ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

ঘুম বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর (শেষ পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঘুম বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর (শেষ পর্ব)

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : ভালো ঘুমের অনেক উপকারিতা রয়েছে। গবেষণা বলছে যে, পর্যাপ্ত ঘুম জীবনের আয়ু ও সুখ বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে, যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে তাদের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। ঘুম বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ১৪টি প্রশ্নের উত্তর নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে শেষ পর্ব।

* অতিরিক্ত ঘুমের লক্ষণ কি?
বেশি সবসময় ভালো নয়: নিয়মিত নয় ঘণ্টার বেশি ঘুমের সঙ্গে মাথাব্যথা, পিঠ ব্যথা, স্থূলতা ও ডায়াবেটিসের সম্পর্ক পাওয়া গেছে। কিন্তু ওভারস্লিপ বা অতিঘুমের চেয়ে বরং অন্তর্নিহিত কারণেও (যেমন- বিষণ্নতা, অ্যালকোহলের অপব্যবহার ও নারকোলেপ্সি বা ঘুমে আচ্ছন্ন হওয়ার প্রবণতা) এসবের ঝুঁকি বাড়তে পারে। যেকারণেই এসব লক্ষণের প্রকাশ হয়ে থাক না কেন, আপনার চিকিৎসককে জানান।

* বিছানা শেয়ারের সেরা উপায় কি?
ঘুমের ক্ষেত্রে শয্যাসঙ্গী থাকার সুবিধা ও অসুবিধা দুটোই রয়েছে। শয্যাসঙ্গীর যে আচরণগুলো আপনার কাছে অসুবিধার মনে হতে পারে তার মধ্যে নাকডাকা, রোলিং ওভার বা ঘনঘন অবস্থানের পরিবর্তন বা কুণ্ডলী পাকিয়ে শোয়া এবং কম্বল নিয়ে টানাটানি উল্লেখযোগ্য। অবজেক্টিভ ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে স্লিপ কোয়ালিটি পরিমাপ করলে একাকী ঘুমানোর উপকারিতা বেশি। একটি অবজেক্টিভ ক্রাইটেরিয়া হলো স্লো-ওয়েভ-স্লিপের (এটি হলো ঘুমের তৃতীয় পর্যায় যা নন-র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট স্লিপের সবচেয়ে গভীর পর্যায়) পরিমাণ, যা মেমোরিকে উন্নত করার চাবিকাঠি। অন্যদিকে প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমালে মন অধিক তৃপ্ত হয়, এটি অক্সিটোসিন নিঃসরণ করে- অক্সিটোসিন হলো একটি ভালো অনুভ হরমোন, যা স্ট্রেস কমায় এবং সম্পর্কের বন্ধনকে দৃঢ় করে। অসুবিধা কমিয়ে সঙ্গীর সঙ্গে ঘুমিয়ে সর্বোচ্চ উপকারিতা পেতে চান? তাহলে দুজনের জন্য যথেষ্ট বড় ম্যাট্রেস কিনুন এবং সঙ্গীর নড়াচড়া জনিত সমস্যার জন্য মেমোরি ফোম বেছে নিন- এর ফলে নড়াচড়া কম অনুভব হবে। এছাড়া আপনাদের সম্পর্ককে শিখরে তোলার চেষ্টা করুন। মন্দ ঘুমের সঙ্গে নিম্ন সম্পর্ক-সন্তুষ্টির সংযোগ পাওয়া গেছে।

* ঘুমের পূর্বে ফোন ব্যবহার বন্ধ করার প্রয়োজন কি আসলেই রয়েছে?
মোবাইলের নীল আলো দিনে মেজাজ ও শক্তি বুস্ট করলেও এটি রাতে আপনার সার্কাডিয়ান ক্লককে (দেহঘড়ি) বিঘ্নিত করতে পারে। আমাদের অধিকাংশই পূর্বের তুলনায় বেশি নীল আলো এক্সপোজ করে থাকে, কারণ বর্তমানে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ ও এলইডি লাইট বাল্বের প্রচলন বেশি- এসব ডিভাইস তাদের কম শক্তিসম্পন্ন পূর্বসূরীদের তুলনায় বেশি নীল আলো ছড়াচ্ছে। ইনসমনিয়ার ভুক্তভোগীদের ওপর চালানো কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টারের গবেষণা সাজেস্ট করছে যে, আপনার রাতে স্ক্রিন টাইম কমানো উচিৎ, যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে অ্যাম্বার-টিন্টেড চশমা পরুন।

