ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ক্যানসার রিবনের কোন রঙের কী অর্থ? (প্রথম পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১১, ৪ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ক্যানসার রিবনের কোন রঙের কী অর্থ? (প্রথম পর্ব)

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : প্রাণঘাতী রোগ ক্যানসারে কে না ভয় পায়। শরীরের কোন অংশে ক্যানসার হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে ক্যানসারের ভিন্ন ভিন্ন নামকরণ করা হয়েছে এবং বিভিন্ন ক্যানসার বোঝাতে বিভিন্ন রঙের ক্যানসার রিবনের প্রচলন রয়েছে। ক্যানসার রিবনের কোন রঙ কোন ক্যানসারকে প্রতিনিধিত্ব করে, তা নিয়ে তিন পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

* ল্যাভেন্ডার: সকল ক্যানসার
ক্যানসারের টাইপ বিবেচনা না করলে ক্যানসার রিবনের সাধারণ রঙ হলো ল্যাভেন্ডার। যদি আপনার অথবা আপনার প্রিয় কারো বিরল ক্যানসার হয়ে থাকে কিংবা যদি আপনি কোন ধরনের ক্যানসার হয়েছে তা প্রচার করতে না চান তাহলে আপনার জন্য অপশন হলো ল্যাভেন্ডার রঙের ক্যানসার রিবন।



যে কারো ক্যানসার হতে পারে, কিন্তু কিছু বিষয় রয়েছে যা আপনার ক্যানসার ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে, যেমন- ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস, ধূমপান, মদপান, নিম্নমানের ডায়েট ও সক্রিয়তার অভাব। ক্যানসারের উপসর্গ ক্যানসারের ধরনের ওপর ভিত্তি করে প্রকাশ পেয়ে থাকে। যদি আপনার শরীরে কোনো অস্বাভাবিক গোটা ওঠে অথবা হঠাৎ স্বাস্থ্যের পরিবর্তন হয় কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত উপসর্গ দেখা যায়, তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

* হলুদ: মূত্রাশয়ের ক্যানসার
ব্লাডার বা মূত্রাশয়ের ক্যানসারকে নির্দিষ্ট করে বোঝানোর জন্য এ ক্যানসারের রিবনের রঙ হলো হলুদ। প্রায় ২.৫ শতাংশ নারী ও পুরুষের জীবনের কোনো না কোনো পয়েন্টে মূত্রাশয়ের ক্যানসার হয়ে থাকে।



পঞ্চাশোর্ধ্ব লোক, পুরুষ, ধূমপায়ী এবং এ রোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকা লোকেরা এ ক্যানসারের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। মূত্রাশয়ের ক্যানসারের কমন উপসর্গের মধ্যে মূত্রে রক্ত, মূত্রত্যাগের সময় ব্যথা এবং নিচের পিঠে ব্যথা উল্লেখযোগ্য। এ ক্যানসারে আক্রান্ত ৮০ শতাংশের বেশি রোগী পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় বেঁচে থাকে।

* ধূসর: মস্তিষ্কের ক্যানসার
ব্রেইন বা মস্তিষ্ক, স্পাইনাল কর্ড ও কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে প্রাপ্ত টিউমারকে বোঝানোর জন্য ‘গ্রে-ম্যাটার’ শেড বা ধূসর রঙের ক্যানসার রিবন ব্যবহার করা হয়।  প্রায় ০.৫ শতাংশ নারী ও পুরুষ তাদের জীবনকালে এ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। ব্রেইন বা মস্তিষ্কের ক্যানসারের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকে সাদা মানুষেরা, কিন্তু এ ক্যানসার যেকোনো লিঙ্গ, যেকোনো জাতি ও যেকোনো বয়সের লোকদেরও হতে পারে। জেনেটিক্স ও রেডিয়েশনের সংস্পর্শ মস্তিষ্কের ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। অন্যান্য ঝুঁকির কারণের মধ্যে নিম্নমানের ডায়েট ও ব্যায়ামের ঘাটতি উল্লেখযোগ্য। গবেষকরা একমত যে অন্যান্য ঝুঁকির বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত আসতে আরো গবেষণার প্রয়োজন আছে।



