ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ক্যানসারের সতর্কীকরণ উপসর্গ (শেষ পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ২৩ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ক্যানসারের সতর্কীকরণ উপসর্গ (শেষ পর্ব)

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : অনেক সাধারণ শারীরিক উপসর্গ রয়েছে, যা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হতে পারে অথবা উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণও হতে পারে। এমন ১৪ উপসর্গ নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে শেষ পর্ব। এসব উপসর্গ অবহেলা না করে, চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

* নিরাময় হচ্ছে না এমন মুখ বা জিহ্বার ফোড়া

ক্যানকার ফোড়া বা জ্বরঠোসার মতো কমন মুখের ফোড়া বিরক্তিকর, কিন্তু উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো মারাত্মক কিছু নয় বললেই চলে। জ্বরঠোসা সাধারণত হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস টাইপ ১ দ্বারা হয়ে থাকে, এটি একটি উচ্চ সংক্রামক ভাইরাস, যা জ্বরঠোসা আছে এমন কাউকে চুমু দিলে বা তার কাপ বা চামচ বা অন্যকিছু ব্যবহার করলে ছড়াতে পারে। অসুস্থতা, মানসিক চাপ বা সূর্যের নিচে থাকার কারণে এটি হতে পারে। ক্যানকার ফোড়াও সমানভাবে কমন, যদিও এটি কেন বিকশিত হয় তা অজ্ঞাত। বিভিন্ন ফ্যাক্টরের সমন্বয়, যেমন- ত্বকে ছোট ইনজুরি, ডায়েট ঘাটতি ও কিছু ব্যাকটেরিয়া এর জন্য দায়ী হতে পারে। যেকোনো মুখের ফোড়ার ক্ষেত্রে এটির স্থায়িত্বের দিকে মনোযোগ দিন। ডা. বোন্টা বলেন, ‘যদি আপনার সেরে ওঠছে না এমন ফোড়া থাকে (একমাস ধরে আছে, নিরাময় হচ্ছে না এবং অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে), তাহলে এটি এমন কিছু যা পরীক্ষা করা প্রয়োজন।’ এই ফোড়া ত্বকের ক্যানসারের একটি লক্ষণ হতে পারে অথবা বিরল ক্ষেত্রে মাথা বা ঘাড়ের ক্যানসারের।

* পরিবর্তন হয় এমন লেশন

বিরলক্ষেত্রে মোল বা আঁচিল বা তিল ও ফ্রেকল বা ত্বকের ওপর বাদামী বর্ণের ছোট প্যাচের বৃদ্ধি, বর্ণের পরিবর্তন ও আকারের পরিবর্তন হয়। যদি আপনার ত্বকের ওপরের কোনো স্পটের এ ধরনের কোনো বৈশিষ্ট্য থাকে, তাহলে এটি ক্যানসার এবং কোনো ডার্মাটোলজিস্টের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করার সময় হয়েছে। ডা. বোন্টা বলেন, ‘পরিবর্তনশীল যেকোনো লেশন (অস্বাভাবিক টিস্যুর স্থান) ডার্মাটোলজিস্টকে দেখানো প্রয়োজন, বিশেষ করে সাদা ত্বকের লোকদের-তারা মেলানোমার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। শুধু যে সাদা ত্বকের লোকেরাই ত্বকের ক্যানসার সম্পর্কে সতর্ক থাকবেন তা নয়, আমি ইথিওপিয়ার ২০ বছর বয়সের এক লোককে (কৃষ্ণ ব্যক্তি) দেখেছি, যার মেলানোমার অবস্থা খুব ভয়াবহ ছিল, তার পায়ের সোলের ওপর খুব অ্যাগ্রেসিভ ফর্মের মেলানোমা ছিল।’ এছাড়া সতর্ক থাকবেন যে, সব মেলানোমাই আকার বা আকৃতি পরিবর্তন করে না। ডা. বোন্টা বলেন, ‘যেসব স্পট আপনার ত্বকে বছরের পর বছর ধরে আছে তা কোনো ডার্মাটোলজিস্ট দ্বারা পরীক্ষা করা উচিত। অনেক বছর ধরে থাকা স্পট এটা প্রমাণ করে না যে আপনার কিছুই হয়নি। প্রায়ক্ষেত্রে এটি নিরীহ হলেও আপনার প্রতিবছর পরীক্ষা করা উচিত।’

* পেটফাঁপা

মাঝেমাঝে পেটফাঁপা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়, বিশেষ করে উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পর। আপনাকে প্রধানত পেটফাঁপার স্থায়িত্বের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে: যদি পেটফাঁপা লেগে থাকা এবং চিকিৎসা করার পরও চলে না যায়, তাহলে আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। ডা. বোন্টা বলেন, ‘ওভারিয়ান ক্যানসারের রোগীদের একটি সর্বাধিক কমন উপসর্গ হচ্ছে বর্ধিত পাকস্থলীয় চাপ। তারা বলে যে তাদের পেট খুব দ্রুত ফেঁপে যায়। পেটফাঁপা হচ্ছে একটি কমন মেনোপজ-পরবর্তী উপসর্গ, কিন্তু এটি ওভারিয়ান ক্যানসারের অন্যতম সর্বাধিক কমন উপসর্গও হতে পারে। ওভারিয়ান ক্যানসারকে নীরব ঘাতক বলা হয়, কারণ আমরা এটি খুব দেরিতে খুঁজে পাই, এটির জন্য কোনো স্ক্রিনিং নেই। এ কারণে আপনার উপসর্গের প্রতি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।’

