ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

পুরুষের ইউরিনারি ইনকনটিনেন্স সমস্যা

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ২১ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পুরুষের ইউরিনারি ইনকনটিনেন্স সমস্যা

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : কেবলমাত্র নারীদের ইউরিনারি ইনকনটিনেন্স বা ব্লাডার লিকেজ হয় না, পুরুষদেরও হয়। এ সমস্যার ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রস্রাব ঝরতে থাকে। এ প্রতিবেদনে ইউরিনারি ইনকনটিনেন্স বা ব্লাডার লিকেজ বা প্রস্রাব ঝরা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

* ব্লাডার লিকেজ একটি বড় সমস্যা
ব্লাডার লিকেজ বা ইউরিনারি ইনকনটিনেন্স ২৫ মিলিয়নেরও বেশি আমেরিকানের জন্য দুর্ভাগ্যজনক সত্য। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন যে প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে বেশি হতে পারে, কারণ অনেক ভুক্তভোগী এ সম্পর্কে কথা বলে না অথবা মেডিক্যাল সেবা অনুসন্ধান করে না। আমাদের বাংলাদেশেও এ সমস্যার প্রকোপ উল্লেখ করার মতো।

* পুরুষদেরও ব্লাডার লিকেজ হয়
অনেক পুরুষদের মধ্যে ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্সের সমস্যা দেখা দিলেও এখনো পর্যন্ত এটিকে নারীদের সমস্যা হিসেবে দেখা হয়। বুড়ো মানুষদের রোগ হিসেবে এর খ্যাতি থাকলেও এটি যেকোনো বয়সের পুরুষদের হতে পারে। কন্টিনেক্সের একটি জরিপ অনুসারে, ‘ব্লাডার লিকেজের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হওয়া চারজন পুরুষের একজন বলে যে, তারা এ বিষয়টি নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কথা বলতে বিব্রতবোধ করে।’ যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর কনটিনেন্স অনুসারে, ‘১২ জন লোকের মধ্যে মাত্র একজন তাদের উপসর্গের জন্য মেডিক্যাল সেবা অনুসন্ধান করে।’

* সকল ইউরিনারি ইনকনটিনেন্স সমস্যা একই নয়
চিকিৎসার পূর্বে আপনার কি কারণে ব্লাডার লিকেজ হয়েছে তা নির্ণয় করার প্রয়োজন হবে। টিভি শো দ্য ডক্টরসের কো-হোস্ট, ইউরোলজিস্ট এবং সেক্সুয়াল হেলথ এক্সপার্ট জেনিফার বারম্যান বলেন, ‘ব্লাডার লিকেজ আপনার জীবনে হালকা থেকে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যদি আপনি এর কারণ ধরতে না পারেন এবং ডাক্তারের শরণাপন্ন না হন।’ ইউরিনারি ইনকনটিনেন্স প্রধানত তিন ধরনের, যথা- ১. স্ট্রেস ইনকনটিনেন্স, ২. আর্জ ইনকনটিনেন্স এবং ৩. ওভারফ্লো ইনকনটিনেন্স।

* স্ট্রেস ইনকনটিনেন্স
ব্লাডার বা মূত্রাশয়ে চাপ পড়লে স্ট্রেস বা চাপমূলক ইনকনটিনেন্স হয়ে থাকে। লাফানো, গলফ ক্লাবে খেলা, ভারী কোনোকিছু উত্তোলন করা, হাঁচি দেওয়া এবং অন্যান্য ক্রিয়ার কারণে এ ধরনের ব্লাডার লিকেজ হতে পারে। ডা. বারম্যান বলেন, ‘পেলভিক ফ্লোরের দুর্বলতা অথবা দুর্বল ইউরিনারি স্ফিনকটার পেশী কিংবা উভয় কারণে হঠাৎ করে স্ট্রেস ইনকনটিনেন্স হতে পারে।’ তিনি যোগ করেন, ‘পুরুষদের মূত্রনালী নারীদের তুলনায় লম্বা বলে তাদের স্ফিনকটার-সম্পর্কিত সমস্যা বেশি হয়ে থাকে।’ এ ধরনের ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্সের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রবলবেগে প্রস্রাব নির্গমন হয়ে থাকে এবং ব্লাডার সম্পূর্ণরূপে খালি হয় না।

