ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ক্যানসার রিবনের কোন রঙের কী অর্থ? (দ্বিতীয় পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৮, ৫ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ক্যানসার রিবনের কোন রঙের কী অর্থ? (দ্বিতীয় পর্ব)

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : প্রাণঘাতী রোগ ক্যানসারে কে না ভয় পায়। শরীরের কোন অংশে ক্যানসার হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে ক্যানসারের ভিন্ন ভিন্ন নামকরণ করা হয়েছে এবং বিভিন্ন ক্যানসার বোঝাতে বিভিন্ন রঙের ক্যানসার রিবনের প্রচলন রয়েছে। ক্যানসার রিবনের কোন রঙ কোন ক্যানসারকে প্রতিনিধিত্ব করে, তা নিয়ে তিন পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব।

* কমলা: লিউকেমিয়া
লিউকেমিয়া নামক ক্যানসারটি রক্ত বা অস্থিমজ্জাকে আক্রমণ করে এবং এ ক্যানসারটির প্রতীকী রঙ হিসেবেও কিডনি ক্যানসারের মতো কমলা রঙের রিবন ব্যবহার করা হয়। প্রায় ১.৫ শতাংশ নারী ও পুরুষের জীবনকালে এ ক্যানসার হতে পারে। পঞ্চাশোর্ধ্ব ও সাদা মানুষদের লিউকেমিয়া হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। অন্যান্য ঝুঁকির কারণের মধ্যে ধূমপান, এ রোগের পারিবারিক ইতিহাস ও বেশি পরিমাণে রেডিয়েশন এক্সপোজ করা উল্লেখযোগ্য।



অধিকাংশ ক্ষেত্রে লিউকেমিয়ার রোগীরা কোনো উপসর্গ লক্ষ্য করে না এবং রক্ত পরীক্ষায় এ ক্যানসার ধরা পড়ে। কারো কারো মধ্যে উপসর্গ প্রকাশ পেতে পারে এবং কমন উপসর্গের মধ্যে লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া, ক্লান্তি ও ভালো না লাগার সাধারণ অনুভূতি উল্লেখযোগ্য। এ ক্যানসারে আক্রান্ত ৬১ শতাংশ রোগী পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় বেঁচে থাকে।

* সবুজাভ নীল ও সাদা: সার্ভিক্যাল ক্যানসার
সার্ভিক্স বা জরায়ুর নিচের সংকীর্ণ অংশের ক্যানসার এবং অন্যান্য কিছু গাইনিকোলজিক্যাল ক্যানসারকে বোঝাতে সবুজাভ নীল ও সাদা রঙের রিবন ব্যবহার করা হয়। প্রায় ০.৬ শতাংশ নারীর জীবনকালে সার্ভিক্যাল ক্যানসার হতে পারে। অধিকাংশ সার্ভিক্যাল ক্যানসার হয়ে থাকে ত্রিশ বা ত্রিশোর্ধ্ব নারীদের এবং হিস্পানিক ও কালো নারীদের এ ক্যানসারের ঝুঁকি সামান্য বেশি। ঝুঁকির কারণের মধ্যে ধূমপান, একাধিক লোকের সঙ্গে যৌনমিলন, পাঁচ বছর বা আরো বেশি সময় ধরে হরমোনাল বার্থ কন্ট্রোলের ব্যবহার এবং তিনটির অধিক বাচ্চা নেওয়া উল্লেখযোগ্য। একটি প্রধান ঝুঁকির বিষয় হচ্ছে এইচপিভি, একারণে অল্প বয়সী প্রাপ্তবয়স্কদের টিকা নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ- এবং হ্যাঁ, আপনি প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবেও এইচপিভি টিকা নিতে পারেন।



অধিকাংশ রোগী কোনো উপসর্গের অভিযোগ করে না, বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়ে (এ রোগের সর্বাধিক চিকিৎসাযোগ্য পর্যায়)। পরবর্তী পর্যায়ে নারীরা রক্তক্ষরণ ও অস্বাভাবিক ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জের অভিযোগ করে। সার্ভিক্যাল ক্যানসারে আক্রান্ত ৬৬ শতাংশ নারী পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় বেঁচে থাকে।

* লাল ও সাদা: মাথা ও ঘাড়ের ক্যানসার
মাথা, ঘাড়, মুখ, গলা ও মুখমণ্ডলের টিউমারের প্রতীকী হিসেবে লাল ও সাদা রঙের ক্যানসার রিবন ব্যবহার করা হয়। প্রায় ১.২ শতাংশ নারী ও পুরুষ তাদের জীবনকালে এসব ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারে। এসব ক্যানসারের বেশিরভাগই হয়ে থাকে পঞ্চাশ বা পঞ্চাশোর্ধ্ব লোকদের এবং পুরুষদের ঝুঁকি নারীদের তুলনায় তিনগুণ বেশি। একটি বড় ঝুঁকির কারণ হলো এইচপিভি, একারণে এইচপিভি টিকা নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য বড় ঝুঁকি হলো ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার।



