ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ঠান্ডা থেকে দ্রুত মুক্তিলাভের উপায়

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৭, ২৯ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঠান্ডা থেকে দ্রুত মুক্তিলাভের উপায়

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : আবহাওয়া পরিবর্তনের সময়ে অনেকেই ঠান্ডা লাগা সমস্যায় ভুগেন। ঠান্ডা লাগলে গলায় খুসখুস ভাব, নাক দিয়ে পানি পড়া, মাথা ভার হয়ে থাকা প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দেয়।

সাধারণ ঠান্ডার আসলে এখনো কোনো নিরাময় নেই। কিন্তু কিছু পদক্ষেপ মেনে চলে আপনি উপসর্গ হ্রাস করতে পারেন এবং আপনার অসুস্থতার মেয়াদ কমাতে পারেন। এ প্রতিবেদনে ঠান্ডা থেকে দ্রুত মুক্তিলাভের কিছু উপায় আলোচনা করা হলো।

* কার্যকরী : বিশ্রাম
অবশ্যই আপনার কাজ ও পরিবার গুরুত্বপূর্ণ এবং আপনার বিছানায় পড়ে থাকার সময় নেই। কিন্তু যদি আপনি অনুভব করেন যে ঠান্ডার সমস্যায় ভুগছেন, তাহলে অন্তত প্রথম কিছুদিন নিজেকে বিশ্রামে রাখুন। আপনার শরীরের নিরাময়ের জন্য সময় প্রয়োজন এবং বিশ্রাম হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা আপনি ঠান্ডা থেকে দ্রুত রিকভার করার জন্য মেনে চলতে পারেন।

আপনার সহকর্মীদের কথাও ভাবুন, গবেষণায় দেখা গেছে ঠান্ডার প্রথম কিছুদিন (এবং আপনার এই অসুস্থতা প্রকাশ পাওয়ার এক বা দুইদিন পূর্বে) আপনি সর্বাধিক সংক্রামক। সান ফ্রান্সিসকোতে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার ইন্টারনাল মেডিসিনের রেসিডেন্ট ফিজিশিয়ান ডা. মাইকেল ইনকজি বলেন, ‘বিশ্রাম একটি ভালো চিকিৎসা এবং লোকজনকে বলবো তারা যেন বাইরে না যায়- বিশেষ করে জনাকীর্ণ এলাকায়- যেখানে আপনি এই ভাইরাস অন্যদের মাঝে ছড়াতে পারেন।’ কত দ্রুত ভাইরাস ছড়াতে পারে? একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে, কোনো অফিসের দরজার হাতলে লেগে যাওয়া ভাইরাস কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সম্পূর্ণ ভবনে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

* কার্যকরী : তরল খাবার
ঠান্ডার জন্য হাঁচি ও প্রতিনিয়ত নাক ঝাড়ার কারণে আপনি প্রচুর তরল হারান, এসব তরল প্রতিস্থাপন আপনাকে ভালো অনুভবে সাহায্য করবে। পানি ও জুস ভালো, কিন্তু উষ্ণ পানি বিশেষভাবে স্বস্তিদায়ক এবং শ্লেষ্মা প্রবাহ বৃদ্ধি করে নাকবদ্ধতা উপশমে সাহায্য করতে পারে। এজন্য সল্টি ব্রোথ ও চিকেন স্যুপের মতো তরল খাবার খেতে পারেন। গবেষণায় পাওয়া গেছে, চিকেন স্যুপ আসলেই ঠান্ডা দ্রুত উপশম করতে পারে। ওরিগন হেলথ সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটির ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান ডা. ক্যাট লিভিংস্টন বলেন, ‘আমি গরম তরল খাবার সুপারিশ করছি, কিন্তু বেশি গরম নয়- কুসুম কুসুম গরম। অনেক প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, অতি গরম তরল পানে শারীরিক ক্ষতি হয়।’

* কার্যকরী :  কুলকুচা
আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানের সাধারণ ঠান্ডার উপসর্গের চিকিৎসাবিষয়ক একটি গবেষণাপত্রের সহ-লেখক ডা. লিভিংস্টন বলেন, ‘গলাব্যথার ক্ষেত্রে লবণ পানি দিয়ে কুলকুচা সহায়ক হতে পারে।’ গলার অস্বস্তি উপশমের জন্য মায়ো ক্লিনিকের পরামর্শ হচ্ছে: অর্ধ চা-চামচ লবণ, ৮ আউন্স গ্লাসের উষ্ণ পানিতে মিশিয়ে কুলকুচা করুন।

