, সম্ভবত আপনার প্রথম চিন্তা হবে আরোগ্য লাভের উপায় কি? ডা. পার্ক বলেন, যেসব লোকেরা ফুসফুস স্ক্রিনিংয়ের সর্বোত্তম চেষ্টা করে, তাদের ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে এবং তাদের চমৎকার ফুসফুস কার্যক্রম বা সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে, এ কারণে তারা যেকোনো চিকিৎসা নিতে পারে যেমন- সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন, টার্গেটেড থেরাপি এবং ইমিউনোথেরাপি। এছাড়া ফুসফুস ক্যানসারের কিছু সাব-টাইপ আছে যা অত্যধিক ধীরে বিকশিত হয় এবং নিরাময়যোগ্য।’ ডা. স্যান্ডস বলেন, ‘ফুসফুসের স্ক্রিনিং প্রোগ্রামের সময় নির্ণীত ১ম পর্যায়ের ক্যানসারের সার্ভাইভাল রেট ৫ বছর যা ৯০ শতাংশ।’

* চিকিৎসায় নতুন অগ্রগতি

গত দশকের সর্বাধিক যুগান্তকারী ক্যানসার গবেষণার মধ্যে ফুসফুস ক্যানসারের নতুন চিকিৎসাও অন্তর্ভুক্ত আছে। ডা. স্যান্ডস বলেন, ‘এটি পূর্বের চিকিৎসা থেকে প্রায় সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ক্ষেত্র। বর্তমানে আমাদের বিভিন্ন ওষুধ রয়েছে যা নির্দিষ্ট ডিএনএ মিউটেশনসহ ক্যানসার কোষকে টার্গেট করতে পারে।’ এসব টার্গেটেড থেরাপি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াযুক্ত কেমোর চেয়ে ভালো কাজ করে। ডা. স্যান্ডস বলেন, ‘যেসব অনকোলজিস্ট ফুসফুস ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা করছে তাদের রোগী বেঁচে আছে, যা সম্ভব হয়েছে ইমিউনোথেরাপির প্রভাবে, এটি এমন ওষুধ যা কোনো ব্যক্তির ক্যানসার শণাক্ত করতে ইমিউন সিস্টেমকে সাহায্য করে।’

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন :




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়