ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ক্যানসার রিবনের কোন রঙের কী অর্থ? (শেষ পর্ব)

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০৩, ৭ মার্চ ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ক্যানসার রিবনের কোন রঙের কী অর্থ? (শেষ পর্ব)

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : প্রাণঘাতী রোগ ক্যানসারে কে না ভয় পায়। শরীরের কোন অংশে ক্যানসার হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে ক্যানসারের ভিন্ন ভিন্ন নামকরণ করা হয়েছে এবং বিভিন্ন ক্যানসার বোঝাতে বিভিন্ন রঙের ক্যানসার রিবনের প্রচলন রয়েছে। ক্যানসার রিবনের কোন রঙ কোন ক্যানসারকে প্রতিনিধিত্ব করে, তা নিয়ে তিন পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে শেষ পর্ব।

* কালো: মেলানোমা
কালো রঙের ক্যানসার রিবন মেলানোমাকে প্রতিনিধিত্ব করে। এ ক্যানসারটি ত্বককে আক্রমণ করে, এমনকি নন-এক্সপোজড স্থানেও, যেমন- স্কাল্প, নেইল বেড ও চোখ। প্রায় ২.৩ শতাংশ নারী ও পুরুষের জীবনকালে এ রোগ হতে পারে। বেশিরভাগ মেলানোমা হয়ে থাকে ত্রিশ বা ত্রিশোর্ধ্ব লোকদের এবং নারীদের তুলনায় পুরুষদের ঝুঁকি একটু বেশি। ত্বকের ক্যানসারের সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণ সূর্যের অতিবেগুণী রশ্মি- একারণে চিকিৎসকরা সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। লাইট স্কিনের লোকদের এ ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি, তার মানে এই নয় যে ডার্ক স্কিনের লোকদের এ ক্যানসার হয় না। এ রোগের পারিবারিক ইতিহাসও কারো ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে।

 



মেলানোমার কমন উপসর্গের মধ্যে তিলের আকার বা আকৃতি বা রঙের যেকোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য। এ ক্যানসার হলো অন্যতম সর্বাধিক চিকিৎসাযোগ্য ক্যানসার, বিশেষ করে যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে। মেলানোমায় আক্রান্ত ৯২ শতাংশ রোগী পাঁচ বছর বা এর বেশি সময় বেঁচে থাকে।

* গাঢ় লাল: মায়েলোমা
বারগুন্ডি বা গাঢ় লাল রঙের ক্যানসার রিবন মায়েলোমা নামক ক্যানসারকে প্রতিনিধিত্ব করে। এ ক্যানসারটি প্লাজমা কোষকে আক্রমণ করে এবং বোন ম্যারোতে টিউমার সৃষ্টি করে। প্রায় ০.৮ শতাংশ নারী ও পুরুষের জীবনকালে এ ক্যানসার হতে পারে। অধিকাংশ মায়েলোমা হয়ে থাকে ষাট বা ষাটোর্ধ্ব লোকদের এবং কালো পুরুষেরা সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। বয়স ও লিঙ্গ ছাড়া বিজ্ঞানীরা অন্য কোনো উল্লেখযোগ্য ঝুঁকির কারণ শনাক্ত করতে পারেননি।

 



মায়েলোমার প্রাথমিক পর্যায়ে উপসর্গ প্রকাশ পায় না বললেই চলে এবং এ ক্যানসার সাধারণত নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা বা মূত্র পরীক্ষায় ধরা পড়ে। কিছু লোক অভিযোগ করে যে হাড়ের গভীরে ব্যথা অনুভূত হয়, বিশেষ করে পিঠ ও পাঁজরে- এছাড়া তারা ক্লান্তি, জ্বর, সহজে কালশিটে হওয়া এবং ঘনঘন অসুস্থতার অভিযোগও করে। মায়েলোমায় আক্রান্ত ৫০ শতাংশ রোগী পাঁচ বছর বা এর বেশি সময় বেঁচে থাকে।

