ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

যেসব খাবার মাথাব্যথা বাড়াতে পারে

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ২ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যেসব খাবার মাথাব্যথা বাড়াতে পারে

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : যদি আপনি প্রতিনিয়ত মাথাব্যথায় ভুগেন অথবা মাইগ্রেন প্রবণ হন, তাহলে এর জন্য আপনার খাবার দায়ী হতে পারে। এ প্রতিবেদনে মাথাব্যথার কারণ হতে পারে এমন খাবারের একটি তালিকা দেওয়া হল।

* ডায়েট সোডা : যদি আপনি মাথাব্যথায় ভুগেন, তাহলে আপনার ডায়েট সোডা গ্রহণের মাত্রা দেখুন। ডায়েটারি গাইডলাইন অ্যাডভাইজরি কমিটি (ডিজিএসি) সম্প্রতি পরিমিত পরিমাণে নন-স্যাকারাইড সুইটেনার অ্যাসপারটামি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে। আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে হাজার হাজার ভোক্তা অ্যাসপারটামি সম্পর্কে অভিযোগ করেছে যে, এটি গ্রহণে মাথা ঘোরা বা মাথা ঝিমঝিম করা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস অথবা মাথাব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। ডিজিএসির ২০১৫ সালের সায়েন্টিফিক রিপোর্ট অনুসারে, যদি কেউ অ্যাসপারটামিযুক্ত বেভারেজ পান করতে পছন্দ করেন, তাহলে দৈনিক ৫০ মিলিগ্রামের বেশি অ্যাসপারটামি গ্রহণ করা উচিত নয়। একটি ১২ আউন্সের ডায়েট বেভারেজে প্রায় ১২০ মিলিগ্রাম অ্যাসপারটামি থাকে।

* পাকা কলা ও অ্যাভোক্যাডো : আপনি শুনে থাকবেন যে পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা কলা ও অ্যাভোক্যাডোর প্রশংসা করে, কারণ এ দুটি ফলের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। কিন্তু পাকা কলা ও অ্যাভোক্যাডোতে প্রচুর পরিমাণে টিরামিনও থাকে। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের সেন্টার ফর নিউরোলজিক্যাল রেস্টোরেশনের চিকিৎসক জেনিফার ক্রিয়েগলার বলেন, ‘কিছু খাবারে উচ্চ মাত্রায় টিরামিন থাকে যা মাইগ্রেনের কারণ হতে পারে।’ এমনকি আপনি মাইগ্রেন প্রবণ না হলেও উচ্চ মাত্রায় টিরামিন গ্রহণে আপনার মাথাব্যথা হতে পারে। টিরামিন হচ্ছে একটি অ্যামিনো অ্যাসিড যা অধিকাংশ লোকের কোনো সমস্যা ছাড়াই হজম হয়। কিন্তু যদি কারো এনজাইম মনোঅ্যামাইন অক্সিডেস ঘাটতি থাকে অথবা যদি কেউ অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট গ্রহণ করে তাহলে এটি ব্রেকডাউন প্রসেসকে ব্যাহত করতে পারে। ডা. ক্রিয়েগলার বলেন, ‘পাকা কলা ও পাকা অ্যাভোক্যাডো মাথাব্যথার শক্তিশালী উদ্দীপক হতে পারে, কারণ তাদের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে টিরামিন থাকে।’

* গ্লুটেনযুক্ত খাবার : গ্লুটেনযুক্ত খাবারের গ্লুটেন হজম সমস্যার কারণ হতে পারে (সেলিয়াক রোগের কথা বলা হচ্ছে না), কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে মাথাব্যথা হতে পারে গ্লুটেন সংবেদনশীলতার একটি উপসর্গ। গ্লুটেন আছে এমন কয়েকটি খাবার হচ্ছে গম, রাই, বিস্কুট, পাস্তা, পাউরুটি ও সিজনিং মিক্স। নিউট্রিশনফ্যাক্ট ডট অর্গের মাইকেল গ্রেগর বলেন, ‘গ্লুটেনমুক্ত ডায়েট মেনে চলার আগে সেলিয়াক রোগ আছে কিনা তা নির্ণয় করা উচিত।’

* আইসক্রিম : চকলেট শেক বা আইসক্রিম খাওয়ার সময় হঠাৎ আপনার মাথাব্যথা শুরু হতে পারে, যাকে বলে আইসক্রিম হেডেক। কিন্তু এ মাথাব্যথা সাধারণত এক বা দুই মিনিট পর প্রশমিত হয়ে যায়। কেন আইসক্রিম খাওয়ার সময় হঠাৎ করে তীব্র মাথাব্যথা শুরু হয় এবং তারপর চলে যায়? এর কারণ হচ্ছে, আইসক্রিম বা আইস ড্রিংকের মতো ঠান্ডা খাবার গলার সংস্পর্শে আসলে আপনার মাথার রক্তনালীতে রিফ্লেক্স সংকোচন হতে পারে, যা আপনি মাথাব্যথা হিসেবে অনুভব করতে পারেন।

