ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সবাই দুর্গার প্রতি ক্ষেপে যায় || নির্মলেন্দু গুণ

নির্মলেন্দু গুণ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৭, ২০ অক্টোবর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সবাই দুর্গার প্রতি ক্ষেপে যায় || নির্মলেন্দু গুণ

অলংকরণ : অপূর্ব খন্দকার

পূজার স্মৃতি যদি স্মরণ করি তা হলে সেই সময়ের কথা মনে পড়ে, যে পূজার সময়ে আমাদের  দুর্গাপূজা হতো না। এই পূজা না হওয়া নিয়ে আমাদের বাড়িতে একটি কাহিনি প্রচলিত ছিল। শুনেছিলাম আমাদের বাড়িতে অনেক  আগে নিয়মিত পূজা হতো। আমাদের পূর্ব পুরুষগণ পূজার আনন্দে বেশ মেতে থাকতেন। পরে অবশ্য একটি ঘটনার কারণে সেই পূজা বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনে একটা গল্প চালু আছে।

গল্পটি এ রকম যে, আমাদের পূর্ব-পুরুষদের একজনকে দুর্গাপূজা চলা অবস্থায় নাকি বাঘে খেয়েছিলো। ঐ ঘটনার পর সবাই দুর্গার প্রতি ক্ষেপে যায়। দুর্গাপূজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। যে দুর্গা তাঁর পূজারীর বিরুদ্ধে ব্যাঘ্র লেলিয়ে দেন, সেই দেবীর পূজা করে লাভ কী? আমাদের আশপাশের গ্রামে যেসব বাড়িতে দুর্গাপূজা হতো, তাদের বক্তব্য অবশ্য ভিন্ন ছিলো।

তারা এই বাঘে-খাওয়ার গল্পটি বিশ্বাস করতেন না। তারা বলতেন, গুণরা হচ্ছে কৃপণ, দুর্গাপূজার প্রচুর খরচ এড়ানোর জন্যই তারা এই গল্পের অবতারণা করেছে। আমি পরেরটাই বিশ্বাস করতাম। আমার মনের ভেতরে বাঘের দিকে বেশ রাগও ছিলো। দেবী দুর্গার বাহন যে বাঘ নয়, সিংহ, সেটা আমার জানা ছিলো না। বাঘ এবং সিংহ- এই দুটো মহাপরাক্রমশালী প্রাণীই তখন আমার কাছে ছিলো সমান অচেনা। আমি দীর্ঘদিন ধরে বাঘকেই দেবী দুর্গার বাহন ভেবে সম্মান ও সমীহ করেছি। আমার বাবা-কাকা দুর্গাপূজার ব্যাপারে খুব উৎসাহী ছিলেন না।

বাবার কাছে শুনেছি, আমার ঠাকুরদাদা রামসুন্দর গুণ ময়মনসিংহে ব্রাহ্মধর্ম প্রচার করতে আসা শ্রীকেশব সেনের পাল্লায় পড়ে ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। রাজা রামমোহন রায় ও দ্বারকানাথ ঠাকুরের ব্রাহ্মধর্ম প্রচারের কারণেও আমার ঠাকুরদা উৎসাহিত হয়ে থাকতে পারেন। পরে পার্শ্ববর্তী বারঘর ও আন্দাদিয়া গ্রামের প্রতাপশালী ব্রাহ্মণের চাপে পড়ে আমার ঠাকুরদা প্রায়শ্চিত্ত করে পুনরায় হিন্দু হয়েছিলেন। আমার বাবা-কাকাদের মধ্যে তার রেশ (নিরাকার ব্রহ্মদর্শন) থেকে গিয়েছিলো। তাতে খরচও কমতো। তবে আমরা ছোটরা যে-কোনো পূজা নিয়ে মেতে থাকতেই পছন্দ করতাম। যোগীশাসন গ্রামের হরেন্দ্র সরকার ও গড়মা গ্রামের কুমুদ গুণের বাড়িতে প্রতি বছরই ঘটা করে দুর্গাপূজা হতো। আমরা ঐ দুটো পূজা দেবীর নির্মাণ ও চক্ষুদান থেকে শুরু করে বিসর্জনের অশ্রুসজল মুহূর্তটি পর্যন্ত যতটা সম্ভব সদলবলে উপভোগ করতাম।

আমার স্মৃতিতে ঐ দুটো দুর্গাপূজার কথা আজও সমান জীবন্ত হয়ে আছে। আমাদের বাড়িতে একটি পূজাই জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হতো- সেটি হচ্ছে সরস্বতী পূজা। সরস্বতী হচ্ছেন সরাসরি বিদ্যার দেবী এবং তাঁর একটি নাম হচ্ছে ‘বীণাপাণি’। আমার মায়ের নাম ছিলো বীণাপাণি। সম্ভবত সে-কারণেই সরস্বতী পূজায় বাবা প্রকাশ্যেই আমাদের উৎসাহ যোগাতেন।

সূত্র : আমার ছেলেবেলা

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ অক্টোবর ২০১৫/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়