* অনিয়মিত মলত্যাগ

আপনি কি খাচ্ছেন তার ওপর ভিত্তি করে আপনার মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু যদি এটি অননুমেয় ও সমস্যাপূর্ণ হয়, তাহলে আপনি সম্ভবত ক্যানসারের লক্ষণ দেখছেন। ডা. বোন্টা বলেন, ‘আমি কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন, কিন্তু পর্যায়ক্রমে এ দুটিই হয়ে থাকলে আমি সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা করবো। কোলন ক্যানসার অথবা গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল সমস্যা অন্ত্রের কার্যক্রম ব্যাহত করতে পারে এবং মলের মুভমেন্ট থামিয়ে দিতে পারে, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে। কিছুক্ষেত্রে এই ব্যাকআপ ডায়রিয়ার দিকে নিয়ে যেতে পারে। মলত্যাগের অভ্যাসের যেকোনো ধ্রুব পরিবর্তন অথবা পর্যায়ক্রমে কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়া হওয়া মারাত্মক সমস্যা নির্দেশ করতে পারে।’

* কাশি

আপনার ফুসফুসে যে সমস্যা হচ্ছে তা আপনাকে জানানোর জন্য আপনার শরীরের একটি পন্থা হচ্ছে কাশি। অ্যালার্জি বা ফ্লুর সঙ্গে কাশি আনকমন নয়। যদি অন্যান্য উপসর্গ ছাড়া অনবরত কাশি হয়, তাহলে আপনার স্ক্রিনিং করানো প্রয়োজন হবে। যদি আপনি ধূমপায়ী হন এবং অনবরত কাশেন, তাহলে চিকিৎসকের কাছে যেতে দেরী করা ঠিক হবে না। ডা. বোন্টা বলেন, ‘আপনি কতবছর ধরে কত প্যাক ধূমপান করছেন তার ওপর আপনার ঝুঁকি নির্ভর করে। আপনি যত বেশি ধূমপান করবেন, আপনার ফুসফুস ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি তত বেশি।’ ঘর বা কর্মক্ষেত্রে ধোঁয়া বা ধূমপান, কেমিক্যাল ও অন্যান্য সম্ভাব্য কার্সিনোজেন এক্সপোজ করলেও কাশি বিপদের সংকেত দিতে পারে।

* যৌনাঙ্গে লেশন

এটি যৌন সংক্রামক রোগের সর্বাধিক কমন লক্ষণ হলেও যোনি বা শিশ্নের ওপর লেশন ক্যানসারেরও একটি উপসর্গ হতে পারে। ডা. বোন্টা বলেন, ‘এইচপিভি (হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস) ওয়ার্ট হিসবে প্রকাশ পেতে পারে।’ এই ভাইরাস সার্ভিক্যাল ক্যানসারও সৃষ্টি করতে পারে, যে কারণে নারীদের নিয়মিত প্যাপ স্মিয়ার বা সার্ভিক্যাল স্ক্রিনিং করানো গুরুত্বপূর্ণ- ৩০ বছরের নিচের সুস্থ নারীদের ক্ষেত্রে প্রতি তিনবছর পরপর এবং ত্রিশোর্ধ্ব নারীদের ক্ষেত্রে প্রতি পাঁচ বছর পরপর (এ বিষয়ে সঠিক তথ্য জানতে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন)। ওরাল ইন্টারকোর্স থেকে এইচপিভি ইনফেকশনের কারণে মাথা ও ঘাড়ে ক্যানসার হওয়ার ঘটনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

* ঘনঘন মূত্রত্যাগ

জর্জিয়া ইউরোলজির ইউরোলজিক অনকোলজিস্ট ভাহান কাসাবিয়ান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে পুরুষদের মধ্যে নির্ণীত দ্বিতীয় সর্বাধিক কমন ক্যানসার হচ্ছে প্রোস্টেট ক্যানসার (এক নম্বরে ত্বকের ক্যানসার)। অধিকাংশ পুরুষের মধ্যে এই রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে, যদিও এর কোনো উল্লেখযোগ্য উপসর্গ নেই। এই ক্যানসারের অগ্রসর পর্যায়ে মূত্র সম্পর্কিত উপসর্গ প্রকাশ পেয়ে থাকে, যেমন- ঘনঘন মূত্রত্যাগ করা। অ্যাগ্রেসিভ ও মেটাস্টেটিক প্রোস্টেট ক্যানসারে ভোগা পুরুষদের সতর্কীকরণ লক্ষণের মধ্যে ক্লান্তি, নিস্তেজ বা তীব্র ব্যথা, দুর্বলতা বা অসাড়তা, ঘুমের সমস্যা, প্রতিদিনের কাজকর্ম (যেমন- সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠা) করতে অসুবিধা অন্তর্ভুক্ত।’

পড়ুন :
 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ জুলাই ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়