* বয়স্ককালে ঘুমের অভ্যাস পরিবর্তন করা উচিৎ?
আপনি ৬৫ বছর বয়সে ২০ বছর বয়সীর মতো ঘুমানোর প্রত্যাশা করতে পারেন না। আপনি স্বল্প সময়ের জন্য ঘুমাবেন এবং আপনার ঘুম ততটা গভীর হবে না। এছাড়া স্ট্রেস বা কোলাহলের মতো বিষয়ে সংবেদনশীল হবেন, যা অল্প বয়সে আপনার ঘুমকে তেমন একটা ব্যাহত করত না। একারণে আপনাকে এ বয়সে বিশ্রামের ব্যাপারে যত্নশীল হতে হবে। বয়সজনিত এসব পরিবর্তন বয়স্ক লোকদের জাগ্রত জীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। কোনোকিছুর স্বাভাবিকতার মানে এই যে করুণ পরিণতি হতে যাচ্ছে না, কিন্তু বয়স্ককালে শরীরের অনেক সিস্টেম স্বাভাবিক থাকতে পারে না। স্লিপ কোয়ালিটি হ্রাস পেলে মেমোরি ও সার্বিক স্বাস্থ্য বিরূপভাবে প্রভাবিত হয়। বিজ্ঞানীরা বয়স্কদের ঘুমের দৈর্ঘ্য, ঘুমের গভীরতা কিংবা স্লিপ কোয়ালিটি বৃদ্ধি করতে চিকিৎসা ডেভেলপের জন্য কাজ করছেন, কিন্তু তারা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। উদাহরণস্বরূপ, ঘুমের গভীরতা বাড়াতে গবেষকরা ট্রান্সক্রেনিয়াল স্টিমিউলেশন নিয়ে গবেষণা করছেন, বলেন কানাডিয়ান স্লিপ অ্যান্ড সার্কাডিয়ান নেটওয়ার্কের পরিচালক জুলি কেরিয়ার। তিনি যোগ করেন, কিন্তু আমরা এখনো নিশ্চিত নই যে এটি কাজ করে কিনা। স্লিপিং পিল বা ঘুমের ওষুধের ক্ষেত্রে, পরেরদিন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি ছাড়াই ঘুম ও ঘুমের গভীরতা বৃদ্ধি করে এমন কোনো ফার্মাসিউটিক্যাল নেই। ডা. কেরিয়ার বলেন, ‘ক্লান্ত বয়স্কদের জন্য দিনে ন্যাপ বা স্বল্প সময়ের জন্য ঘুম ঠিক আছে, যদি না তা রাতে ইনসমনিয়ার কারণ হয়।’ তিনি যোগ করেন, ‘বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ঘুমের ব্যাধি বিকশিত হতে পারে। যদি আপনি সারাদিন ক্লান্তি অনুভব করেন, তাহলে এটি স্বাভাবিক, প্রত্যাশিত বয়সজনিত পরিবর্তন নয়- এটি নিশ্চিতভাবে আপনাকে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার জন্য ইঙ্গিত দিচ্ছে।’

* কোন কোন খাবারে ক্যাফেইন গোপন থাকে?
একটি সর্বাধিক পরিচিত ঘুম ব্যাহতকারী হলো ক্যাফেইন, যা আপনার অজান্তে আপনার শরীরে প্রবেশ করতে পারে- কারণ, কিছু কিছু খাবারে ক্যাফেইন গোপন থাকে। ইউরোপিয়ান স্লিপ রিসার্চ সোসাইটির সদস্য নিল স্ট্যানলি বলেন, এটি স্বাদবিহীন, তাই আপনি অবধারিতভাবে জানবেন না যে কতটুকু ক্যাফেইন গ্রহণ করছেন। এটি আপনার শরীরে থেকে কয়েক ঘণ্টা ধরে আপনাকে প্রভাবিত করতে পারে, যদি আপনি এটির প্রতি সংবেদনশীল হন। কম জ্ঞাত ক্যাফেইন উৎসের মধ্যে চকলেট, সফট ড্রিংকস (যেমন- সোডা ও কিছু ভিটামিন পানীয়) এবং ডিক্যাফ কফি (এতে অল্প পরিমাণে ক্যাফেইন থাকে) উল্লেখযোগ্য।

* ঘুম আনে এমন কোনো খাবার আছে?
একটি জনপ্রিয় বিশ্বাস হলো অ্যামিনো অ্যাসিড ট্রাইপ্টোফ্যান ঘুম আনতে সাহায্য করে। শিথিলকারক নিউরোট্রান্সমিটার সেরোটোনিন এবং ঘুম নিয়ন্ত্রক হরমোন মেলাটোনিন উৎপাদনের জন্য আপনার শরীরের এটি প্রয়োজন। কিন্তু শুধু এটি নিজেই ঘুমকে প্ররোচিত করতে পারে না, ঘুমের রাজ্যে হারাতে আপনাকে কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবারও খেতে হবে। কার্বোহাইড্রেট ট্রাইপ্টোফ্যানকে ব্লাড-ব্রেইন বেরিয়ার ক্রস করতে সাহায্য করে এবং ঘুমকে প্ররোচিত করে।

* ঘুমের সময় কি হোয়াইট নয়েজ শোনা উচিৎ?
এটা প্রমাণিত যে হোয়াইট নয়েজ ঘুমকে ব্যাহত করে এমন পরিবেশগত কোলাহলকে লুকাতে পারে। কিন্তু ঘুম বিজ্ঞানীরা বর্তমানে হোয়াইট নয়েজের পরিবর্তে পিংক নয়েজ নিয়ে আগ্রহী। গবেষণার প্রমাণ বলছে যে, পিংক নয়েজ স্লো-ওয়েভ স্লিপ বৃদ্ধি করতে পারে। ২০১৭ সালের একটি গবেষণায় অংশগ্রহণকারী যেসব বয়স্ক লোক একরাতে ঘুমের সময় পিংক নয়েজ শুনেছিল তাদের স্লো-ওয়েভ ব্রেইন অ্যাক্টিভিটি তুলনামূলক ভালো ছিল এবং তারা স্মৃতিশক্তির পরীক্ষায়ও তুলনামূলক ভালো করেছিল। যদি আপনি পিংক নয়েজের কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে চান, তাহলে একটি পিংক নয়েজ অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারেন।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন :



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়