ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মৌখিক স্বাস্থ্য সমস্যা পুরো শরীরকেও ঝুঁকিতে রাখে

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ২৪ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মৌখিক স্বাস্থ্য সমস্যা পুরো শরীরকেও ঝুঁকিতে রাখে

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : মাড়ি থেকে রক্তপাত, মাড়ির প্রদাহ, যন্ত্রণাদায়ক ক্যাভিটি এবং দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস- এককথায় মৌখিক স্বাস্থ্যের অবনতি আপনার দৈনন্দিন কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আপনার মুখে কি হচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করে আপনার শরীরের অন্যান্য অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কখনো কখনো বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।

বিভারলি হিলসের পেরিয়োডন্টিস্ট এবং ডেন্টাল সার্জারির ডাক্তার স্যান্ডা মোল্ডোভান বলেন, ‘আপনার মুখের ব্যাকটেরিয়া শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।’ এ প্রতিবেদনে ক্ষতিগ্রস্ত দাঁত কিংবা মৌখিক স্বাস্থ্যের অবনতি কিভাবে পুরো শরীরকে ঝুঁকিতে রাখে তা নিয়ে আলোচনা করা হলো।

* হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়
ম্যানহাটনের প্রসথোডন্টিস্ট এবং মেডিসিন ইন ডেন্টিস্ট্রির ডাক্তার মাজেন নাটৌর বলেন, ‘কিছু গবেষণায় মাড়ির রোগ পেরিয়োডন্টাইটিসের সঙ্গে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের বর্ধিত ঝুঁকির সংযোগ পাওয়া গেছে।’ তিনি বলেন, পেরিয়োডন্টাইটিসের উপসর্গ যেমন- প্রদাহ, রক্তপাত এবং দাঁতের আশেপাশের হাড় ক্ষয় যেসব ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয় তারা রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে ধমনীতেও যেতে পারে।’ তিনি যোগ করেন, ‘ব্যাকটেরিয়া ধমনীর প্রাচীরে লেগে থাকতে পারে এবং রক্ত জমাটবদ্ধতা ঘটিয়ে থাকে। এর ফলে হৃদপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ বিঘ্নিত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।’ রক্ত জমাটবদ্ধতার কারণে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়ে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। সেখানকার রক্ত জমাটবদ্ধতার কারণে মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহও বিঘ্নিত হতে পারে, যা স্ট্রোকের দিকে ধাবিত করতে পারে।

* ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে
ব্যাকটেরিয়া আপনার মাড়িতে ফোলা সৃষ্টি করে এবং এসব ব্যাকটেরিয়া আপনার শরীরের অন্যান্য অংশের টিস্যুর প্রতিও একই প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথের তথ্যানুসারে, এই প্রদাহের সঙ্গে ক্যানসার বিকাশের সম্পর্ক রয়েছে এবং টিউমার বিকশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরো টিস্যু ড্যামেজ ও প্রদাহের সম্মুখীন হয়। ক্যানসার রিসার্চে প্রকাশিত এক গবেষণায় পাওয়া যায় যে, কিছু একই প্রকৃতির ব্যাকটেরিয়া যারা পেরিয়োডন্টাল রোগ সৃষ্টি করে, তাদের সঙ্গে খাদ্যনালীর ক্যানসারের উচ্চ ঝুঁকির সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া, অ্যানালস অব অনকোলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণা থেকে জানা যায় যে, পেরিয়োডন্টাইটিসে আক্রান্ত পুরুষদের মধ্যে ক্যানসারের বিকাশ ১৩ শতাংশ বেশি ছিল এবং যাদের মাড়ির রোগ অগ্রসর পর্যায়ে ছিল তাদের মধ্যে ক্যানসার নির্ণীত হয় ৪৫ শতাংশ বেশি।

* যৌন ক্ষমতা হ্রাসের ঝুঁকি বাড়ায়
আপনার মৌখিক স্বাস্থ্যের অবনতি হলে আপনার যৌন ক্ষমতাও হ্রাস পেতে পারে অথবা লিঙ্গ উত্থানে সমস্যা হতে পারে। তাইওয়ানের প্রাথমিক গবেষণায় পাওয়া যায় যে, ইরেক্টাইল ডিসফাংশন বা লিঙ্গ উত্থানে সমস্যা হয় এমন পুরুষদের মধ্যে ৭৯ শতাংশের ক্রনিক পেরিয়োডন্টাল রোগ ছিল। দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ রক্তনালী ড্যামেজ করতে পারে, যার মধ্যে পুরুষের জননেন্দ্রিয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত রক্তনালীও অন্তর্ভুক্ত।

