পিঠের নিচের দিকে ব্যথার ১৪ কারণ (প্রথম পর্ব)
প্রতীকী ছবি
এস এম গল্প ইকবাল : বিশ্বের অন্যতম কমন স্বাস্থ্য সমস্যা হলো পিঠ ব্যথা এবং কাজ সম্পর্কিত অসামর্থ্যতার একটি সর্বাধিক কমন কারণ হলো পিঠের নিচের দিকে ব্যথা। ১২ সপ্তাহ বা এর বেশি সময় ধরে পিঠ ব্যথা হলে তাকে ক্রনিক ব্যাক পেইন বলে এবং পিঠের নিচের ব্যথা হলে বলে ক্রনিক লোয়ার ব্যাক পেইন, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডারস অ্যান্ড স্ট্রোক (এনআইএনডিএস) অনুসারে। পিঠের নিচের দিকে ব্যথার ১৪টি কারণ নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ পর্বে ৭টি কারণ উল্লেখ আলোচনা করা হলো।
* বয়স
অধিকাংশ ক্রনিক লোয়ার ব্যাক পেইন শুরু হয় ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সের মধ্যে এবং বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকে, বলেন দ্য ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির অন্তর্গত ওয়েক্সনার মেডিক্যাল সেন্টারের পেইন ফিজিশিয়ান এবং নিউরোলজিস্ট কিরন রাজনিশ। তিনি যোগ করেন, ‘বয়স্ক মানুষদের ওজন বেড়ে যাওয়া, নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন এবং ব্যায়াম চর্চা না করার প্রবণতা বেশি। এর ফলে মাংসপেশিগুলো টোন হারাতে থাকে, জয়েন্টগুলো একে অপরের সঙ্গে ঘষা খেতে থাকে এবং ডিস্কগুলোর একটির ওপর আরেকটির চাপ পড়তে থাকে।’ শরীরের এসব বয়সজনিত ক্ষয় মেরামত করার সামর্থ্যও কমে যায়। এমনকি আপনি সুস্থ থাকলেও বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার ফিজিকস বাঁকা পথে যেতে থাকবে, বলেন ডা. রাজনিশ।
* স্ট্রেইন অথবা স্প্রেইন
পিঠের নিচের অংশে ব্যথার সবচেয়ে কমন কারণ হলো স্ট্রেইন অথবা স্প্রেইন, আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব নিউরোলজিক্যাল সার্জনস অনুসারে। ওয়াশিংটন ডিসির কাইরোপ্র্যাক্টর অ্যালান কর্নফিল্ড বলেন, ‘স্ট্রেইন মাংসপেশিকে অ্যাফেক্ট করে, যেখানে স্প্রেইন আঘাত করে লিগামেন্ট বা অস্থিবন্ধনীকে।’ উভয়টিই হতে পারে কোনো ইনজুরি (উদাহরণস্বরূপ, খেলাধুলা অথবা ভারী কিছু উত্তোলন করতে গিয়ে) অথবা ধীরে ধীরে অতিব্যবহারের কারণে। ব্যথা নিতম্ব পর্যন্ত ছড়ায়, কিন্তু পা পর্যন্ত পৌঁছায় না। আপনার মাংসপেশির স্প্যাজমও হতে পারে। চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে- অল্পসময়ের জন্য বেড রেস্ট, প্রদাহবিরোধী ওষুধ এবং মাঝেমাঝে ফিজিক্যাল থেরাপি। ডা. রাজনিশ ব্যায়ামের ওপর জোর দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘শারীরিক সক্রিয়তার অভাব অবস্থাকে আরো খারাপ করতে পারে, যার ফলে ডিস্ক হার্নিয়েশন অথবা আর্থ্রাইটিস হতে পারে। অ্যাকিউট ব্যাক পেইনের চিকিৎসা করতে ফিজিশিয়ানের কাছে যান, যাতে এটি ক্রনিক ব্যাক পেইনের দিকে ধাবিত হতে না পারে।’
* হার্নিয়েটেড ডিস্ক
ডা. রাজনিশ বলেন, ‘স্পাইনাল ডিস্ক হলো জেলি ডোনাটের মতো: শক্ত এক্সটেরিয়রে বেষ্টিত একটি নরম কেন্দ্র।’ হার্নিয়েটেড ডিস্কের (রাপচারড বা স্লিপড ডিস্কও বলে) মানে হলো এক্সটেরিয়রের ছিদ্র দিয়ে কিছু জেলি বের হয়ে আসা, যা ব্যথা, অসাড়তা ও দুর্বলতা সৃষ্টি করে। কোনো ইনজুরির (যেমন- আছাড় খাওয়া) কারণে ধীর ক্ষয় থেকে এমন অবস্থা হতে পারে। ডা. কর্নফিল্ড বলেন, ‘সেখানে সবসময় ব্যথা হয় না। এ ব্যথা মাঝেমাঝে হয় এবং আপনি যখন কোনোকিছু করেন, আপনার পায়ের নিচে দ্রুত ব্যথা অনুভূত হবে।’ তিনি যোগ করেন, ‘আপনি একপাশ বাঁকালে ব্যথা হতে পারে, কিন্তু অন্যপাশ মুক্তি পেতে পারে।’ অবশ্যই ডাক্তার দেখাবেন যদি ব্যথা পায়ের নিচে পৌঁছে।
