ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘শীত যত বেশি, বিক্রি তত বেশি’

জুনাইদ আল হাবিব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫০, ২২ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘শীত যত বেশি, বিক্রি তত বেশি’

জুনাইদ আল হাবিব : সকাল গড়িয়ে দুপুর। এরপর বিকেল, পরপর নেমে আসে সন্ধ্যা। ব্যস্তময় সড়কের একপাশে ভ্রাম্যমাণ ভ্যানের ওপর বাদাম, বুট, মটর, চাল আর গম নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় বিক্রেতা কুতুব আলীকে। নিজের ভ্যান গাড়ির ওপরেই বিশেষ ব্যবস্থায় আগুন জ্বালিয়ে হালকা ভেজে বিক্রি করছেন এসব মুখরোচক খাবার। হালকা গরমে যা বেশ টাটকা বনে যায়। ব্যাপক শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে এসব খাবার শুধু হাত গরম করে না বরং গরম হয়ে যায় পুরো শরীর। তাই তিনি আগুনে ওগুলো ভেজে ক্রেতাদের হাতে তুলে দিয়ে তাদের তৃপ্তি মেটান। বলছিলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা কুতুব আলীর কথা।

তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কুতুব আলীর এই ভ্রাম্যমাণ ব্যবসার কাজটা কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নয়। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের তোরাবগঞ্জ বাজারে কুতুব আলী এমন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। লক্ষ্মীপুর টু রামগতি আঞ্চলিক মহাসড়কের একপাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এভাবেই অবিরাম বাদাম, বুট, মটর, চাল ও গম ভাজা বিক্রি করে ক্রেতাদের তৃপ্তি মেটাচ্ছেন। এমন মুহূর্তও আসে যে ক্রেতাদের সামাল দিতে তাকে হিমশিম খেতে হয়।

কুতুব আলীর বয়স ৩৫ পার হয়েছে। সংসারে রয়েছে তিন ছেলে ও তিন মেয়ে। মাহমুদা, তামান্না, আন্না, রোয়েল, রবিন ও হৃদয় তার সন্তান। এর তামান্না ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। ছেলেদের একজনকে মাদ্রাসায় পড়ায়। কিন্তু কিসে পড়ে? তা বলতে পারলেন না। তবে চেষ্টা করেন সবার মুখে দু’মুঠো ভাত ঠিকমতো তুলে দেয়ার।

কুতুব আলী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাসিন্দা হলেও তিনি কুমিল্লা ও লক্ষ্মীপুরে এসে এসব বিক্রি করছেন। তার ভাষায়, ‘শীত যত বেশি, বিক্রি তত বেশি। শীতে বাদাম, বুট, মটর, চাল-গম ভাজা চলে বেশি। এদিকে শীত ওদিকের চেয়ে বেশি। আর এদিকের মানুষ এসব খাইতে পছন্দ করে। তাই নিয়া আইছি। প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ করে ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা বেচতে পারি। এর মধ্যে নিজের খাওয়ার খরচ বাদ দিলে দৈনিক ৫০০ টাকা আয় থাকে। আর সেখান থেকে মাসে বাসা ভাড়া যায় ৬০০ টাকা।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সড়াইল থানার রাজাপুর গ্রামের ইউনুছ আলীর ছেলে কুতুব আলী। কুতুব আলী বললেন, ‘গৃহস্থালি করি, এইডাও করি। দুই বছর ওইবো এই কাজ করছি। প্রথমে এলাকাতে, তারপর কুমিল্লা এখন লক্ষ্মীপুরে। পোলাইন-সাবাইন সেখানেই থাকে। আমি মাঝে মাঝে যাই।’

কিন্তু কুতুব আলীর এমন কাজটা মানুষের চোখে সে কেমন দেখে? প্রশ্নটা তার কাছেই করা হলো। জবাবে কুতুব আলী বলছিলেন, ‘আমার কাজকে এখানকার মানুষ ভালোভাবেই দেখে। সবাই বুট, বাদাম খেতে চাইলে আমার কাছে কিনতে আসে। ৫ টাকা, ১০ টাকা দিয়ে যে যেটাই কিনতে চায়, আমি বেচি।’

‘এ ব্যবসা থেকে আরও আয়-রোজগার করে বড় কোনো ব্যবসা শুরু করব। যাতে সংসার ভালো চালাতে পারি।’ নিজের স্বপ্ন তুলে ধরে বলছিলেন কুতুব আলী।

পড়ুন:  * শীত তাড়াতে জনপ্রিয় রসুয়া-জিলাপি! 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ ডিসেম্বর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়