ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মাথাব্যথা যখন হার্ট অ্যাটাক অথবা স্ট্রোকের কারণ

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:২৬, ২৬ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মাথাব্যথা যখন হার্ট অ্যাটাক অথবা স্ট্রোকের কারণ

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : ঘনঘন মাথাব্যথায় ভুগছেন? মাথাব্যথা কেবলমাত্র আপনার কাজকে ব্যাহত করে না, আপনার শরীরে অন্যান্য সমস্যা তৈরিতেও ভূমিকা রাখতে পারে। ডেনমার্কের নতুন এক গবেষণায় পাওয়া গেছে, যেসব পুরুষের মাইগ্রেন অথবা মাথার একপাশে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয় এবং সেই সঙ্গে বমিবমি ভাব ও আলোক সংবেদনশীলতা থাকে তাদের মধ্যে হার্টের সমস্যা এসব থেকে মুক্ত মানুষদের তুলনায় বেশি।

গবেষণাটির গবেষকরা মাইগ্রেনে ভুগেছে এমন ৫০,০০০ লোক এবং মাথাব্যথায় ভুগেনি এমন ৫০০,০০০ লোকের ১৯ বছরের স্বাস্থ্য রেকর্ড বিশ্লেষণ করেন। দেখা যায় যে, মাইগ্রেনে ভোগা লোকদের মাথাব্যথায় না ভোগা লোকদের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি ইশেমিক স্ট্রোক এবং ৪৯ শতাংশেরও বেশি হার্ট অ্যাটাক হয়। তাদের পা অথবা ফুসফুসে রক্ত জমাটবদ্ধতা ৫৯ শতাংশেরও বেশি ছিল এবং অনিয়মিত হার্টবিট ছিল ২৫ শতাংশেরও বেশি। বিশেষ করে, মাইগ্রেন ডায়াগনোসিসের প্রথম বছরে স্ট্রোকের সম্ভাবনা খুব বেশি ছিল। মাইগ্রেনে ভোগা পুরুষদের প্রথম বছরে স্ট্রোকের ঝুঁকি মাথাব্যথায় না ভোগা লোকদের তুলনায় ১২ গুণ বেশি ছিল।

মাইগ্রেনে ভোগা লোকদের স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা কারণ? গবেষণা লেখক ও মেডিক্যাল ডাক্তার ক্যাসপার অ্যাডেলবোয়ার্গ বলেন, ‘ব্রেইনের আর্টারির মধ্যে ভ্যাসোস্প্যাজম হওয়ার কারণে স্ট্রোক হতে পারে।’ ভ্যাসোস্প্যাজম হচ্ছে রক্তনালীর সংকুচিত ও সংকীর্ণ অবস্থা যা রক্তপ্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে- এটি মাইগ্রেনের কারণ হতে পারে এবং স্ট্রোকের সম্ভাবনাও বৃদ্ধি করে।

অনেক লোক মাইগ্রেনের ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ওষুধ গ্রহণ করে যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ যেমন- ইবুপ্রোফেন অথবা ন্যাপ্রোক্সেন হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়ায়। এরকম হয়, কারণ এসব ওষুধ অস্বাভাবিক রক্ত জমাটবদ্ধতায় ভূমিকা রাখতে পারে।

কিন্তু মাইগ্রেন হলে হার্ট অ্যাটাক অথবা স্ট্রোকের ভয়ে উদ্বিগ্ন হবেন না। মাইগ্রেনের সঙ্গে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের কেমন সম্পর্ক তার পরিসংখ্যান জেনে নিন। হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে ১৯ বছরের স্বাস্থ্য রেকর্ড নিয়ে বিশ্লেষিত গবেষণায় দেখা যায় যে, মাইগ্রেনে ভোগা প্রতি ১,০০০ লোকের মধ্যে ২৫ জনের হার্ট অ্যাটাক হয়, যেখানে মাইগ্রেনে না ভোগা প্রতি ১,০০০ লোকের মধ্যে ১৭ জনের হার্ট অ্যাটাক হয়। উভয় ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের পার্থক্য আসলেই কম। তাহলে দুশ্চিন্তা করবেন কেন?

গবেষণাটিতে যাদের স্বাস্থ্য রেকর্ড বিশ্লেষণ করা হয়েছিল তারা তুলনামূলক অল্পবয়স্ক ছিল। তাদের গড় বয়স ছিল ৩০ এর মাঝামাঝি। সাধারণত এ বয়সে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক কম হয়। এ কারণে মাইগ্রেনের ব্যথা নিরাময়ের জন্য ঝুঁকিমুক্ত ও কার্যকরী ওষুধ আবিষ্কারের গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ডা. অ্যাডেলবোয়ার্গ বলেন, ‘হার্ট সংক্রান্ত ঝুঁকি কমিয়ে কিভাবে মাইগ্রেনের চিকিৎসা করা যায় তা আবিষ্কার করতে আরো গবেষণা প্রয়োজন হবে এবং মাইগ্রেনে ভোগা যেসব লোকদের হৃদরোগের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে তাদের নন-স্টেরয়েডাল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগের পাশাপাশি ব্লাড থিনার গ্রহণ করা উচিত।’

যদি আপনি কোনো ধরনের পুনরাবৃত্তিমূলক মাথাব্যথায় ভুগেন, তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। তিনি বলতে পারবেন যে আপনি মাইগ্রেনে ভুগছেন কিনা এবং তিনি আপনার উপযুক্ত চিকিৎসা করতে পারবেন। এছাড়া আপনার ডাক্তার আপনার ব্লাড প্রেশার বা কোলেস্টেরল লেভেল মনিটর করতে পারেন যা আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি পরিমাপে সাহায্য করতে পারে।

তথ্যসূত্র : ম্যান’স হেলথ

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ মার্চ ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়