ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ঘরোয়া কিছু চিকিৎসার নতুন উপকারিতা (প্রথম পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৮, ১০ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঘরোয়া কিছু চিকিৎসার নতুন উপকারিতা (প্রথম পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল : বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন ধরনের ঘরোয়া চিকিৎসা প্রয়োগ করে থাকি। অনেক ঘরোয়া চিকিৎসার প্রচলন দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসছে। এসব ঘরোয়া চিকিৎসা স্বাস্থ্য সমস্যা উপশমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, যেমন- ক্র্যানবেরি জুস মূত্রনালীর সংক্রমণের জ্বালাপোড়া হ্রাস করে, মধু গলাব্যথা কিংবা কাশি প্রশমন করে এবং ওটমিল একজিমার তীব্রতা কমায়। প্রচলিত উপকারিতা ছাড়াও কিছু ঘরোয়া চিকিৎসায় নতুন উপকারিতা পাওয়া গেছে। নতুন উপকারিতা পাওয়া গেছে এমন ১৪টি ঘরোয়া চিকিৎসা নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

* ক্র্যানবেরি জুস
প্রচলিত ব্যবহার : মূত্রনালীর সংক্রমণের জ্বালাপোড়া কমায়।
নতুন ব্যবহার : রক্তচাপ হ্রাস করে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের একটি সভায় উপস্থাপিত গবেষণা অনুসারে, যেসব লোক দুই মাস ধরে নিম্ন-ক্যালরির ক্র্যানবেরি জুস পান করেছিল তাদের রক্তচাপ গড়ে তিন পয়েন্ট কমে গিয়েছিল (বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, এমনকি অল্প রক্তচাপ কমে যাওয়াও আপনার হার্টের জন্য ভালো হতে পারে), কিন্তু যারা প্ল্যাসেবো পানীয় পান করেছিল তাদের রক্তচাপের সংখ্যায় কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। অন্য একটি গবেষণায় ক্র্যানবেরি জুসের শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের সঙ্গে নিম্ন রক্তচাপের সংযোগ পাওয়া গেছে।

* মধু
প্রচলিত ব্যবহার : কাশি বা গলাব্যথা উপশম করে।
নতুন ব্যবহার : ক্যানকার (মুখের ভেতরে ঘা) ক্ষত প্রশমন করে। সৌদি আরবের একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, যেসব লোক এসব জ্বালাতনকারী ক্ষতে মধু লাগিয়েছিল তাদের ব্যথা কমে গিয়েছিল এবং তাদের ক্ষত যারা অন্যান্য চিকিৎসা নিয়েছিল (যেমন- স্টেরয়েড ক্রিম এবং ওভার-দ্য-কাউন্টার ক্যানকার সোর পেস্ট যা প্রতিরক্ষামমূলক বেষ্টনি তৈরি করে) তাদের তুলনায় দ্রুত সেরে ওঠেছিল। মধু ব্যবহারকারী লোকেরা জানিয়েছিল যে দুইদিন পর তাদের ব্যথা সম্পূর্ণরূপে চলে গিয়েছিল, কিন্তু অন্যান্য ঘরোয়া চিকিৎসায় ভালো অনুভব করতে আটদিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। গবেষকরা ধারণা করছেন যে, মধুর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান ব্যথা কমাতে ও নিরাময় দ্রুত করতে সাহায্য করে।

* লেবুর রস
প্রচলিত ব্যবহার : চুল উজ্জ্বল করে।
নতুন ব্যবহার : কিডনি পাথর প্রতিরোধ করে। লেবুর রসে বিদ্যমান যে শক্তিশালী সাইট্রিক অ্যাসিড চুলকে উজ্জ্বল করে তা ক্যালসিয়াম বের হয়ে যাওয়াও হ্রাস করে এবং কিডনিতে পাথর গঠন ঠেকাতে সাহায্য করতে পারে। প্রতিদিন লেমন জুস বা লেবুর রস (সামান্য চিনি মেশাতে পারেন) পানে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।

