ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

শিশুর দুধ দাঁত সংরক্ষণ করার জীবন রক্ষাকারী কারণ

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৮, ৩০ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিশুর দুধ দাঁত সংরক্ষণ করার জীবন রক্ষাকারী কারণ

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : দুধ দাঁত নিয়ে অনেক গল্প প্রচলিত আছে। বিভিন্ন দেশের শিশুরা পড়ে যাওয়া দুধ দাঁত নিয়ে বিভিন্ন কিছু করে থাকে, কারণ তারা প্রচলিত বিভিন্ন গল্পে বিশ্বাস করে।

আমেরিকান শিশুরা বিশ্বাস করে যে পড়ে যাওয়া দুধ দাঁত বালিশের নিচে রেখে দিলে দাঁত পরী এসে তা নিয়ে যাবে, বিনিময়ে পরী বালিশের নিচে কিছু অর্থ রেখে যাবে। তবে অনেক দেশে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত গল্পটি হচ্ছে, ইঁদুরের জন্য দাঁত রেখে দেওয়া। শিশুরা বিশ্বাস করে যে ইঁদুরের জন্য দাঁত রেখে দিলে তাদেরও ইঁদুরের মতো শক্ত দাঁত ওঠবে। দেশে দেশে দুধ দাঁত নিয়ে গল্প যাই হোক, নতুন একটি গবেষণায় দুধ দাঁত সংরক্ষণ করার মতো কারণ পাওয়া গেছে।

পূর্বের একটি গবেষণায় পাওয়া যায় যে, দুধ দাঁত দেখে শিশুর অটিজম শনাক্ত করা যেতে পারে। কিন্তু নতুন গবেষণাটি বলছে, শিশুর দুধ দাঁত এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারে- শিশুর দুধ দাঁত দেখে গবেষক ও পিতামাতারা কিছু বিষয়ে ধারণা পেতে পারে। এ গবেষণাটি অনলাইনে প্রসিডিংস অব ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে এবং এ গবেষণার প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডেন্টাল অ্যান্ড ক্র্যানিওফেসিয়াল রিসার্চ।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পিতামাতারা আশা করতে পারে যে ছয় বছর বয়স থেকে তাদের সন্তানের দুধ দাঁত পড়তে থাকবে- এসব দাঁত শিশুর মুখকে প্রাপ্তবয়স্ক দাঁতের জন্য প্রস্তুত করলেও এদেরকে তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয় না। কিন্তু গবেষকরা বলছে যে এসব দাঁতে প্রচুর স্টেম কোষ থাকে যা গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।

কোনো শিশুর দুধ দাঁত পড়ে যাওয়ার পর সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য এসব দাঁতের স্টেম কোষ বেঁচে থাকে। এসব স্টেম কোষ প্রাপ্তবয়স্ক দাঁতের স্টেম কোষের তুলনায় অসাধারণ, বেশি সময় বাঁচে এবং কালচারে দ্রুত বিকশিত হয়। গবেষকরা আশা করছেন যে, ল্যাবরেটরির সহায়তায় এসব স্টেম কোষ থেকে বিশেষায়িত দন্ত কোষ, অস্থি কোষ ও স্নায়ুকোষ সৃষ্টি করা যেতে পারে।

তবে এসব স্টেম কোষ আসলেই দাঁতের ক্ষয় মেরামত, হাড়ের পুনর্গঠন এবং নিউরাল ইনজুরি বা স্নায়ুরোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যাবে কিনা তা নিশ্চিত হতে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

চিকিৎসকরা এত বছর ধরে সফলতার সঙ্গে নাভিরজ্জুর রক্ত থেকে স্টেম কোষ সংগ্রহ করে আসছেন, বলেন এনআইএইচের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডেন্টাল অ্যান্ড ক্র্যানিওফেসিয়াল রিসার্চের বিজ্ঞানী এবং এ গবেষণার অন্যতম সিনিয়র লেখক সংগটাও শি। তিনি যোগ করেন, ‘আমাদের আবিষ্কারটি কিছু ক্ষেত্রে একই এবং দুধ দাঁতের এসব স্টেম কোষ শিশুর বিকাশ প্রক্রিয়ার সুপ্ত অংশ।’

এ গবেষণাটি ডা. শি’র ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ফল। তার ছয় বছর বয়সি কন্যার একটি দুধ দাঁত পড়ে যাওয়ার পর তিনি এটা পরীক্ষা করে পেয়েছেন যে দাঁতটির ভেতর তখনো লাল রঙের জীবন্ত টিস্যু ছিল। তিনি তার ল্যাবরেটরিতে দাঁতটিকে আরো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং দেখেন যে দাঁতটিতে পাল্প টিস্যুর কিছু অংশ রয়েছে। তার কন্যার আরেকটি দাঁত পড়লে তিনি দাঁতটিকে লিকুইড মিডিয়ামে রাখেন এবং তার ল্যাবরেটরিতে পাল্পটিকে অপসারণ করেন। পাল্পটি অপসারণের পর তিনি আবিষ্কার করেন যে পাল্পটি থেকে জীবন্ত স্টেম কোষ আলাদা করা যাবে।

এ আবিষ্কারের ওপর ভিত্তি করে গবেষকরা শিশুদের একটি বড় দলের ওপর গবেষণা চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। তারা প্রত্যেকটি দাঁতে ১২ থেকে ২০টি স্টেম কোষ দেখেন, যা কোলনাইজেশন ও কালচার গ্রোথে ব্যবহার করা যেতে পারে। গবেষকরা উল্লেখ করেন যে, এ আবিষ্কারের ওপর ভিত্তি করে আরো গবেষণা প্রয়োজন, কিন্তু তাদের প্রাথমিক প্রমাণ দুধ দাঁতের সম্ভাব্য ব্যবহারের জন্য আশাপ্রদ।

শি বলেন, ‘এসব উপাত্ত কেবলমাত্র শুরু। আমরা আরো স্পষ্টভাবে জানতে চেষ্টা করছি যে এসব স্টেম কোষ থেকে কোন ধরনের কোষ উৎপাদন করা যাবে। এসব স্টেম কোষ থেকে শুধুমাত্র স্নায়ুকোষ তৈরি করা যাবে? আমাদেরকে এ বিষয়ে জানতে হবে। আমরা প্রাপ্তবয়স্ক দাঁতের পাল্প স্টেম কোষ এবং দুধ দাঁতের পাল্প স্টেম কোষের পার্থক্য নির্ণয়েও আগ্রহী।’

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ জানুয়ারি ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়