* সবুজাভ নীল: ডিম্বাশয়ের ক্যানসার
সার্ভিক্যাল ক্যানসার যেমন সার্ভিক্সে হয়, তেমনি ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ের ক্যানসার হয় ওভারি বা ডিম্বাশয়ে। ডিম্বাশয়ের ক্যানসারকে প্রতিনিধিত্ব করে সবুজাভ নীল রঙের ক্যানসার রিবন। প্রায় ১.৩ শতাংশ নারীর জীবনকালে এ ক্যানসার হয়ে থাকে। পঞ্চাশোর্ধ্ব সাদা নারীরা এ ক্যানসারে সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঝুঁকির কারণ হলো ডিম্বাশয়ের ক্যানসার-স্তন ক্যানসার-জরায়ু ক্যানসার-মলাশয়ের ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস। অন্যান্য ঝুঁকির কারণের মধ্যে গর্ভবতী হতে সমস্যা ও এন্ডোমেট্রিয়োসিস থাকা উল্লেখযোগ্য।

 



ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের কমন উপসর্গের মধ্যে অস্বাভাবিক ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং (বিশেষ করে মেনোপজের পর), পেলভিকে চাপ, পেটফাঁপা ও মূত্রত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য। এ ক্যানসারে আক্রান্ত ৪৭ শতাংশ নারী পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় বেঁচে থাকে।

* হালকা নীল: প্রোস্টেট ক্যানসার
লাইট ব্লু বা নীলের প্যাস্টেল শেড বা হালকা নীল প্রোস্টেট ক্যানসারকে প্রতিনিধিত্ব করে। প্রোস্টেট নামক অর্গানটি সেমিনাল ফ্লুইড বা প্রজনন তরল উৎপাদন করে। প্রায় ১১.২ শতাংশ পুরুষ তাদের জীবনকালে প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারে। ত্বকের ক্যানসারের পর পুরুষদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বাধিক কমন ক্যানসার হলো প্রোস্টেট ক্যানসার। পঞ্চাশোর্ধ কালো পুরুষেরা প্রোস্টেট ক্যানসারের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকে এবং তাদের এ ক্যানসারে মারা যাওয়ার ঝুঁকি অন্যান্য পুরুষদের তুলনায় দ্বিগুণ। বয়সের পর এ রোগের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঝুঁকির কারণ হলো এ রোগের পারিবারিক ইতিহাস।

 



প্রোস্টেট ক্যানসারের কমন উপসর্গের মধ্যে মূত্রত্যাগে কঠিনতা বা ব্যথা কিংবা ঘনঘন মূত্রত্যাগ, মূত্র বা বীর্যে রক্ত, বীর্যপাতে কঠিনতা এবং পিঠ ব্যথা উল্লেখযোগ্য। প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত ৯৮ শতাংশ রোগী পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় বেঁচে থাকে। অন্যতম সর্বাধিক চিকিৎসাযোগ্য ক্যানসার হলো প্রোস্টেট ক্যানসার।

* নীল, গোলাপী ও সবুজাভ নীল: থাইরয়েড ক্যানসার
থাইরয়েডের ক্যানসারকে এই তিন রঙের রিবন প্রতিনিধিত্ব করে। থাইরয়েড হলো একটি গ্রন্থি যা হরমোন ও শরীরের অনেক মৌলিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। প্রায় ১.২ শতাংশ নারী ও পুরুষের জীবনকালে এ রোগ হয়ে থাকে। থাইরয়েড ক্যানসারের ঝুঁকি পুরুষদের তুলনায় নারীদের তিনগুণ বেশি। এ ক্যানসার ১৫ বছর বয়স ও বয়স্ক লোকদের মধ্যে কমন। গবেষকরা নিশ্চিত নন যে কোন কারণে থাইরয়েড ক্যানসার হয়, কিন্তু পরিবেশের কিছু বিষাক্ত পদার্থ (যেমন- রেডিয়েশন) এক্সপোজ করা এবং কিছু জেনেটিক কন্ডিশন এ রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে।