* ওটমিল
প্রচলিত ব্যবহার : একজিমা ও অন্যান্য ত্বকের সমস্যা প্রশমন করে।
নতুন ব্যবহার : হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করে। অনেক বছর ধরে একজিমার মতো ত্বকের সমস্যার ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে এই খাবার দিয়ে গোসলের প্রচলন হয়ে আসছে (কারণত এতে শক্তিশালী স্কিন-প্রোটেক্ট্যান্ট ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে)। কিন্তু এই ত্বকের সমস্যা প্রশমনকারীটি এর চেয়েও বেশি উপকার করে যা আপনি এটি খেয়ে পেতে পারেন। ২ ডে ডায়াবেটিস ডায়েটের লেখক রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ান ইরিন পালিনস্কি-ওয়েড বলেন, ‘ওটসে ফাইবার ও বিটা গ্লুকান থাকে যা উল্লেখযোগ্যভাবে বিপজ্জনক এলডিএল-কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে। যেহেতু উচ্চ এলডিএল মাত্রা হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে, তাই নিয়নিত ওটমিল ভোজন কোলেস্টেরল ও ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।’

* দুগ্ধজাত খাবার
প্রচলিত ব্যবহার : হাড় মজবুত করে।
নতুন ব্যবহার : পিএমএস বা প্রিমেন্সট্রুয়াল সিন্ড্রোমের উপসর্গ উপশম করে। ডেইরি ফুডস বা দুগ্ধজাত খাবার ও গাঢ় পাতাযুক্ত শাকসবজিতে বেশি মাত্রায় ক্যালসিয়াম থাকে যা পেটফাঁপা, ক্ষুধা অনুভব, মাথাব্যথা ও খিটখিটে মেজাজের মতো পিএমএসের উপসর্গ হ্রাস করতে পারে। আপনি ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্টও খেতে পারেন। একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব নারী দুই মাস ধরে প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খেয়েছিল তাদের পিএমএসের উপসর্গ প্ল্যাসেবো নেওয়া নারীদের তুলনায় বেশি হ্রাস পেয়েছিল।

* কলা
প্রচলিত ব্যবহার : ডায়রিয়া থামায়।
নতুন ব্যবহার : কিডনির স্বাস্থ্য উন্নত করে। কলা হচ্ছে ব্রাট (BRAT বা Banana, Rice, Applesauce ও Toast) ডায়েটের চার ঘরোয়া চিকিৎসার একটি যা সাধারণত ডায়রিয়া বন্ধ করার জন্য পাতলা মলকে গাঢ় করতে এবং অন্ত্রের নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এসব পটাশিয়াম সমৃদ্ধ শক্তিঘর কিডনি রোগ হ্রাস এবং কিডনির সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করতে পারে বলেও গবেষণায় পাওয়া গেছে। পালিনস্কি-ওয়েড বলেন, ‘সুস্থ লোকদের মধ্যে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের (যেমন- কলা) ডায়েট রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, যা কিডনি সুস্থ রাখতে সহায়ক। যেহেতু উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে কিডনির কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ার সম্পর্ক রয়েছে, তাই কিডনির স্বাস্থ্য ধরে রাখার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত রক্তচাপের মাত্রা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।’ মনে রাখবেন যে, যেসব লোকের ইতোমধ্যে নিম্ন কিডনি কার্যক্রম রয়েছে তাদের পটাশিয়াম গ্রহণের মাত্রা সম্পর্কে সতর্ক থাকার প্রয়োজন রয়েছে, যাতে তারা কলা খাওয়া সীমিত করতে পারেন।

* বেকিং সোডা
প্রচলিত ব্যবহার : বুকজ্বালা কমায়।
নতুন ব্যবহার : রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস উপশম করে। একটি বহুমুখী ঘরোয়া চিকিৎসা হচ্ছে সোডিয়াম বাইকার্বনেট বা বেকিং সোডা। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী অ্যান্টাসিড (কারণ, এতে রয়েছে ক্ষারীণ উপাদান)। কিন্তু আপনি এটি দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য এবং গন্ধ প্রশমক বা ওডার নিউট্রালাইজার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। নতুন গবেষণা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, এটি রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো দশার প্রদাহ হ্রাসে সাহায্য করতে পারে। অগাস্টা ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব ফিজিওলজির রেনাল ফিজিওলজিস্ট পল ও’কনর বলেন, ‘এটি সেই ইমিউন রেসপন্স কমাতে পারে যা শরীরকে এটির নিজের টিস্যুকে আক্রমণ করতে উদ্বুদ্ধ করে। এটি সম্ভবত প্রদাহ জনিত রোগ নিরাময়ের জন্য একটি নিরাপদ উপায়।’

(আগামী পর্বে সমাপ্য)

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১০ জানুয়ারি ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়