ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কেমোথেরাপির সময় যা খাবেন

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৪৮, ১৯ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কেমোথেরাপির সময় যা খাবেন

প্রতীকী ছবি

এম এম গল্প ইকবাল : ক্যানসারের চিকিৎসা কেমোথেরাপিতে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, কিন্তু কিছু হিলিং ফুডস রয়েছে যা এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হ্রাস করতে পারে- কিন্তু তারপরও প্রত্যেক ক্যানসার রোগী কেমোথেরাপির সময় কি কি খাবেন তা জানতে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা উচিত। এখানে কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কমাতে পারে এমন কিছু খাবার উল্লেখ করা হলো।

* গাজর কেমোর কার্যকারিতা বাড়ায়
ক্যানসার রোগীদের প্রত্যেক ডায়েটের কমন খাবার হলো গাজর। গাজরের কিছু উদ্ভিদ উপাদান (যা পার্সলে পাতাতেও পাওয়া যায়, দেখতে ধনে পাতার মতো) ক্যানসার চিকিৎসায় বাধা হতে পারে এমন মেকানিজমকে থামিয়ে কেমোথেরাপিকে আরো কার্যকর করতে পারে, নিউ জিল্যান্ড ইনস্টিটিউট ফর প্লান্ট অ্যান্ড ফুড রিসার্চ অনুসারে। সিনিয়র বিজ্ঞানী আরজান স্কিপেন্স বলেন, ‘গবেষকরা আশা করছেন যে রোগীদের ভালো ফলাফলের জন্য প্রচলিত চিকিৎসার বিকল্প হিসেবে এসব খাবার ব্যবহার করা যেতে পারে।’

* গ্রেভি মুখের শুষ্কতা প্রতিহত করে
কেমোর একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো মুখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া, যার ফলে কোনোকিছু গেলা কঠিন হয়ে পড়ে। আপনার খাবারকে সস, গ্রেভি অথবা এমনকি লো ফ্যাট মিল্ক দিয়ে কভার করে আর্দ্র করুন। একটি ব্লেন্ডারে খাবারকে তরল করলেও খাওয়া সহজ হবে।

* ভাত ও কলা ডায়রিয়া থামায়
ভাত, কলা, রান্নাকৃত আপেল ও ড্রাই টোস্টের মতো ব্লান্ড ফুডস মল জমাটবদ্ধ হতে সাহায্য করবে, যদি আপনার কেমোথেরাপি জনিত ডায়রিয়া হয়। চর্বিযুক্ত খাবার, কাঁচা ফল ও হোল গ্রেন খাবার এড়িয়ে চলুন- কারণ এসব খাবার ডায়রিয়ার তীব্রতা বাড়াতে পারে।

* হোল গ্রেন কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় করে
অন্যদিকে যদি আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য হয়, তাহলে প্রচুর পরিমাণে তরল পান করুন এবং অদ্রবণীয় আঁশযুক্ত খাবার খান, যেমন- হোল গ্রেন ব্রেড বা সিরিয়াল, শুষ্ক ফল, বিনস বা কিডনি আকৃতির শুষ্ক বীজ বা মটরশুটি। এসবকিছু আপনার পরিপাকতন্ত্রকে সাহায্য করবে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল কেয়ার ইনস্টিটিউট (এনসিআই) এ ক্যানসার চিকিৎসার সময় দিনে আট থেকে ১২ গ্লাস তরল পান করতে পরামর্শ দিচ্ছে।

* অল্প অল্প খাবার ক্ষুধা হ্রাসের ক্ষেত্রে সহায়ক
কেমোথেরাপির একটি কমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো ক্ষুধা হ্রাস পাওয়া। এসময় তিনবেলা ভারী খাবার খাওয়ার পরিবর্তে নিজেকে পুষ্ট ও শক্তিপূর্ণ রাখতে দিনে পাঁচ থেকে ৬ বার অল্প অল্প খাবার খান। আপনার ডায়েটে প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট ও উচ্চ ক্যালরির খাবার সংযোজন স্বাস্থ্যসম্মত ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করবে। কিন্তু ক্যানসার রোগীদের প্রত্যেক ডায়েট ভিন্ন হতে পারে, তাই আপনার দশা-রোগ শনাক্তকরণ-প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে কোন ধরনের খাবার খাওয়া প্রয়োজন তা জানতে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।

