ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

রমজানে জরুরি ২০ পরামর্শ

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ২১ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রমজানে জরুরি ২০ পরামর্শ

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : রমজান আমাদেরকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার সঙ্গে বিশেষ ঘনিষ্ঠতা লাভ এবং প্রতিটি ধর্মীয় কাজে বর্ধিত পুণ্য অর্জনের অনন্য সুযোগ করে দেয়। রমজানে যেসব সুযোগ রয়েছে তা বছরের অন্যান্য মাসগুলোতে নেই। তাই রমজান মাসে সর্বাধিক অর্জনের জন্য আমাদের কার্যকর পরিকল্পনা করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

কোরআন এবং হাদিসের বিভিন্ন বিবৃতি থেকে আমরা রমজানের গুরুত্ব সম্পর্কে অনুধাবন করতে পারি। নবীজী (সা) বলেছেন, ‘আল্লাহ সৎকাজের পুরস্কার দিতে কখনও ক্লান্ত হন না’ (সহীহ বুখারী)। অন্য একটি হাদিসে আছে, ‘আল্লাহর কাছে দুর্বল বিশ্বাসীর চেয়ে দৃঢ় বিশ্বাসী অধিক উত্তম ও প্রিয়’ (সহীহ মুসলিম)। আল কোরআনে (২:১৭৩) আছে, ‘আমি তোমাদের জন্য যেসব ভালো খাবার সরবরাহ করেছি তা খাও।’ আল কোরআনের অন্যত্র (২:১৬৮) উল্লেখ আছে, ‘পৃথিবীতে যা কিছু হালাল ও স্বাস্থ্যকর তা খাও।’ আল কোরআনের ২০:৮১-তে উল্লেখ আছে, ‘খাও ও পান কর, কিন্তু অতিরিক্ত নয়।’

কোরআন-হাদিসের আলোকে এটা স্পষ্ট যে ভালো স্বাস্থ্য বজায় রাখা, ভালো ডায়েট করা এবং শক্তিশালী শরীর গঠন করা একজন উত্তম মুমিনের বৈশিষ্ট্য, যা ইবাদাত ও অন্যান্য অনেক ধর্মীয় কাজের জন্য আপনাকে ভালো স্ট্যামিনা যোগাবে। আপনি রোজার মাসে কিছু স্বাস্থ্য টিপস মেনে চলে স্বাস্থ্য বিষয়ক সর্বোত্তম ফলাফল পেতে পারেন। রমজানে কি খাবেন এবং কি খাবেন না এ বিষয়ে বলার আগে খাবারের বিভিন্ন ক্যাটাগরি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

* জটিল কার্বোহাইড্রেট : জটিল কার্বোহাইড্রেট হচ্ছে শ্বেতসারবহুল খাবার, যা সারাদিন ধরে ধীরে ধীরে শক্তি রিলিজ করে, কারণ তারা হজম হতে ও আমাদের রক্তনালীতে শোষণ হতে দীর্ঘ সময় নেয়। এটি আমাদের সারাদিন সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। আলু, গম, চাল, শস্যকণা, ওট, সিরিয়ালস, ফল ও অনেক শাকসবজি জটিল কার্বোহাইড্রেটের অন্তর্ভুক্ত। হোলমিল বা হোলগ্রেন সর্বোত্তম, কারণ তাতে ভালো পরিমাণে ফাইবারও থাকে। এ খাবারগুলো সুষম খাবারের মূলভিত্তি।

* সরল শর্করা : সরল শর্করা হচ্ছে উচ্চ শর্করাযুক্ত খাবার, যা দ্রুত আপনার রক্তপ্রবাহে শোষিত হয়। যখন আমরা ব্যায়াম বা কাজ করি, তখন তাৎক্ষণিক শক্তি রিলিজের জন্য আমরা এসব গ্রহণ করতে পারি। কিন্তু অত্যধিক ব্যবহার করলে তাদের অধিকাংশই অব্যবহৃত থেকে যায় এবং পরবর্তীকালে শরীরে চর্বি হিসেবে জমা হয়। রক্তে উচ্চ পরিমাণ শর্করা আমাদের শরীরে উৎপন্ন ইনসুলিনের প্রতি আমাদেরকে কম সেনসিটিভ করতে পারে, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। সরল শর্করা মুখের ব্যাকটেরিয়া দ্বারাও শোষিত হয়, যা দাঁতের জন্য ক্ষতির কারণ হয় এমন পদার্থ রিলিজ করে। সরল শর্করার উদাহরণ হচ্ছে: মিষ্টি, চকলেট, কেক, ডেজার্ট, কনসেন্ট্রেটেড ফ্রুট জুস ও এনার্জি ড্রিংক।