* কার্যকরী : স্যালাইন ন্যাজাল ড্রপ, স্প্রে ও ইরিগেশন
ঠান্ডায় বন্ধ নাক খোলার জন্য নেটি পট ও ন্যাজাল ইরিগেশন সাহায্য করতে পারে, বলেন ডা. ইনকজি, যিনি সম্প্রতি আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের জন্য সাধারণ ঠান্ডার রোগীদের তথ্য হালনাগাদে সহযোগিতা করেছেন। তিনি যোগ করেন, ‘এসব জিনিসে কাজ হয় কিনা তা জানার জন্য গবেষণা হয়েছে। যদি আপনি নেটিপট ব্যবহার করেন, তাহলে এটি পরিষ্কার রাখুন এবং জীবাণুমুক্ত করার জন্য ফুটানো পানি ব্যবহার করুন।’ প্রথমে পানি ঠান্ডা হতে দিন, নিজেকে পোড়াবেন না। ওভার-দ্য-কাউন্টার স্যালাইন ড্রপ ও স্প্রেও (যা কিনতে ডাক্তারি প্রেসক্রিপশন লাগে না) নাকের অতিরিক্ত শ্লেষ্মা অথবা বন্ধ নাক উপশমে সাহায্য করতে পারে। যদি আপনি ওভার-দ্য-কাউন্টার ডিকনজেস্ট্যান্ট ড্রপ বা স্প্রে বেছে নেন, তাহলে তা পাঁচদিনের বেশি ব্যবহার করবেন না।

* কার্যকরী : ওভার দ্য কাউন্টার ঠান্ডা ও কাশির ওষুধ
অনেক উৎপাদক যে ঠান্ডার জন্য সমন্বয়কৃত ড্রাগ থেরাপি অফার করে তার পেছনে কারণ রয়েছে। ডা. লিভিংস্টন বলেন, ‘কিছু প্রমাণ রয়েছে যে অ্যান্টিহিস্টামিন ও ডিকনজেস্ট্যান্টের সমন্বয় প্রদাহ হ্রাসে সাহায্য করতে পারে।’ তিনি ব্যাখ্যা করেন, ঠান্ডার উপসর্গের চিকিৎসায় অ্যান্টিহিস্টামিন নিজে নিজে কার্যকর নয়, কিন্তু ডিকনজেস্ট্যান্টের সমন্বয়ে এটি উপসর্গ উপশম করতে পারে যদি আপনি এই অসুস্থতার শুরুর দিকে এটি শুরু করেন।

* কার্যকরী : ওভার দ্য কাউন্টার ব্যথানাশক ওষুধ 
অ্যাসিটামিনোফেন (টাইলিনল) অথবা ইবুপ্রোফেন (অ্যাডভিল) ঠান্ডার ভাইরাসকে পরাজিত করার জন্য কিছু করতে পারে না, কিন্তু তারা আপনাকে ভালো অনুভবে সাহায্য করতে পারে যদি আপনার ঠান্ডার সঙ্গে মাথাব্যথা অথবা মাংসপেশী ব্যথা থাকে। ডা. ইনকজি বলেন, ‘দৈনিক সুপারিশকৃত পরিমাণের বেশি সেবন করবেন না এবং আপনার কোন ধরনের মেডিক্যাল কন্ডিশন আছে ও অন্যান্য কোন ওষুধ গ্রহণ করছেন তা বিবেচনা করুন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার কিডনি রোগ থাকে, তাহলে ন্যাপ্রোক্সেন অথবা ইবুপ্রোফেন সেবন ভালো আইডিয়া নয়।’ সতর্কতার সঙ্গে লেবেল পড়ুন। অনেক ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধ হলো ড্রাগের সমন্বয়, তাই যদি আপনি একসঙ্গে ব্যথানাশক ও ঠান্ডার প্রতিষেধক গ্রহণ করেন, তাহলে অ্যাসিটামিনোফেন অথবা অন্য অ্যানালজেসিকের দ্বিগুণ পরিমাণ গ্রহণের সম্ভাবনা থাকে।

* সম্ভবত কার্যকরী : হিউমিডিফাইয়ার ও ভ্যাপোরাইজার
হিটেড অথবা হিউমিডিফাইয়েড বায়ুর একটি ২০১৭ সালের মেডিক্যাল রিভিউ অনুসারে, বর্তমান প্রমাণ বলছে যে হিটেড বা হিউমিডিফাইয়েড বায়ুর ব্যবহারে কোনো উপকারিতা অথবা ক্ষতি নেই। তাই আপনি এটি ব্যবহার করতে পারেন যদি ভালো অনুভব করেন। অনেক লোক বলে যে বায়ুতে ময়েশ্চার সংযোজন ইরিটেটেড নাসিকাপথ অথবা নাক বন্ধ হ্রাসে সাহায্য করতে পারে। মায়ো ক্লিনিকের পরামর্শ হচ্ছে: যদি আপনি এটি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে কুল-মিস্ট হিউমিডিফাইয়ার অথবা ভ্যাপোরাইজার ব্যবহার করুন, প্রতিদিন পানি পরিবর্তন করুন এবং ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের গ্রোথ প্রতিরোধের জন্য নির্দেশিকা অনুসারে ডিভাইসকে পরিষ্কার রাখুন।