মস্তিষ্কের ক্যানসারের কমন উপসর্গের মধ্যে তীব্র মাথাব্যথা, দৃষ্টি সমস্যা বা ভারসাম্য বজায় রাখতে অসুবিধা, বমিবমি ভাব, মাথা ঘোরা, কনফিউশন, খিঁচুনি এবং ব্যক্তিত্ব ও আচরণে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন অন্তর্ভুক্ত। এ ক্যানসারে আক্রান্ত ৩৩ শতাংশ রোগী পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় বেঁচে থাকে।

* গোলাপী: নারীর স্তন ক্যানসার
নারীর স্তন ক্যানসারের রিবনের রঙ হলো গোলাপী এবং এটি সম্ভবত সবচেয়ে পরিচিত রিবন। প্রায় ১২.৫ শতাংশ নারী তাদের জীবনকালে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে থাকে। পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী এবং কিছু জেনেটিক মার্কার বহনকারী নারীরা এ ক্যানসারের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে- একারণে এ ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস নিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা গুরুত্বপূর্ণ।



নারীর স্তন ক্যানসারের কমন উপসর্গের মধ্যে স্তনে গোটা, স্তন বা নিপলের রঙ বা গঠন পরিবর্তন এবং নিপল থেকে অস্বাভাবিক ডিসচার্জ উল্লেখযোগ্য। এ ক্যানসারে আক্রান্ত প্রায় ৯০ শতাংশ রোগী পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় বেঁচে থাকে।

* গাঢ় নীল: কোলন কোলরেক্টাল ক্যানসার
বৃহদান্ত্র ও রেক্টাম বা বৃহদান্ত্রের শেষ অংশে কোলন ও কোলরেক্টাল ক্যানসার হয়ে থাকে এবং এসব ক্যানসারের প্রতীক হচ্ছে গাঢ় নীল রঙের রিবন। প্রায় ৪.২ শতাংশ নারী ও পুরুষের জীবনকালে এসব ক্যানসার হয়ে থাকে। এই ক্যানসারের ৯০ শতাংশই হয়ে থাকে পঞ্চাশোর্ধ্ব লোকদের এবং নারীদের তুলনায় পুরুষদের বেশি হয়। অন্যান্য ঝুঁকির কারণ হিসেবে প্রদাহজনিত আন্ত্রিক রোগ, স্থূলতা, নিম্নমানের ডায়েট এবং কোলন বা মলাশয়ের ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস উল্লেখযোগ্য।



এসব ক্যানসারের কমন উপসর্গের মধ্যে মলে রক্ত, পাকস্থলিতে ক্র্যাম্প বা চলে যাচ্ছে না এমন ব্যথা এবং কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া উল্লেখযোগ্য। কোলন ও কোলরেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্ত ৬৩ শতাংশ রোগী পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় বেঁচে থাকে।

* কমলা: কিডনি ক্যানসার
কিডনি ক্যানসার ও রেনাল ক্যানসার উভয়ক্ষেত্রেই কমলা রঙের ক্যানসার রিবন ব্যবহার করা হয়। প্রায় ১.৫ শতাংশ নারী ও পুরুষের জীবনকালে এসব ক্যানসার হয়ে থাকে। কিডনি ও রেনাল ক্যানসারের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকে পঞ্চাশোর্ধ্ব লোকেরা এবং নারীদের তুলনায় পুরুষদের বেশি হয়ে থাকে। অন্যান্য ঝুঁকির কারণ হিসেবে স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ ও কিছু ব্যথার ওষুধ উল্লেখযোগ্য।



এসব ক্যানসারের কমন উপসর্গের মধ্যে মূত্রে রক্ত, পেটে গোটা, নিচের পিঠে ব্যথা, ক্লান্তি ও জ্বর উল্লেখযোগ্য। কিডনি ও রেনাল ক্যানসারে আক্রান্ত ৭৫ শতাংশ রোগী পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় বেঁচে থাকে।

(চলবে)

পড়ুন:
*
* কিডনি ক্যানসারের নীরব লক্ষণ

* যে ৯ খাবারের সঙ্গে ক্যানসারের সম্পর্ক রয়েছে
* ক্যানসারের ঝুঁকি কমানোর উপায়

 

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ মার্চ ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়