* প্রোস্টেট সমস্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে
প্রোস্টেট-স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন (পিএসএ) হচ্ছে একটি এনজাইম যা প্রোস্টেটে তৈরি হয় এবং অল্প পরিমাণে নিঃসরণ হয়। আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পেরিয়োডন্টোলজি (এএপি) অনুসারে, ‘কিন্তু যখন প্রোস্টেটে প্রদাহ বা সংক্রমণ হয়, তখন পিএসএ এর মাত্রা বেড়ে যায়।’ এই সংস্থার মতে, পেরিয়োডন্টাল রোগে আক্রান্ত পুরুষদের উচ্চমাত্রায় পিএসএ নিঃসরণ হয় এবং তাদের প্রোস্টেটে প্রদাহও বেশি হয়। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুল অনুসারে, ‘এ সমস্যা তাদেরকে প্রোস্টেটাইটিসের দিকে ধাবিত করতে পারে, যা সকল বয়সের পুরুষদের হতে পারে।’ এ সমস্যার ফলে যন্ত্রণাদায়ক ইরিটেশন হতে পারে, বীর্য নির্গমন কঠিন হতে পারে, যৌনাঙ্গ ও তার আশেপাশে ব্যথা হতে পারে এবং অস্বাভাবিকভাবে মূত্রত্যাগের তাড়না অনুভূত হতে পারে।

* যেভাবে মৌখিক স্বাস্থ্যের অবনতি প্রতিরোধ করবেন
এএপি অনুসারে, নারীদের তুলনায় পুরুষদের পোরিয়োডন্টাল রোগ বেশি হয়- পুরুষদের ৫৬ শতাংশ এবং নারীদের ৩৮ শতাংশ। এর কারণ হতে পারে, ডেন্টিস্টের কাছে পুরুষরা নারীদের তুলনায় কম যায়। নারীরা ডেন্টিস্টের কাছে যায় বলে তাড়াতাড়ি ডেন্টাল প্লেক, টারটার এবং মাড়ির রক্তপাতের চিকিৎসা নিতে পারেন।

ডা. নাটৌর বলেন, ‘ভালো মৌখিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এসব ব্যাকটেরিয়া জনিত সমস্যা অনেক কম হবে।’ তিনি পরামর্শ দেন, ‘যদি আপনার কোনো মাড়ির রোগ অথবা দাঁতের সমস্যা না থাকে, তাহলে ক্লিনিং ও চেকআপ করার জন্য প্রতি ছয়মাসে একবার ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া উচিত।’

আপনার পেরিয়োডন্টাইটিস থাকলে অথবা এর লক্ষণ থাকলে (যেমন- ব্রাশ বা ফ্লসের সময় রক্ত বের হওয়া অথবা মাড়িতে প্রদাহ অনুভূত হওয়া) কিংবা আপনি ক্যাভিটি প্রবণ হলে আপনার প্রতি চার মাসে একবার ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া প্রয়োজন হবে।

ডা. মোল্ডোভান বলেন, ‘প্রতিদিন ফ্লস করলে ভালো ফল পাবেন।’ তিনি বলেন, ‘দাঁত সুস্থ রাখার আরেকটি স্ট্র্যাটেজি হচ্ছে চিনি খাওয়া কমিয়ে দেওয়া, কারণ চিনি দাঁতে লেগে থাকতে পারে, যার ফলে দাঁত ব্যাকটেরিয়ার পারফেক্ট বাসস্থানে পরিণত হয়- এর ফলে দাঁতে প্লেক হতে পারে।’ খাবার ও স্ন্যাক খাওয়ার পর পানি দিয়ে কুলি করে নিন। দৈনিক দুইবার দাঁত ব্রাশ তো করবেনই।

তথ্যসূত্র : ম্যান’স হেলথ
 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ মার্চ ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়