* সম্ভবত কার্যকরী : মধু
ডা. ইনকজি বলেন, ‘জনশ্রুতি আছে যে মধু ঠান্ডার উপসর্গ উপশম করতে পারে, কিন্তু আমি এটিকে বড় ধরনের ইমিউন বুস্টার মনে করি না।’ অনেক লোক গলাব্যথা ও কফ উপশমের জন্য মধুর ওপর জোর দেন। যদি আপনি মধুতে ভালো অনুভব করেন, তাহলে এটি আপনার চায়ে যোগ করতে পারেন। এক বছরের কম বয়সের শিশুদের মধু খাওয়াবেন না।

* সম্ভাবত কার্যকরী : জিংক
কিছু প্রমাণ রয়েছে যে, জিংকের বড়ি ঠান্ডার স্থায়িত্ব একদিন বা এর বেশি কমাতে পারে, যদি আপনি প্রথম উপসর্গের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এটি সেবন করেন। ইউনিভার্সিটি অব হেলসিনকির একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় পাওয়া যায় যে, জিংকের বড়ি সেবনে ঠান্ডার স্থায়িত্ব গড়ে এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস পায়। কিন্তু প্রথম উপসর্গ প্রকাশ পাওয়ার একদিন পর জিংক গ্রহণ করার প্রয়োজন নেই, কারণ এটি তখন কাজ করার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এছাড়া অনেক লোকের জিংক সেবনে বমিবমি ভাব এবং স্বাদ ও ঘ্রাণে পরিবর্তনের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। নিশ্চিত হোন যে সঠিক পরিমাণে জিংক সেবন করছেন। ডা. লিভিংস্টন বলেন, ‘জিংক কখনো নাকে প্রয়োগ করবেন না। এটি ঘ্রাণ নেওয়ার ক্ষমতাকে চিরতরের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।’

* বিরত থাকুন: ভিটামিন সি
যদি আপনার ইতোমধ্যে ঠান্ডা লেগে থাকে, তাহলে ভিটামিন সি গ্রহণের কোনো প্রয়োজন নেই- এটি আপনার উপসর্গ দূর করবে না অথবা আপনাকে ঠান্ডা থেকে দ্রুত মুক্তি দেবে না। আপনি নিয়মিত ভিটামিন সি সেবন করলেও তা আপনার ঠান্ডা প্রতিরোধ করতে পারবে না। ডা. লিভিংস্টোন বলেন, ‘যদি আপনি ঠান্ডা লাগা অবস্থায় ভিটামিন সি সেবন করতে থাকেন, আপনার ঠান্ডার স্থায়িত্ব একদিন কমে যেতে পারে।’ মনে রাখবেন যে, ভিটামিন সি’র মেগাডোজ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। ১০০০ মিলিগ্রাম ডোজের ভিটামিন সি ১৪টি কমলার ভিটামিন সি’র সমান এবং আপনার শরীর এত পরিমাণ ভিটামিন সি হ্যান্ডেল করতে পারবে না।

* বিরত থাকুন :  অ্যালকোহল
অনেকে ঠান্ডার প্রতিষেধক হিসেবে চায়ে হুইস্কি মেশায়, কিন্তু আপনার এই ঘরোয়া চিকিৎসা এড়িয়ে চলা উচিত। ডা. ইনকজি বলেন, ‘আমি মনে করি না যে এতে কোনো উপকার হবে, বরং এতে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’ তিনি যোগ করেন, ‘অ্যালকোহল ডিহাইড্রেটিং হতে পারে, কোনো ডিউরেটিকের মতো। এটি কিছু ঠান্ডার ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ এটি অ্যান্টিহিস্টামিনের মতো সিডেটিভ। অ্যালকোহল ও অ্যান্টিহিস্টামিনের সমন্বয় আপনার মধ্যে নিন্দ্রালু ভাব আনবে, যার ফলে আপনি পড়ে যেতে পারেন।’

* বিরত থাকুন : অ্যান্টিবায়োটিক
ঠান্ডা লাগলে কখনো অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করবেন না। ডা. ইনকজি বলেন, ‘যখন আপনার ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন থাকবে তখন অ্যান্টিবায়োটিক চমৎকার কাজ করবে, কিন্তু ঠান্ডা কখনোই ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন নয়। এটি ভাইরাল।’ তিনি যোগ করেন, ‘যদিও অনেকে ঠান্ডার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে গেলে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রেসক্রিপশন পেয়ে থাকে। কিন্তু প্রয়োজনের বাইরে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করলে ব্যাকটেরিয়া ওষুধের প্রতি রেজিস্ট্যান্ট হওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। আমরা অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে সুপারবাগ (যে ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না) সৃষ্টি করছি। যখন আপনি ঠান্ডার সমস্যায় পড়বেন, চিকিৎসকের কাছে না যাওয়ার জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করুন। চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে আপনাকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করা হতে পারে।’ চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে ঘরে বিশ্রাম নিন- এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যে আপনার উপসর্গ সেরে ওঠবে। যদি দুই সপ্তাহ পরও আপনার ঠান্ডা লেগে থাকে, তাহলে মেডিক্যাল সেবার অনুসন্ধান করুন।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন :



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ নভেম্বর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়