* ককটেল পার্টি ফুড : অ্যাজিংকৃত পনির, বাদাম, জলপাই এবং পিকেলকৃত বেবি কর্ন ও আচার অনেক পার্টির জন্য স্ট্যান্ডার্ড এপিটাইজার। কিন্তু এসব খাবারে প্রচুর টিরামিন থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ন্যাশনাল হেডেক ফাউন্ডেশন মাথাব্যথা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য টিরামিন গ্রহণ সীমিত করতে পরামর্শ দিচ্ছে। অ্যাজিংকৃত খাবার, গাঁজানো খাবার অথবা দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষিত খাবারে টিরামিনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।

* মনোসোডিয়াম গ্লুটামেটযুক্ত খাবার : মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট হচ্ছে ফ্লেভার বৃদ্ধিকারক যা অনেক খাবার প্রস্তুতে ব্যবহার করা হয়, কিন্তু এটি মাথাব্যথা সৃষ্টিতে উদ্দীপনা যোগাতে পারে। কেবলমাত্র চাইনীজ ফুডেই মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট থাকে না, হিমায়িত খাবার, ক্যানের স্যূপ এবং স্ন্যাক ফুডেও এটি থাকতে পারে। খাবারে মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট যত বেশি থাকবে, এটি মাথাব্যথার উদ্দীপক হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি বেড়ে যাবে। মাইগ্রেন রোগীরা মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট গ্রহণ করলে মাথাব্যথা তীব্র হয়, কারণ এটি ক্রেনিয়াল রক্তনালীতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

* চুইংগাম : মাঝেমাঝে চুইংগাম চিবানো সম্ভবত মাথাব্যথার উদ্দীপক হবে না। কিন্তু যদি আপনি নিয়মিত অত্যধিক চুইংগাম চিবান, তাহলে আপনার মাথাব্যথা হতে পারে। সম্প্রতি একটি ছোট গবেষণায় পাওয়া যায়, ৩০ জন কিশোর চুইংগাম চিবানো ছেড়ে দেওয়ার পর তাদের মধ্যে ১৯ জনের ক্রনিক হেডেক দূর হয়ে যায়। এ গবেষণাটি কিশোরদের ওপর ফোকাস করা হলেও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও এটি সত্য হতে পারে।

* পনির : পনিরের অ্যাজিং প্রসেস পনিরের স্বাদ বৃদ্ধি করে, কিন্তু এটি যত বেশি সময় অ্যাজিং করা হবে, টিরামিনের পরিমাণ তত বেশি বেড়ে যাবে। ব্লু চীজ, ব্রি, চেডার, ফেটা, মজারেলা এবং সুইস চীজে উচ্চমাত্রায় টিরামিন থাকে, যা মাইগ্রেন হেডেকের উদ্দীপক হতে পারে।

* রেড ওয়াইন : রেড ওয়াইন, বিয়ার ও অন্যান্য অ্যালকোহলে উচ্চমাত্রায় টিরামিন থাকে। মাইগ্রেন চেকড অ্যাপের রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ান টরি টেডরো বলেন, ‘এ টিরামিন হচ্ছে একটি অ্যামিনো অ্যাসিড যা সাধারণত এনজাইম মনোঅ্যামাইন অক্সিডেসের (এমএও) সহায়তায় ভাঙ্গতে কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু কিছু কারণে এই অ্যামিনো অ্যাসিডের ভাঙ্গন ব্যাহত হতে পারে, যেমন- কেউ অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট গ্রহণ করলে অথবা তার এমএও ঘাটতি থাকলে।’

* লবণ : বাল্টিমোরে অবস্থিত মার্সি মেডিক্যাল সেন্টারের অন্তর্গত দ্য সেন্টার ফর এন্ডোক্রিনোলজির ডায়েটিশিয়ান লেই ট্রেসি বলেন, ‘আমেরিকান ডায়েটে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম আসে কিছু প্রক্রিয়াজাত, প্রি-প্যাকেটজাত এবং রেস্টুরেন্টের খাবার থেকে। কিছু লোক অনুধাবন করতে পারে না যে পনির, ক্যানের স্যূপ ও শাকসবজি, ফ্রোজেন এন্ট্রি এবং বাক্সের ম্যাকারনি ও পনিরে সোডিয়াম থাকে।’ তিনি যোগ করেন, ‘গত বছরের একটি গবেষণায় উচ্চমাত্রায় সোডিয়াম গ্রহণ এবং মাথাব্যথার আবির্ভাবের মধ্যে সংযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে শরীরে কি ঘটে তা এখনো অস্পষ্ট এবং এটি জানতে আরো গবেষণার প্রয়োজন হবে।’

* চকলেট : চকলেটও মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। এর জন্য চকলেটের কিছু উপাদান যেমন- ক্যাফেইন, টিরামিন ও ফিনাইলথাইলেমিন (একটি নিউরোট্রান্সমিটার যার উদ্দীপক প্রভাব রয়েছে) দায়ী হতে পারে। এসব উপাদানের সমন্বয় কিছু লোকের চেতনা বিনাশ করতে পারে এবং অন্যদের ক্ষেত্রে এটি মাথাব্যথার উদ্দীপক হতে পারে।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ মে ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়