* প্রোটিন : প্রোটিন আমাদের শরীরের বিল্ডিং ব্লক গঠন করে এবং এটি শরীরের গঠন ও মেরামতের সঙ্গে জড়িত। গবেষণায় প্রোটিনের সঙ্গে বর্ধিত তৃপ্তির সংযোগ পাওয়া গেছে এবং প্রোটিনের কারণে আপনার তাড়াতাড়ি ক্ষুধা অনুভূত হবে না। প্রোটিনের উৎসের উদাহরণ হচ্ছে মাংস, পোল্ট্রি, মাছ, ডিম, দুগ্ধজাত খাবার, বাদাম, মটরশুটি ও বিচি।

* ফ্যাট : শারীরিক কার্যক্রমের জন্য অল্প পরিমাণে ফ্যাট গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি শক্তির একটি উৎস। অত্যধিক স্যাচুরেটেড ফ্যাট ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে, যা হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। স্থূলতা কিছু ক্যানসার ও ডায়াবেটিসের সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত। প্রাণীজ চর্বি (তেল, রেড মিট, পোল্ট্রি স্কিন), ফুল ফ্যাট মিল্ক, ক্রিম, পনির, মাখন, ঘি ও কেক হচ্ছে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের উৎসের উদাহরণ। অন্যদিকে, পরিমিত পরিমাণে আনস্যাচুরেটেড ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণ ক্ষতিকর কোলেস্টেরল হ্রাসে সাহায্য করে। তৈলাক্ত মাছ, অলিভ অয়েল, ভেজিটেবল অয়েল, অ্যাভোক্যাডো ও চিনাবাদামে আনস্যাচুরেটেড ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট পাওয়া যায়।

* ফাইবার : সুস্থ ডাইজেস্টিভ সিস্টেমের জন্য ফাইবার গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদেরকে দীর্ঘসময় ক্ষুধা অনুভব না করতে সাহায্য করে। শাকসবজি, ফল হোলমিল গ্রেন ও সিরিয়ালে ফাইবার পাওয়া যায়। যদি সম্ভব হয় তাহলে খোসাসহ শাকসবজি ও ফল খান এবং আপনার ডায়েটে অধিক ফাইবার যুক্ত করুন।

* ভিটামিন ও মিনারেল : দেহকে সুস্থ রাখতে অল্প পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল গ্রহণ প্রয়োজন এবং তারা আমাদের শরীরে অনেক রকম কাজ করে। ফল, শাকসবজি ও মাংস/পোল্ট্রির সমন্বয়ে এসব সহজেই পাওয়া যায়।

রমজানের জন্য ২০ স্বাস্থ্য টিপস
উপরোক্ত তথ্যের আলোকে নিচে রোজা সম্পর্কিত ২০টি স্বাস্থ্য পরামর্শ দেওয়া হলো, কিন্তু ব্যক্তিভিত্তিক সঠিক ডায়েট পরিকল্পনার জন্য কোনো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।

১. খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করুন, যা আপনাকে তাৎক্ষণিক শক্তি যোগাবে। পর্যাপ্ত পানি পানে নিজেকে রিহাইড্রেট করুন।

২. ইফতারের সময় আইসোটনিক ড্রিংক অথবা ন্যাচারাল জুস ড্রিংক হচ্ছে মিনারেল, সল্ট ও ভিটামিনের ভালো উৎস।

৩. যত দ্রুত সম্ভব বেশি ভোজনের তাড়না প্রতিরোধ করুন। গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, এমনকি খাবার সম্পর্কিত শব্দগুলোও ক্ষুধা বাড়িয়ে তোলে। রোজা ও সংযম শেষে এই প্রবৃত্তি প্রতিহত করুন, পরিমিত পরিমাণে খাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন।