* আর্জ ইনকনটিনেন্স
আর্জ বা তাড়নামূলক ইনকন্টিনেন্সের ক্ষেত্রে সবসময় প্রস্রাব করার জন্য তাড়না অনুভূত হয়ে থাকে, এমনকি আপনি সবেমাত্র বাথরুমে মূত্রত্যাগ করে আসলেও। ডা. বারম্যান বলেন, ‘এ ধরনের ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্সের ক্ষেত্রে ব্লাডারে অনৈচ্ছিক সংকোচন বা স্প্যাজম হয়, যে কারণে প্রস্রাব বের হয়ে আসার জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত সময়ে মূত্রনালী খুলে যায়।’ আর্জ ইনকন্টিনেন্সের রেঞ্জ অতি অল্প পরিমাণে প্রস্রাব নির্গমন থেকে শুরু হয় যা আপনি লক্ষ্য নাও করতে পারেন।

* ওভারফ্লো ইনকনটিনেন্স
ওভারফ্লো বা অতিপ্রবাহমূলক ইনকনটিনেন্স আর্জ ইনকন্টিনেন্সের বিপরীত। এক্ষেত্রে সবসময় মূত্রত্যাগের তাড়না অনুভবের পরিবর্তে আপনি প্রস্রাব করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবেন না। আপনার ব্লাডারকে একটি খোলা ট্যাপের সঙ্গে সংযুক্ত ওয়াটার বেলুন হিসেবে কল্পনা করুন। এ প্রসঙ্গে ডা. বারম্যান বলেন, ‘এটি পূর্ণ হতে থাকে এবং ওভারফ্লো বা অতিপ্রবাহ না হওয়া পর্যন্ত বড় হতে থাকে।’ তিনি যোগ করেন, ‘  যথেচ্ছভাবে প্রস্রাব বের হয়- কখনো কখনো একটানা ঝরতে থাকে, আবার কখনো কখনো বড় ধরনের প্রবাহ হিসেবে ঝরতে থাকে।’

* প্রোস্টেটের সঙ্গে প্রস্রাবের সম্পর্ক
যখন পুরুষেরা ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্সে ভুগবে, তখন সাধারণত প্রথমে প্রোস্টেট সমস্যার কথা ধারণা করা হবে। ডা. বারম্যানের মতে, ‘ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্সের একটি কারণ হতে পারে প্রোস্টেট, যদিও প্রায়ক্ষেত্রে অধিকাংশ পুরুষেরা যেভাবে মনে করে সেভাবে নয়।’ তিনি যোগ করেন, ‘একটি বর্ধিত প্রোস্টেট গ্রন্থি ইনকন্টিনেন্সের পরিবর্তে মূত্রত্যাগ দুরূহ করে বেশি, কিন্তু প্রোস্টেট সার্জারি প্রায়শ ইউরিনারি ইনকনটিনেন্স ঘটিয়ে থাকে।’ তিনি আরো বলেন, ‘যেকোনো পদ্ধতির প্রোস্টেট সার্জারি মূত্রাশয়ের স্নায়ু এবং মূত্রনালীর স্ফিনকটার পেশীকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যা লিকেজের কারণ হবে।’ তিনি যোগ করেন, ‘এটি সাময়িক, কিন্তু পুরুষ এবং তাদের চিকিৎসকদের এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন থাকার প্রয়োজন হবে এবং আরোগ্যলাভের সময় কিভাবে এর যত্ন নেওয়া হবে তার পরিকল্পনা করতে হবে।’

* সঠিক ওষুধ সেবন
ডা. বারম্যান সতর্ক করেন যে, পুরুষের ইনকন্টিনেন্সের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ওষুধ এ সমস্যাকে আরো খারাপ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো চিকিৎসক কোনো লোককে ব্লাডার স্প্যাজমের ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করেন এবং এ লিকেজ কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণে হয়ে থাকে, তাহলে রোগীর অবস্থা পূর্বের চেয়ে বেশি খারাপ হবে। ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্সের অন্যান্য মেডিক্যাল কারণের মধ্যে ব্যাক সার্জারি এবং কিছু ব্লাড প্রেশারের ওষুধ অন্তর্ভুক্ত আছে।

* ইউরিনারি ইনকনটিনেন্স সৃষ্টিকারী রোগ
ব্লাডার লিকেজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত রোগের তালিকায় ডায়াবেটিস শীর্ষস্থানে আছে, এটি শরীরের স্নায়ুকে ড্যামেজ করে- এর মধ্যে সেসব স্নায়ুও অন্তর্ভুক্ত আছে যা ব্লাডারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। মূত্রাশয়ের ক্যানসার, কোষ্ঠকাঠিন্য, স্ট্রোক, মূত্রনালীর সংক্রমণ, কিডনিতে পাথর, মূত্রাশয়ে পাথর, যৌনবাহিত রোগ অথবা পারকিনসন’সের মতো নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার কিংবা মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসের কারণেও ইউরিনারি ইনকনটিনেন্স হতে পারে।

