ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

পাঁচ বছরেও তদন্ত শেষ হয়নি

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাঁচ বছরেও তদন্ত শেষ হয়নি

মামুন খান : এক-দুই করে দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে পাঁচটি বছর। তারপরও শেষ হয়নি সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত।

সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার পরও তদন্ত কাজে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।

২০১২ সালের এই দিনে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি।

ঘটনার পরদিন রুনির ভাই নওশের আলম রোমান রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানার এসআই মো. জহুরুল ইসলাম এ মামলার তদন্ত কাজ শুরু করেন। ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ডিবি উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলম এ মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন। এরপর সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের এক রিট পিটিশনে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল এ মামলার তদন্তভার র‌্যাবের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়।

র‌্যাবের কাছে হস্তান্তরের পর তিন দফায় তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়ে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে র‌্যাব সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন আহম্মদ এ মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন।

এদিকে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য এ পর্যন্ত আদালতের ১৫৭টি ধার্য তারিখ পার হয়েছে। সর্বশেষ গত ৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলার প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ওইদিন র‌্যাব তা দাখিল করতে পারেনি। আদালত আগামী ২১ মার্চ তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ‘তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন’ দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

এদিকে আদালত সূত্র জানিয়েছে, তদন্তের পাঁচ বছর সময়ে র‌্যাব এ মামলার মোট চারটি তদন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেছে। প্রথমে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর, এরপর ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ও ৭ জুন এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর আদালতে তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। দাখিল করা তদন্ত অগ্রগতি সংক্রান্ত প্রতিটি প্রতিবেদনে প্রায় একই ধাঁচের তথ্য লেখা রয়েছে।

সর্বশেষ দাখিল করা অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ঘটনাস্থল থেকে চুরি যাওয়া ল্যাপটপ বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে কি না এ ব্যাপারে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। সে ব্যাপারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। চুরি করা ল্যাপটপ কখনো ব্যবহার করা হলে তার তথ্য পাওয়া যেতে পারে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘মামলার ভিকটিম (সাগর-রুনি) সংবাদকর্মী হওয়ায় তদন্তকালে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে তদন্ত করা হচ্ছে।’

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন আহম্মদ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিএনএ পরীক্ষার সব রিপোর্ট পাওয়া গেছে। এসব ব্যাপারে কিছু নির্দেশনা আছে। সে অনুযায়ী তদন্ত চলছে। বিভিন্ন গ্রিলকাটা চোরদের তথ্য সংগ্রহ ও তা পর্যালোচনাও করা হচ্ছে। এ ছাড়া খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ ও মোবাইল যদি কখনো চালু করা হয় তাহলে আমরা তার লোকেশন জানতে পারব এবং খুনিদের ধরতে সক্ষম হব। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এরই মধ্যে নেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আগামী ২১ মার্চ এ মামলার অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’

ওই দিনই মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে কি না জানতে চাইলে র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘তদন্ত একদম চূড়ান্ত হয়েছে তা বলা যাচ্ছে না। বিভিন্ন আলোচনা-পর্যালোচনা ও সিনিয়রদের পরামর্শের পর এ বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।’

তবে ছিঁচকে চোর, ডাকাত কিংবা ছিনতাইকারীকে আসামি করে অভিযোগপত্র  দেওয়া হলে তা গ্রহণ করবে না বলে জানিয়েছে নিহতের পরিবার।

সাগরের মা সালেহা মনির বলেন, ‘এ মামলার তদন্ত তো হয়েই গেছে। ঘটনার পর পরই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের কথা বলেছিলেন। মূলত ওই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তদন্ত শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন কেন প্রকাশ করছে না, কোথায় গিট লেগে আছে, আমি তা বুঝতে পারছি না।’

তিনি বলেন, ‘বিষয়টি স্পষ্ট করে আমি জানিয়ে দিতে চাই। কখনো যদি এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। আর সেখানে যদি ‘ছিচকে চোর, ডাকাত কিংবা ছিনতাইকারীকে আসামি করা হয়। তাহলে আমি কখনো ওই প্রতিবেদন গ্রহণ করব না।’

তিনি আরো বলেন, ‘এটা কোনো চুরি না, ডাকাতিও না। চুরি হলে তারা নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেত। এতো ছোট জায়গা দিয়ে গ্রিল কেটে চোর ঢুকবে, তা আমি বিশ্বাস করি না। এটা সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।’

সাগরের মা বলেন, ‘সাগরের খুনিকে না দেখে আমি সাগরের কবর জিয়ারত করতে যাব না। গত পাঁচ বছরেও আমি সাগরের কবর জিয়ারত করতে যাইনি। ইনশাআল্লাহ, আমি সাগর-রুনির খুনি দেখব এবং আমার সাগরের কবর জিয়ারত করব।’

এদিকে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত অগ্রগতি সম্পর্কে জানা নেই বলে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

সাগর-রুনি হত্যার বিচার ও খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আজ শনিবার ডিআরইউ চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)।

এদিকে এতদিনেও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে না পারায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ডিআরইউ কার্যনির্বাহী কমিটি। কমিটি জানায়, পাঁচ বছর পার হলেও আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের এখনো চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করা হয়নি। অভিযোগপত্র দেওয়ার নামে দফায় দফায় সময় বাড়িয়ে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। কমিটি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত গতিশীল করা এবং অবিলম্বে খুনিদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।

ওই ঘটনায় করা মামলায় রুনির বন্ধু তানভীর রহমানসহ মোট আসামি ৮ জন। এরা হলেন, বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুন, পলাশ রুদ্র পাল, তানভীর ও আবু সাঈদ। আসামিদের মধ্যে তানভীর রহমান এবং পলাশ রুদ্র পাল জামিনে রয়েছেন।

আসামিদের প্রত্যেককে একাধিকবার রিমান্ডে নেওয়া হলেও তাদের মধ্যে কেউ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়নি।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/মামুন খান/এসএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়