৪. উচ্চ চর্বি ও উচ্চ শর্করা সমৃদ্ধ খাবার এবং অত্যধিক প্রক্রিয়াজাত খাবার বর্জন করুন, যেমন- ভাজা খাবার, ঘি, পাকোরা, বিরানি, মিষ্টি, হালুয়া ইত্যাদি।

৫. ইফতার ও সেহরির সময় লবণাক্ত খাবার গ্রহণ করলে আপনার ডিহাইড্রেশন হবে এবং তৃষ্ণা বৃদ্ধি পাবে।

৬. মাগরিবের নামাজের পর এই আর্টিকেলে উল্লেখিত খাবারের ক্যাটাগরির সমন্বয়ে ভালো সুষম খাবার খান।

৭. ধীরে রিলিজ হয় এমন কার্বোহাইড্রেট আপনাকে ইবাদাতের রাতে ভালো শক্তি যোগাবে। ডায়েটে ফাইবারের উৎস যোগ করুন, যা দিনের বাকি সময় আপনার অন্ত্রের কার্যক্রম সচল ও অন্ত্রকে সুস্থ রাখবে।

৮. ফাইবার ও প্রোটিন আপনাকে দীর্ঘসময় পেট ভরা অনুভূতি দেবে- যা আপনার ডায়েট পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

৯. পর্যাপ্ত হাইড্রেটেড থাকা ও ফাইবারের উৎস ভোজন রমজানে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করবে।

১০. সিরিয়ালস, সালাদ, ফল ও শাকসবজি হচ্ছে তৈলাক্ত তরকারি ও ভাজা স্ন্যাকের চমৎকার বিকল্প।

১১. পরিমিত পরিমাণে খান, অত্যধিক ভরা পেট রাতে ইবাদাতে বিঘ্ন ঘটায়।

১২. শুধুমাত্র দাঁতের সুস্থতার জন্য নয়, আপনার সহ-উপাসকদের শ্বাসের দুর্গন্ধ থেকে বাঁচাতেও তারাবীহের পূর্বে দাঁত ব্রাশিং ও ফ্লসিং করুন। অত্যধিক শর্করাযুক্ত স্ন্যাক ও পানীয়ও দাঁতের জন্য ক্ষতিকর।

১৩. ইফতারের পর প্রতি আধঘণ্টা পরপর পানি পানে পর্যাপ্ত হাইড্রেটেড থাকুন।

১৪. ইফতারের পরপরই শারীরিক ব্যায়াম ভালো নয়, কারণ তখন আমাদের রক্তপ্রবাহ আমাদের ডাইজেস্টিভ সিস্টেমের দিকে চালিত হয়।

১৫. ক্যাফেইন সমৃদ্ধ এনার্জি ড্রিংকের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। চা ও কফিতেও চিনি সীমিত করুন।

১৬. রমজানের নিয়মানুবর্তিতা মেনে পবিত্র এ মাসে ধূমপান ছেড়ে দিন।

১৭. সেহরি এড়িয়ে যাবেন না, কারণ এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত এবং শরীরকে কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, প্রোটিন ও উপকারী ফ্যাট সমৃদ্ধ সুষম ডায়েট দিয়ে পুষ্টি যোগানোর সুযোগ।

১৮. রমজানে পর্যাপ্ত ঘুম যান। ভালোভাবে বিশ্রাম নিলে রমজানের অধিকাংশ সময় উত্তমভাবে কাজে লাগানো যাবে।

১৯. যদি আপনি নিয়মিত কোনো ওষুধ গ্রহণ করেন অথবা যদি আপনার কোনো স্বাস্থ্য দশা থাকে (যেমন- গর্ভবর্তী বা স্তন্যপান করানো), তাহলে রোজার পরিকল্পনার পূর্বে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

২০. ইসলাম অসুস্থ লোকদের রোজা না রাখার অনুমতি দিয়েছে। রোজার ফিকহ সম্পর্কে জানতে এমন ইমামের কাছে যান যিনি এ ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান দিতে পারবেন।

তথ্যসূত্র : ইসলাম ২১সি



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ মে ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়