* জিনজার ক্যান্ডি বমিবমি ভাব দূর করে
কেমো প্রায়সময় পেট খারাপ করিয়ে থাকে অথবা বমিবমি ভাবের উদ্রেক করে, কিন্তু এক্ষেত্রে জিনজার ক্যান্ডি বা আদার মিছরি ও লেবুর শরবত চমৎকার কাজ করে। খাবার খাওয়ার পূর্বে এগুলো খান অথবা খাবার খাওয়ার সময় আদা পানীয় পান করুন। এটি আপনার মাথাঘোরা ও বমিবমি ভাব হ্রাস করবে।

* কাস্টার্ড মুখের ক্ষতে সহায়ক
মাউথ সোর বা মুখের ক্ষতের কারণে খাবার খাওয়া যন্ত্রণাদায়ক, এমনকি নরম খাবারও। যদি কেমো আপনার মুখে ক্ষত সৃষ্টি করে, তাহলে সহজে গেলা যায় এমন পিউরিড খাবার খান, যেমন- কাস্টার্ড, ভাত, ডিম, পরিজ ও স্যূপ। খাবার যত বেশি মসৃণ হবে তত ভালো। মনে রাখবেন যে, লবণ ও মসলা ক্ষতকে আরো যন্ত্রণাদায়ক করে। শার্প বা মচমচে খাবার এড়িয়ে চলুন, যেমন- ক্রেকার্স, চিপস ও কাঁচা শাকসবজি এবং হট সস-কারি ডিশ-সালসা-ঝাল মরিচের মতো মসলাদার খাবার- কারণ এসব খাবারও মাউথ সোরকে উক্ত্যক্ত করতে পারে।

* কমলার রস মুখের শুষ্কতা প্রতিরোধ করে
কেমোথেরাপি জনিত মুখের শুষ্কতা প্রতিরোধের জন্য এ চিকিৎসার পূর্বে আপনার ডায়েটে প্রচুর পরিমাণে মিষ্ট ও অম্লীয় খাবার যোগ করুন। এনসিআই অনুসারে, লেবুর রস ও কমলার রসের মতো তরল পান অধিক লালা উৎপাদনে সাহায্য করে, কারণ তাদের অম্লতা লালাগ্রন্থিকে উদ্দীপ্ত করে। কিন্তু এ চিকিৎসায় আপনার মাউথ সোর বা থ্রোট সোর হলে এসব পানীয় পান করবেন না, কারণ তারা এসব উপসর্গের তীব্রতা বৃদ্ধি করে।

* পেঁয়াজ ও রসুন ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে
ক্যানসার রোগীদের স্বাস্থ্যকর ডায়েটে সবসময় পেঁয়াজ ও রসুন থাকবে। ভেজে বা রান্না করে বা কাঁচা যেভাবেই খান না কেন, এসব ক্যানসার ফাইটারে উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে, যা ক্যানসারের বিরুদ্ধে ইমিউন সিস্টেমকে প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষায় উদ্দীপ্ত করতে পারে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রকৃতপক্ষে, গবেষকরা পেয়েছেন যে কড়া ঝাঁজের পেঁয়াজ কিছু ক্যানসার কোষের বিকাশে বাধা দিতে পারে।

* চর্বিহীন প্রোটিন শক্তি ও মাংসপেশি ব্যবস্থাপনা করে
এনসিআই শক্তি পেতে ও মাংসপেশিকে শক্তিশালী রাখতে কেমোথেরাপির সময় বেশি করে প্রোটিন খেতে পরামর্শ দিচ্ছে। চর্বিহীন প্রোটিন বেছে নিন, যেমন- ডিম, মাছ, টফু ও মুরগির মাংস। অনেক ক্যানসার রোগী লাল মাংসে ধাতুর স্বাদ অনুভব করে।

* সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ খাবার ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়ে
ব্রাজিল নাট, সামুদ্রিক খাবার, ওটস ও বাদামী চাল হলো সেলেনিয়ামের সমৃদ্ধ উৎস- সেলেনিয়াম হলো ক্যানসার-বিরোধী খনিজ। জার্নাল অব বায়োলজিক্যাল কেমিস্ট্রিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, সেলেনিয়াম কম্পাউন্ড ইমিউন সিস্টেমকে উন্নত করে, যার ফলে এ অনাক্রম্য তন্ত্র কিছু ক্যানসারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে, যেমন- লিউকেমিয়া ও মেলানোমা। কিন্তু ঝিনুক এবং কাঁচা মাছ খাবেন না, কারণ তারা আপনাকে এ চিকিৎসার সময় খাদ্যবাহিত রোগের উচ্চ ঝুঁকিতে রাখতে পারে, এনসিআই অনুসারে। যেসব মাছ খাবেন তা ভালোভাবে রান্না করে খাবেন।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ জুন ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়