ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আমাদের দেশ হবে সমৃদ্ধ : সংসদে অর্থমন্ত্রী

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৬, ২৯ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আমাদের দেশ হবে সমৃদ্ধ : সংসদে অর্থমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিবেদক : ‘ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ ধরে অনেক সম্ভাবনাকে সামনে রেখে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের সূচনা হয়েছে। বছরের শুরু থেকেই সচল অর্থনীতির চাকা, সরকারের প্রাজ্ঞ ব্যবস্থাপনায় স্থিতিশীল আছে সামষ্টিক অর্থনীতির সব খাত, আছে রাজনৈতিক সুস্থিতি। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা, প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্ব আর দেশের মানুষের নিরন্তর প্রচেষ্টায় আমাদের দেশ হবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।’

রোববার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত বাজেট বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রবাস আয় লেনদেন ভারসাম্যে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে যেমন বহিঃখাতকে শক্তিশালী অবস্থানে রাখে, তেমনই অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির মাধ্যমে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, ডিসেম্বর ২০১৫ থেকে জুন ২০১৬ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য পরিমাণে প্রবাস আয়ে গতিশীলতা আসেনি।

চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশে প্রবাস আয়ের প্রবাহ ছিল ৩ হাজার ২৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, বিগত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৩ হাজার ৯৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ এ সময়ে প্রবাস আয়ের প্রবাহ ১৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ কমেছে। উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ধীর গতি, তেলের মূল্যহ্রাসের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও ডলারের বিপরীতে তুলনামূলকভাবে টাকার মূল্য শক্তিশালী থাকার কারণে প্রবাস আয় প্রবাহ কমতে পারে বলে মনে হচ্ছে।

এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই, মধ্য প্রাচ্যের সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, কুয়েত ও বাহরাইন এই ছয়টি দেশ হতে প্রবাস আয়ের প্রায় ৫৮ শতাংশ আসে। চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি হতে সেপ্টেম্বর নাগাদ বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৮ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবাস নিয়োগ বৃদ্ধি সত্ত্বেও এসব দেশ থেকে একই সময়ে প্রবাস আয় কমেছে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। তেলের মূল্য কিছুটা স্বাভাবিক হলে এসকল দেশ হতে প্রবাস আয় প্রবাহও স্বাভাবিক হবে বলে আমি মনে করি। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে যে প্রবাসীরা অপেক্ষাকৃত কম বেতনে চাকরি নিয়ে তাদের কর্মস্থলে বহাল রয়েছেন কিন্তু তাদের রেমিট্যান্স কমাতে হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করার পর বর্তমানে তৃতীয় অর্থবছর অতিবাহিত হচ্ছে। রূপকল্প ২০২১ কে সামনে রেখে মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করে অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করে যার সুফল বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদেও পাচ্ছে। পূর্বের ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যকর ও গতিশীল নির্দেশনায় এ মেয়াদেও বাজেট বাস্তবায়নে আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো ২০২১ সালের মধ্যে একটি জ্ঞানভিত্তিক প্রযুক্তিনির্ভর মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ গড়ে তোলা, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং জনগণের জীবনমানের সার্বিক উন্নয়ন এবং কাল পরিক্রমায় ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে উন্নীত করা। এ লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে আমাদের উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। আশার বিষয় এই যে, এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, আমদানি/রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, মুদ্রা বিনিময় হারসহ মৌলিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক চলকসমূহের অবস্থান বেশ সন্তোষজনক।

অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গণে সরকারের সাম্প্রতিক কিছু মাইলফলক অর্জনের বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার চলতি মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন দেশের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীরতর হয়েছে, যার অর্থনৈতিক সুফল শিগগিরই জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে যেতে শুরু করেছে। গত অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে এসে একটি অনুদান চুক্তি, দুটি কাঠামোগত চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক ও চারটি ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করেন, যা দেশের ইতিহাসে এক মাইলফলক হয়ে থাকবে। এসব চুক্তির মাধ্যমে ২৭টি প্রকল্পে ২০ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া যাবে, যার মাধ্যমে দেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি হবে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে দারিদ্র্য বিমোচনের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বিপুল জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য বিমোচনের স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফর করেন এবং আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবসে ঢাকায় বক্তব্য প্রদান করেন। তার বক্তব্যের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নয়নে বাংলাদেশের সাফল্যগাঁথা বিশ্বদরবারে প্রচারিত হয়েছে এবং শিশুদের অপুষ্টি দূরীকরণে ১ বিলিয়ন ডলার সাহায্যের ঘোষণা এসেছে।

তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন, তথ্য-প্রযুক্তি সেবার বিস্তার এবং দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারের অভূতপূর্ব সাফল্য বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত করেছে। নারীর ক্ষমতায়নে অগ্রগণ্য ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ UN Women and Global Partnership Forum মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে Planet 50-50 Champion মর্যাদায় ভূষিত করেছে। তথ্য-প্রযুক্তিকে শাসন ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ ছিল মহাজোট সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের অন্যতম মিশন। সেই তথ্য-প্রযুক্তি খাতে সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের স্বীকৃতিস্বরূপ এশিয়া ও ওশেনিয়ান কম্পিউটিং ইন্ডাস্ট্রিজ অরগানাইজেশন আইসিটি বিভাগকে ডিজিটাল গভর্মেন্ট অ্যাওয়ার্ড-২০১৬ প্রদান করেছে।

অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বাজেট বাস্তবায়নের অগ্রগতি তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, বিগত মেয়াদের শেষ দিকে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা দেশের অর্থনীতিকে অনেকখানি ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল, যা দৃঢ় পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকার মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক সংস্কার দেশকে যে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল তার প্রভাবে বিগত অর্থবছরেও দেশ ৭ শতাংশের অধিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। দেশবাসীকে অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাতে চাই যে, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের সাম্প্রতিককালের ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ১১ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। চলতি অর্থবছরে আমাদের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা হলো ৭ দশমিক ২ শতাংশ।

অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় প্রবৃদ্ধির এ লক্ষ্য অর্জনের পথে প্রথম প্রান্তিকে সামষ্টিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি সংক্রান্ত কিছু তথ্য-উপাত্ত সংসদে তুলে ধরেন। এ সময় তিনি বলেন ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন কর রাজস্ব আদায় ১৭ দশমিক ৯৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। মোট সরকারি ব্যয় বেড়েছে ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

তিনি বলেন, আইএমইডির সূত্র অনুযায়ী, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন বিগত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের ৬ হাজার ৫০২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৯ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা হয়েছে। রপ্তানি আয় বিগত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের ৭ হাজার ৭৫৯ মিলিয়ন ডলার হতে বেড়ে ৮ হাজার ৭৯ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আমদানি ব্যয় ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১১ দশমিক ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। আমদানি ঋণপত্র খোলা প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ১৬  ও নিষ্পত্তির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যক্তি খাতে ঋণপ্রবাহ ১৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়েছে (সেপ্টেম্বর ২০১৫ থেকে সেপ্টেম্বর ২০১৬)। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০১৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত  প্রায় ৩১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরের ৬ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর সময়ে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।

অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের রাজস্ব আহরণ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা (জিডিপির ১২ দশমিক ৩৬ শতাংশ)। প্রথম প্রান্তিকে আহরিত রাজস্বের পরিমাণ ৪৩ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা, যা বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার ১৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ। প্রথম প্রান্তিকে লক্ষ্যমাত্রার এক পঞ্চমাংশের চেয়ে কম অর্জিত হয়েছে। তাই রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য অর্জনে আমাদের তৎপরতা আরো বাড়ানো প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

অর্থমন্ত্রী ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের  প্রথম প্রান্তিকের সরকারি ব্যয় পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের বাজেটে মোট ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা (জিডিপির ১৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ)। এর মধ্যে অনুন্নয়নসহ অন্যান্য ব্যয় ২ লাখ ২৯ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা (জিডিপির  ১১ দশমিক ৭১ শতাংশ) এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ব্যয় ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা (জিডিপির ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ)। প্রথম প্রান্তিকে মোট ব্যয় হয়েছে ৪২ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা (বাজেটের ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ)। এর মধ্যে অনুন্নয়নসহ অন্যান্য ব্যয় ৩৫ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা (বাজেটের প্রায় ১৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ)। সার্বিকভাবে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় মোট ব্যয় ১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ, অনুন্নয়নসহ অন্যান্য ব্যয় ১৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং এডিপি ব্যয় শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ বেড়েছে।

আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে আমাদের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে ৭ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। বিগত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৭ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের হার বাড়ানোর লক্ষ্যে আমরা অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, দাতাগোষ্ঠী ও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থার মধ্যে কার্যকর সমন্বয় ও বৃহৎ প্রকল্পগুলোর অগ্রগতির নিয়মিত পরিবীক্ষণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

বাজেট ঘাটতি পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেট ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছিল জিডিপির ৫ দশমিক শূন্য শতাংশ (অনুদান ব্যতীত)। অর্থবছর শেষে মোট বাজেট ঘাটতি দাঁড়ায় জিডিপির ৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র থেকে জিডিপির শূন্য দশমিক ৮২ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে  জিডিপির ২ দশমিক ৬৪ শতাংশ অর্থের সংস্থান করা হয়। চলতি ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা যা জিডিপির ৫ শতাংশ। ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র থেকে জিডিপির ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে জিডিপির ৩ দশমিক ১৫ শতাংশ সংস্থানের পরিকল্পনা রয়েছে। ব্যাংকবহির্ভূত উৎস (জাতীয় সঞ্চয়পত্র) হতে এ পর্যন্ত প্রাপ্তি সন্তোষজনক। পাশাপাশি ব্যাংক উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে সীমিত রাখতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি (অনুদানসহ) জিডিপির ৪ দশমিক ৭ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। এ ছাড়া জিডিপির শতাংশ হিসেবে সরকারি ঋণের স্থিতি ৩৫ শতাংশ, যা অত্যন্ত সহনীয়। সার্বিকভাবে সরকারি ঋণ ব্যবস্থাপনায় আমাদের অবস্থান বেশ সন্তোষজনক।

মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, জনজীবনে স্বস্তি বজায় রাখতে মূল্যস্ফীতিকে সহনীয় পর্যায়ে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের রয়েছে বিরাট সাফল্য। বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি সেপ্টেম্বর ২০১৫ শেষে ছিল প্রায় ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বর ২০১৬ শেষে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৭১ শতাংশে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির বছরভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতির হার এখন লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও কম। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি বাড়লেও মূলত খাদ্য মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পাওয়ায় সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতি কমেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি সেপ্টেম্বর ২০১৫ সময়ের ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে সেপ্টেম্বর ২০১৬ সময়ে ৪ দশমিক ৫৬ শতাংশে নেমে এসেছে। সন্তোষজনক কৃষি উৎপাদন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের স্থিতিশীল মূল্য, অনুকূল মুদ্রা সরবরাহ পরিস্থিতি এবং সর্বোপরি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশে দেশব্যাপী পণ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। তাই সামনের দিনগুলোতে মূল্যস্ফীতি আর বাড়বে না বলে বিশ্বাস করি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ জানুয়ারি ২০১৭/হাসনাত/নৃপেন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়