* ইউরিনারি ইনকনটিনেন্স প্ররোচক জীবনধারা
স্থূলতা দ্বারা প্ররোচিত স্বাস্থ্য সমস্যার তালিকায় ইউরিনারি ইনকনটিনেন্সকে রাখতে পারেন। ডা. বারম্যান বলেন, ‘অতিরিক্ত ওজন ব্লাডারের ওপর চাপ ফেলতে পারে।’ অন্য একটি ফ্যাক্টর হচ্ছে, স্ট্রাডল ইনজুরি যা লোকজন গাড়ি দুর্ঘটনা কিংবা খেলাধুলায় পেয়ে থাকে। ডা. বারম্যান বলেন, ‘মূত্রনালী বা কুঁচকি এলাকায় অথবা স্পাইনাল কর্ডে যেকোনো ইনজুরি লিকেজের কারণ হতে পারে।’

* ব্লাডার লিকেজ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ
ডা. বারম্যান বলেন, ‘পুরুষদের এটা মেনে নিতে হবে যে, ইউরিনারি ইনকনটিনেন্স এমন কিছু নয় যা নিজে নিজে সেরে ওঠবে।’ তিনি যোগ করেন, ‘যেহেতু এটি সাধারণত যন্ত্রণাদায়ক নয় এবং প্রায়ক্ষেত্রে অনিয়মিত, তাই পুরুষরা এ সমস্যা দূর করার চেষ্টা নাও করতে পারে।’ কিন্তু এমনটা করবেন না। যদি আপনার দিনের বেলায় কোনো লিকেজ হয়, যদি আপনি চার ঘণ্টার চেয়ে কম সময়ে অধিক মূত্রত্যাগ করেন অথবা যদি লিকেজ যেকোনোভাবে আপনার জীবনধারাকে ব্যাহত করে, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। ডা. বারম্যান বলেন, ‘এ সমস্যার ক্ষেত্রে একজন ইউরোলজিস্টের শরণাপন্ন হওয়া সর্বোত্তম, যিনি ইনজুরি থেকে ক্যানসার (এবং আপনার প্রোস্টেট) সবকিছু চেক করতে পারেন।’

* ইউরিনারি ইনকনটিনেন্স প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কেজেল
ডা. বারম্যান বলেন, ‘স্ট্রেস ইনকনটিনেন্স প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বর্তমানে কেজেল এক্সারসাইজ বা পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ পুরুষের বেস্ট ফ্রেন্ড।’ নারীরা পেলভিক-ফ্লোর-স্ট্রেংথেনিং এক্সারসাইজ সম্পর্কে সচেতন থাকলেও পুরুষেরা সম্ভবত এই ‘স্কুইজ অ্যান্ড লিফট’ মেথডে নতুন। সুতরাং কেজেল এক্সারসাইজ সম্পর্কে আপনার নারী সঙ্গী থেকে সাহায্য নিতে পারেন এবং আপনারা একসঙ্গে কেজেল প্র্যাকটিস করতে পারেন।

* কফি ও মসলাযুক্ত ব্রেকফাস্ট এড়িয়ে চলুন
ডা. বারম্যান বলেন, ‘বিস্ময়করভাবে আপনার ডায়েট বা খাবার ব্লাডার লিকেজকে প্ররোচিত করতে পারে বা আরো অবনতির দিকে ঠেলে দিতে পারে।’ তিনি যোগ করেন, ‘সর্বাধিক অনিষ্টকারক হচ্ছে ক্যাফেইন, কিন্তু কার্বোনেটেড বেভারেজ, মসলাযুক্ত খাবার এবং আপনার ব্লাডারে ইরিটেশন সৃষ্টি করে এমন যেকোনো কিছুও এড়িয়ে চলুন।’

* জীবনধারায় পরিবর্তন আনুন
স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন আপনার ব্লাডার লিকেজ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনার যা যা করা উচিত তা তা করুন- সুষম খাবার খান, নিয়মিত ব্যায়াম করুন, স্ট্রেস হ্রাস করুন, অ্যালকোহল সীমিত করুন এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন। এতে আপনার ব্লাডার আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। যে এক্সারসাইজ লিকেজের কারণ হয় তা চর্চা করবেন না।

* লিক-প্রুফ অন্তর্বাস ব্যবহার করুন
আপনার ইউরিনারি ইনকনটিনেন্স হলে আপনি অ্যাডাল্ট ডায়াপার ব্যবহার করতে পারেন। আপনি বিশেষ ফ্যাব্রিকের লিক-প্রুফ অন্তর্বাস কনফিটেক্স ব্যবহার করতে পারেন যা স্তুপাকার না হয়েই তরল পদার্থ শোষণ করতে পারে।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন : *
 

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ মার্চ ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়