ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বায়োমেট্রিক হাজিরার আওতায় আসছে পরিদর্শন অধিদপ্তর

হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৬, ২ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বায়োমেট্রিক হাজিরার আওতায় আসছে পরিদর্শন অধিদপ্তর

হাসান মাহামুদ : বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাজিরা কার্যক্রম চালুর পর এবার তদারকি সংস্থাকেও এই ডিজিটাল পদ্ধতির আওতায় আনা হচ্ছে।

 

জানা গেছে, দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তদারকির লক্ষ্যে চালু করা হচ্ছে ডিজিটাল মনিটরিং পদ্ধতি। আর এই কাজে শতভাগ সফলতা আনতে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) কার্যক্রমেও গতি আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটির লোকবলের সর্বোচ্চ সেবাদান ও নিয়মানুবর্তিতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে এতে চালু করা হচ্ছে বায়োমেট্রিক হাজিরা পদ্ধতি।

 

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ মঙ্গলবার বিকেলে শিক্ষা ভবনের ডিআইএ অধিদপ্তরে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।

 

ডিআইএ পরিচালক প্রফেসর আহাম্মেদ সাজ্জাদ রশীদ রাইজিংবিডিকে বলেন, চলতি মাস থেকেই এ পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে হাজিরা দিতে হবে। এর ফলে অধিদপ্তরের কার্যক্রমে গতিশীলতা আসবে।

 

তিনি বলেন, মঙ্গলবার এই বায়োমেট্রিক হাজিরা পদ্ধতির উদ্বোধনের পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রী শেখ রাসেল স্মৃতি সম্মেলন কেন্দ্র উদ্বোধন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বিষয়ক ম্যুরাল উন্মোচন অনুষ্ঠানেও যোগ দেবেন।

 

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এ সংস্থাটি। বর্তমান মনিটরিং পদ্ধতিতে সীমিত জনবলে বছরে দেড় হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন সম্ভব হয় না। এমনও দেখা গেছে, পরিদর্শন টিম একটি প্রতিষ্ঠানে ৫ বছর পর যাওয়ার সুযোগ হয়। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর একাডেমিক ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা সরকারের নজরদারির বাইরে থেকে যাচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম, দুর্নীতি দূর ও সব প্রতিষ্ঠানকে একযোগে মনিটরিং করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

 

উদ্যোগের অংশ হিসেবে ‘পিয়ার ইন্সপেকশন’ নামে একটি সফটওয়্যার চালু করা হচ্ছে। এর ফলে দেশের প্রায় ৩৬ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নজরদারিতে আসবে।

 

‘পিয়ার ইন্সপেকশন’ এর অংশ হিসেবে গত বছর একটি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। এজন্য ৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বেছে নেওয়া হয়। এর ফলাফল চূড়ান্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয় গত ডিসেম্বরে। এরপর সফটওয়্যারটির ডেমো শিক্ষামন্ত্রী, সচিব ও সংশ্লিষ্টদের দেখানো হয়। বর্তমানে সফটওয়্যারটির পর্যালোচনা চলছে। পরবর্তী সময়ে ডেমোটি গৃহীত হলে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

 

সফটওয়্যারটির মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা, ফলাফল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান নির্ধারণ, শিক্ষকদের এসিআর, শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ, প্রতিষ্ঠানের গ্রেডিং করা, অনিয়ম-দুর্নীতির খতিয়ানসহ মোট ১১৪ বিষয় মনিটরিং করা যাবে। এতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জবাবদিহির মধ্যে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

এ প্রসঙ্গে আহাম্মেদ সাজ্জাদ রশীদ বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি এবং মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল মনিটরিং পদ্ধতি প্রবর্তনের লক্ষ্যে ওয়েবসাইট নির্মাণ, সফটওয়্যার তৈরি, সার্ভার ও অন্য যন্ত্রপাতি ক্রয়সহ মোট ১০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে এ পদ্ধতির ওপর একটি কর্মশালার আয়োজন করে নীতি ও কৌশল ঠিক করে ডিআইএ। সে লক্ষ্যে কর্মকাণ্ড এগিয়ে চলছে।

 

এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে মূলত দৈনিক ভিত্তিতে দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খবরাখবর নেওয়া হবে। এর মাধ্যমে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি এ চার ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ও আর্থিক চিত্র, বিশেষ করে অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্যও বেরিয়ে আসবে।

 

সফটওয়্যারটি তৈরি হলে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান অন্য একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবেন। পরিদর্শনকালীন পাওয়া তথ্য-উপাত্ত নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করবেন। প্রতিষ্ঠান নিজের দেওয়া তথ্য এবং পিয়ার ইন্সপেক্টরের তথ্য যাছাই করে প্রতিষ্ঠানের গ্রেডিং করা হবে। তবে পরিদর্শনপূর্বক চিঠি দিয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অবহিত করতে হবে।

 

সূত্র জানায়, তাৎক্ষণিকভাবে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানের যে কোনো তথ্য জানা যাবে। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেমন পড়াচ্ছেন বা ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি কেমন যত্ম নিচ্ছেন, ছাত্র-ছাত্রীরা কেন কোচিং-প্রাইভেটে ঝুঁকছে তা বের হয়ে আসবে এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানাগারে কেমন কাজ হয় কিংবা ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মতো সহশিক্ষা কার্যক্রম আদৌ চর্চা হয় কিনা, তাও দেখা হবে।

 

শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতে প্রতিষ্ঠান প্রধান বা ব্যবস্থাপনা কমিটির ভূমিকা, অভিভাবকের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কসহ মোট ১১৪টি বিষয়ে মনিটরিং করা হবে এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে।

 

এর মাধ্যমে আরো জানা যাবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের পেশাদারিত্ব শ্রেণি পাঠদান মূল্যায়ন, শিক্ষকের ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য (এসিআর), প্রতিষ্ঠান প্রধানের একাডেমিক কার্যক্রম মূল্যায়ন, শিক্ষার্থীর কৃতিত্ব মূল্যায়ন, ক্লাস রুটিন পর্যালোচনা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সমাবেশ, শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ, স্যানিটেশন পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ, শিক্ষার্থীর আসন ব্যবস্থা, মিলনায়তন, পাঠাগার, বিজ্ঞানাগার, ল্যাংগুয়েজ ল্যাব, কম্পিউটার ল্যাবের তথ্য, শিক্ষার্থীর ভাষা ব্যবহারের দক্ষতা যাচাই, আয়-ব্যয় বিবরণী, সহশিক্ষা কার্যক্রম ও অভিভাবক-শিক্ষক সম্পর্ক ইত্যাদি।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ জানুয়ারি ২০১৭/হাসান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়