এসব ক্যানসারের কমন উপসর্গের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, মুখে নিরাময় হচ্ছে না এমন ঘা বা ক্ষত, ফোলা, শ্বাসকার্য চালাতে বা খেতে সমস্যা এবং ব্যথা। এসব ক্যানসারে আক্রান্ত ৬৫ শতাংশ রোগী পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় বেঁচে থাকে।

* উজ্জ্বল সবুজ: লিভারের ক্যানসার
যে ক্যানসার রিবনের রঙ উজ্জ্বল সবুজ তা লিভার বা যকৃত ও পিত্তনালির ক্যানসারকে বোঝায়। প্রায় ১ শতাংশ নারী ও পুরুষ তাদের জীবনকালে এসব ক্যানসারের শিকার হতে পারে। এসব ক্যানসারের অধিকাংশই হয়ে থাকে পঞ্চান্ন বা এর বেশি বয়সের লোকদের এবং পুরুষদের ঝুঁকি নারীদের তুলনায় তিনগুণ বেশি। প্রধান ঝুঁকির কারণের মধ্যে স্থূলতা, মদপান ও ডায়াবেটিস অন্তর্ভুক্ত।



লিভারের ক্যানসার ও পিত্তনালির ক্যানসারের কমন উপসর্গের মধ্যে পেটে গোটা বা ফোলা, জন্ডিস, সহজে কালশিটে হওয়ার প্রবণতা, ক্লান্তি, বমিবমি ভাব ও অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন হ্রাস উল্লেখযোগ্য। এসব ক্যানসারে আক্রান্ত মাত্র ১৭ শতাংশ রোগী পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় বেঁচে থাকে।

* সাদা: ফুসফুস ক্যানসার
এ বিশুদ্ধ রঙটি ফুসফুস ক্যানসার ও ব্রঙ্কিয়াল বা শ্বাসনালির ক্যানসারকে প্রতিনিধিত্ব করে। প্রায় ৬.২ শতাংশ নারী ও পুরুষের জীবনকালে এ ক্যানসার হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ফুসফুস ক্যানসার ষাট ও ষাটোর্ধ্ব লোকদের হয়ে থাকে এবং সাদা ও কালো মানুষেরা এ ক্যানসারের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। এ ক্যানসারের একটি প্রধান ঝুঁকির কারণ হলো ধূমপান, যার মধ্যে পরোক্ষ ধূমপানও অন্তর্ভুক্ত। দ্বিতীয় সর্বাধিক কমন কারণ হলো দূষণ-সৃষ্টিকারী পদার্থ র‍্যাডন ও অ্যাসবেস্টস এক্সপোজ করা। মনে রাখবেন যে, সকল ফুসফুস ক্যানসার ধূমপান সম্পর্কিত নয়।



ফুসফুস ক্যানসার ও শ্বাসনালির ক্যানসারের কমন উপসর্গের মধ্যে লেগে আছে এমন কাশি, শ্বাস নিতে কষ্ট, কফের সঙ্গে রক্ত, ক্লান্তি ও বুকব্যথা উল্লেখযোগ্য। এসব ক্যানসারে আক্রান্ত মাত্র ১৮ শতাংশ রোগী পাঁচ বছর বা এর বেশি সময় বেঁচে থাকে।

* হলুদাভ সবুজ: লিম্ফোমা
এই রঙের প্রতীকী রিবন হজকিন ও নন-হজকিন লিম্ফোমাকে বোঝায়। এসব ক্যানসার লসিকাতন্ত্রকে আক্রমণ করে, যার মধ্যে ইনফেকশনের বিরুদ্ধ লড়াইকারী শ্বেত রক্তকণিকার উৎপাদনকারী, জমাকারী ও বহনকারী টিস্যু ও অর্গান অন্তর্ভুক্ত। প্রায় ৬.২ শতাংশ নারী ও পুরুষের জীবনকালে এ রোগ হয়ে থাকে। উভয় ধরনের ক্যানসারই যেকোনো বয়সের লোককে আক্রমণ করতে পারে, কিন্তু কিশোর-কিশোরী ও অল্প বয়সী প্রাপ্তবয়স্কদের হজকিন লিম্ফোমার ঝুঁকি বেশি এবং নন-হজকিন লিম্ফোমা প্রধানত বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের হয়ে থাকে। ঝুঁকির কারণের মধ্যে এ রোগের পারিবারিক ইতিহাস, রেডিয়েশন ও পেস্টিসাইড এক্সপোজ করা এবং কিছু ভাইরাস অন্তর্ভুক্ত।



কমন উপসর্গের মধ্যে লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া, জ্বর, রাতে ঘাম নিঃসরণ ও ক্লান্তি উল্লেখযোগ্য। এসব ক্যানসারে আক্রান্ত ৭১ শতাংশ রোগী পাঁচ বছর বা এর বেশি সময় বেঁচে থাকে।

(আগামী পর্বে সমাপ্য)

পড়ুন :
* যে ৯ খাবারের সঙ্গে ক্যানসারের সম্পর্ক রয়েছে
* ক্যানসারের ঝুঁকি কমানোর উপায়





রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ মার্চ ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়