থাইরয়েড ক্যানসারের সর্বাধিক কমন উপসর্গ হলো গলার সামনে অ্যাডাম’স অ্যাপলের ওপর গোটা। অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে গিলতে বা শ্বাস নিতে সমস্যা ও কর্কশ কণ্ঠস্বর উল্লেখযোগ্য। এ ক্যানসারে আক্রান্ত ৯৮ শতাংশ রোগী পাঁচ বছর বা এর বেশি সময় বেঁচে থাকে। এটি হলো অন্যতম সর্বাধিক চিকিৎসাযোগ্য ক্যানসার।

* গাঢ় লালচে নীল: অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসার
ডার্ক পার্পল বা গাঢ় লালচে নীল রঙের ক্যানসার রিবন প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারকে প্রতিনিধিত্ব করে। অগ্ন্যাশয় নামক অর্গানটি এনজাইম তৈরি করে যা খাবার হজমে সাহায্য করে। প্রায় ১.৬ শতাংশ নারী ও পুরুষের জীবনকালে এ ক্যানসার হতে পারে। পঞ্চাশ বা পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী ও পুরুষদের অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। অন্যান্য ঝুঁকির কারণের মধ্যে প্যানক্রিয়েটাইটিস বা অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ, ডায়াবেটিস ও অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস উল্লেখযোগ্য। স্থূলতা, ধূমপান ও নিম্নমানের ডায়েটও এ ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে।



প্রায়ক্ষেত্রে অগ্ন্যাশয় ক্যানসারের শুরুতে কোনো উপসর্গ দেখা যায় না- এর মানে হলো, এ ক্যানসার অগ্রসর পর্যায়ে না যাওয়া পর্যন্ত প্রায়শ শনাক্ত করা যায় না এবং এর চিকিৎসা করা কঠিন। এ ক্যানসারের কমন উপসর্গের মধ্যে ক্লান্তি, জন্ডিস, পেটের ব্যথা নিচের পিঠে ছড়ানো, রক্ত জমাটবদ্ধতা ও অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন হ্রাস উল্লেখযোগ্য। এ ক্যানসারে আক্রান্ত মাত্র আট শতাংশ রোগী পাঁচ বছর বা এর বেশি সময় বেঁচে থাকে- এ পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় যে এ ক্যানসার কতটা মারাত্মক বা প্রাণনাশক।

* হালকা লালচে নীল: অণ্ডকোষের ক্যানসার
লাইট পার্পল বা হালকা লালচে নীল রঙের ক্যানসার রিবন টেস্টিকল বা অণ্ডকোষের ক্যানসারকে প্রতিনিধিত্ব করে। টেস্টিকল হলো পুরুষ অর্গান যা শুক্রাণু ও টেস্টোস্টেরন উৎপাদন করে। প্রায় ০.৪ শতাংশ পুরুষের জীবনকালে এ ক্যানসার হতে পারে। এ ক্যানসার ১৫ বছরের কিশোর থেকে ৩৫ বছরের পুরুষদের মধ্যে বেশি হয়ে থাকে। অন্যান্য ঝুঁকির কারণের মধ্যে ককেশিয়ান, একটি আনডিসেন্ডেড টেস্টিকল (পেটে অণ্ডকোষ থেকে যাওয়া) বা অন্যান্য অস্বাভাবিকতা এবং এ ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস উল্লেখযোগ্য।



অণ্ডকোষের ক্যানসারের সর্বাধিক কমন উপসর্গ হলো অণ্ডকোষে গোটা। অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে অণ্ডথলিতে ভারী বা ব্যথা অনুভূত হওয়া, স্তনে ব্যথা ও পিঠ ব্যথা উল্লেখযোগ্য। এ ক্যানসারে আক্রান্ত ৯৫ শতাংশ লোক পাঁচ বছর বা এর বেশি সময় বাঁচে- এর মানে হলো এটি একটি উচ্চ চিকিৎসাযোগ্য ক্যানসার।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

পড়ুন :



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ মার্চ ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়