ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

হার্টের ডাক্তাররা যা মেনে চলেন

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৪, ৫ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হার্টের ডাক্তাররা যা মেনে চলেন

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : বিশ্বে রোগে মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ হলো হৃদপিণ্ডের রোগ বা সংক্ষেপে হৃদরোগ। হার্টকে বাংলায় হৃদপিণ্ড বলে, যাকে আরো আদুরে নাম হৃদয় বলতে পারি। কিন্তু এ হৃদয় আমাদের ভুল জীবনযাপন বা অসচেতনতার কারণে ভুগতে পারে। পরিণতিতে হতে পারে হার্ট ফেইলিউর কিংবা হার্ট অ্যাটাক। হার্টের ডাক্তাররা হৃদরোগের রোগীকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যা তারা নিজেরাও মেনে চলার চেষ্টা করেন, কারণ হৃদয়কে বাঁচাতে হবে। ডাক্তাররা ভালোভাবেই জানেন যে হৃদয় আক্রান্ত হলে মৃত্যু হতে পারে অকালে। হৃদয়কে রক্ষা করতে হার্টের ডাক্তাররা যা মেনে চলেন, তা নিয়ে পাঁচ পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

* ‘আমি খাবার ডেলিভারি সার্ভিস গ্রহণ করি’
‘সুস্থ হার্টের জন্য সঠিক পুষ্টি প্রয়োজন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমি প্রায়সময় খাবার মিস করে ফেলি, একারণে জাঙ্ক ফুড খাওয়ার প্রবণতা কমাতে খাবার ডেলিভারি সার্ভিস গ্রহণ করি। খাবার ডেলিভারি সার্ভিস আমাকে নিশ্চয়তা দেয় যে, আমি স্বাস্থ্যকর খাবার ও স্ন্যাকস খাচ্ছি। আপনার জন্য আরেকটি ভালো উপায় হলো, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পুরো সপ্তাহের জন্য খাবার প্রস্তুত করে রাখা, যার ফলে কর্মদিবসে খাবার খেয়েই ঘর থেকে বের হতে পারবেন এবং সঙ্গেও নিয়ে যেতে পারবেন।’
- নিকোলে ওয়েনবার্গ, সান্টা মনিকায় অবস্থিত প্রভিডেন্স সেন্ট জন’স হেলথ সেন্টারের কার্ডিওলজিস্ট

* ‘আমি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনমূলক ডায়েরি লিখি’
‘সম্প্রতি গবেষণায় পাওয়া গেছে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ হার্টের স্বাস্থ্যের ওপর উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ গবেষণায় অংশগ্রহণকারী যেসব স্বেচ্ছাকর্মী গভীর উপলব্ধি থেকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ডায়েরি লিখেছিল তাদের হার্ট রেটে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে এবং হার্ট রেটের এ পরিবর্তনশীলতা হলো কার্ডিয়াক রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি হ্রাসের একটি মার্কার। অন্য একটি গবেষণা অনুসারে, যেসব রোগী দু মাস ধরে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনমূলক ডায়েরি লিখেছিল তাদের প্রদাহজনিত বায়োমার্কারের (যা কার্ডিওভাস্কুলার রোগের দিকে টানতে পারে) মাত্রা কম ছিল। কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন হার্টকে সুস্থ রাখে, মানসিক চাপ কমায় ও ভালোভাবে ঘুমাতে সাহায্য করে, যা সমগ্র স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। আমার কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন শুধুমাত্র আত্মার জন্য নয়, শরীরের জন্যও ভালো।’
- নিকোলে ভ্যান গ্রোনিনজেন, এনওয়াইইউ’র ইন্টারনাল মেডিসিন ফিজিশিয়ান।

* ‘আমি প্রতিরাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাই’
‘রাতে ভালো ঘুম অত্যাবশ্যক। আমি প্রতিরাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমাই, একারণে আমি শিথিল অনুভব করি ও ব্যস্ত দিনকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকি। নিম্নমাত্রার ঘুমের সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপের সংযোগ পাওয়া গেছে, যা হৃদরোগের জন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়।’
- জেনিফার হেথি, কার্ডিওলজিস্ট ও কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টারের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক

* ‘আমি ক্রসফিট করি’
‘আমি মন-দেহ সংযোগে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এবং দেখেছি যে শরীরচর্চা শুধুমাত্র সমগ্র স্বাস্থ্যকে উন্নত করে না, মানসিক চাপও দূর করে। শরীরচর্চায় স্ট্রেস হরমোন করটিসোলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। করটিসলোর উচ্চমাত্রার সঙ্গে হার্ট অ্যাটাক অথবা স্ট্রোকের উচ্চ ঝুঁকির যোগসূত্র পাওয়া গেছে। ব্যক্তিগতভাবে ক্রসফিট আমার প্রিয়, কিন্তু আমি যোগব্যায়ামও করি।’
- অ্যাডাম স্প্ল্যাভার, ফ্লোরিডার কার্ডিওলজিস্ট ও ন্যানো হেলথ অ্যাসোশিয়েটসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা

* ‘আমি ধ্যান করি’
‘আমি প্রতিদিন সেসব কাজে মগ্ন হই যা মানসিক চাপ দূর করে ও প্রফুল্ল রাখে। নেতিবাচক চিন্তা ও অনুভূতি হার্টের জন্য ক্ষতিকর। মানসিক চাপে ক্যাটিকোলামাইন নিঃসরিত হয়, যা হৃদয়কে বিকল করে দিতে পারে অথবা হার্ট অ্যাটাক ঘটাতে পারে। আমি প্রতিদিন ২০ মিনিটের ধ্যানে প্রশান্তি খুঁজে পাই। মানসিক চাপ বেড়ে গেলে ধ্যান আমাকে রিসেট করে। আপনি দুভাবে ধ্যান করতে পারেন, যথা- অ্যাপসের গাইডেড মেডিটেশন ও প্রাতিষ্ঠানিক মেডিটেশন।’
- আর্চানা সাক্সেনা, এনওয়াইইউ লুথেরান মেডিক্যাল সেন্টারের কার্ডিওলজিস্ট

* ‘আমি সিঁড়ি আরোহণ করি’
‘এলিভেটরের ব্যবহার শুরু হওয়ার পর থেকে হার্ট অ্যাটাকের সংখ্যা বেড়ে গেছে। কিন্তু শরীরচর্চা বা এক্সারসাইজ, এমনকি তা সিঁড়ি আরোহণের মতো ছোট এক্সারসাইজ হলেও, হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমি যেখানেই সুযোগ পাই, সিঁড়ি আরোহণ করি।’
- রিচার্ড রাইট, কার্ডিওলজিস্ট ও সান্টা মনিকায় অবস্থিত প্রভিডেন্স সেন্ট জন’স হেলথ সেন্টারের অন্তর্গত প্যাসিফিক হার্ট ইনস্টিটিউটের সভাপতি

* ‘আমি প্রতিদিন ওজন মাপি’
‘কার্ডিওভাস্কুলার ঝুঁকি কমানোর জন্য হৃদয়ের ডাক্তাররা সাধারণত ওজন ব্যবস্থাপনা, নিয়মিত এক্সারসাইজ প্রোগ্রাম ও মানসিক চাপ কমানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু আমি দেখেছি যে লোকজন প্রায়শ এসব পরামর্শ বাস্তবায়ন করতে পারে না, কারণ তারা তাদের দৈনন্দিন রুটিনে এ বিষয়গুলোকে সমন্বয় করতে পারে না। আমার ওজন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে না এটা নিশ্চিত হতে আমি প্রতিদিন ওজন পরিমাপ করি এবং স্বাস্থ্যসম্মত ওজন ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিই।’
- স্টিভেন টাবাক, সিডার্স-সিনাই হার্ট ইনস্টিটিউটের মেডিক্যাল ডিরেক্টর

* ‘আমি নিয়মিত সহবাস করি’
‘যৌনমিলন হলো ইন্টারভ্যাল এক্সারসাইজের মতো, যা হার্টের জন্য খুবই ভালো। আপনার হার্টকে সাহায্য করার একটি সহজ ও মজার উপায় হলো স্ত্রীর সঙ্গে ঘনঘন সঙ্গম করা।’
- রিচার্ড রাইট, কার্ডিওলজিস্ট ও সান্টা মনিকায় অবস্থিত প্রভিডেন্স সেন্ট জন’স হেলথ সেন্টারের অন্তর্গত প্যাসিফিক হার্ট ইনস্টিটিউটের সভাপতি

(চলবে)

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ মে ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়