* আর্থ্রাইটিস
অস্টিওআর্থ্রাইটিস হলো পিঠের আর্থ্রাইটিসের সবচেয়ে কমন ধরন- এটি একটি ক্রনিক কন্ডিশন, যেখানে জয়েন্টের সংযোগস্থলে অবস্থিত কার্টিলেজ বা তরুণাস্থির ক্ষয় হয়। ডা. রাজনিশ বলেন, ‘কোমর বরাবর পিঠে ব্যথা অবস্থান করে। এটি হলো বিরক্তিকর নিস্তেজ ব্যথা যা প্রতিনিয়ত হতে থাকে।’ শারীরিক পরীক্ষা ও ইমেজিং টেস্ট (এক্সরে, সিটি স্ক্যান, এমআরআই অথবা আল্ট্রাসাউন্ড) এ সমস্যার উৎস শনাক্ত করতে পারে। আপনার ডাক্তার নন-প্রেসক্রিপশন অথবা প্রেসক্রিপশন ব্যথানাশক প্রেসক্রাইব করতে পারেন এবং সেইসঙ্গে ফিজিক্যাল থেরাপিরও পরামর্শ দিতে পারেন।
* প্রেগন্যান্সি
গর্ভাবস্থায় পিঠের নিচের দিকে ব্যথা কমন এবং তা ভালো কারণে! গর্ভাবস্থায় ওজন বৃদ্ধি পায় এবং এ অতিরিক্ত ওজন সেন্টার অব গ্রাভিটি বা ভারকেন্দ্রকে পরিবর্তন করে ও মেরুদণ্ডকে অতিরিক্ত ওজন বহন করতে হয় বলে পিঠের নিচের অংশে ব্যথা সৃষ্টি হয়। এছাড়া বিকাশমান শিশু ও অতিরিক্ত ওজনের কারণে রক্তনালি ও স্নায়ুর ওপর চাপ পড়ে এবং বাচ্চা প্রসবের প্রস্তুতির জন্য পেলভিসের জয়েন্টের লিগামেন্ট হরমোন দ্বারা প্রসারিত হয় (যার ফলে পেলভিসের লিগামেন্ট টানটান অবস্থায় থাকে), যা নিম্নস্থ পিঠে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। অঙ্গভঙ্গি উন্নত করে, পায়ের মাঝে বালিশ রেখে কাত হয়ে শুয়ে, উঁচু হিলের জুতা পরিহার করে, ব্যায়াম করে, ম্যাসাজ করে, গরম সেঁক অথবা ঠান্ডা সেঁক দিয়ে এবং কায়রোপ্র্যাক্টিক ট্রিটমেন্ট বা আকুপাংচারের সাহায্যে আপনি এ সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারেন, মায়ো ক্লিনিক অনুসারে।
* ট্রম্যাটিক ইনজুরি
হঠাৎ কোনো ইনজুরি (যেমন- খেলতে গিয়ে, গাড়ি দুর্ঘটনার কবল পড়ে অথবা আছাড় খেয়ে) পিঠের টেন্ডন, লিগামেন্ট ও মাংসপেশিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, এনআইএনডিএস অনুসারে। একটি ট্রমাটিক ইনজুরি মেরুদণ্ডকে অতিরিক্ত সংকুচিত করতে পারে, যার ফলে ডিস্ক ফেটে যেতে পারে। ইনজুরির ধরন ও ব্যাপ্তির ওপর চিকিৎসা নির্ভর করে, কিন্তু চিকিৎসার মধ্যে ফিজিক্যাল থেরাপি, ওষুধ ও অস্ত্রোপচার অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
* এন্ডোমেট্রিয়োসিস
এটি একটি ব্যাধি- স্বাভাবিক নিয়মে জরায়ুর ভেতরে যেসব টিস্যু বিকশিত হয় তাদের বিকাশ জরায়ুর বাইরে হওয়াকে এন্ডোমেট্রিয়োসিস বলে। এ অবস্থা পেলভিস ও নিম্নস্থ পিঠে প্রতিনিয়ত ব্যথার অনুভূতি দিতে পারে, মায়ো ক্লিনিক অনুসারে। প্রায়ক্ষেত্রে মাসিক চক্রের সময় ব্যথা আরো বেড়ে যায়। এটি শনাক্ত করতে পেলভিক পরীক্ষা, আল্ট্রাসাউন্ড অথবা এমআরআই এর সমন্বয় প্রয়োজন হতে পারে। চিকিৎসার মধ্যে হরমোনাল কন্ট্রাসেপ্টিভ সেবন, ব্যথানাশক ওষুধ সেবন এবং কখনো কখনো অস্ত্রোপচার অন্তর্ভুক্ত।
(আগামী পর্বে সমাপ্য)
তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট
আরো পড়ুন :
*
*
*
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ মার্চ ২০১৯/ফিরোজ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন