ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

জ্বালানি তেলের দাম কমাতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৮, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জ্বালানি তেলের দাম কমাতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ

কেএমএ হাসনাত : জ্বালানি তেলের দাম কমালে জিডিপি বাড়ে, কৃষি ও শিল্প উৎপাদন বাড়ে। সেই সঙ্গে রপ্তানি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ে, কমে মূল্যস্ফীতি। এ জন্য জ্বালানি তেলের দাম দ্রুত কমানোর পরামর্শ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে জ্বালানি মন্ত্রণালয় এই মুহূর্তে তেলের দাম কমানোর পক্ষে নয়।

তেলের দাম কমানো হলে এর প্রভাব অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের ওপর কী হবে, সম্প্রতি তারও একটি বিস্তারিত বিবরণ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একাধিকবার জ্বালানি তেলের দাম কমানোর পরামর্শ দিলেও তা মানতে চায় না জ্বালানি মন্ত্রণালয় বরং নানা ‘ওজর-আপত্তি’ দিয়ে তারা তেলের দাম না কমানোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো যুক্তিও তারা মানতে চায় না বলে সূত্র জানিয়েছে।

জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সুফল সম্পর্কে অর্থমন্ত্রীকে পাঠানো বিবরনে বলা হয়েছে, ‘অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করা হলে অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাবসহ এর সুফল দেশের জনগণের কাছে পৌঁছে। জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় বা হ্রাসের পর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থনৈতিক সমীক্ষায় প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা দেখা যায়, ২০১৪-২০১৫ থেকে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু তাই নয়, একই সময় রফতানি বেড়েছে ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ থেকে ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ, বেসরকারি বিনিয়োগ ২২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ থেকে ২২ দশমিক ৯৯ শতাংশে উত্তীর্ণ হয়েছে। শুধু তাই নয়, জ্বালানি তেলের দাম কমানোর ফলে দেশে মূল্যস্ফীতিও কমে এসেছে। চলতি ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে ৭ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ।’

অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিবরণে তেলের দাম কমানোর সুফল সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘মূলত জ্বালানি তেলের দাম কমানো হলে অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে এর সুফল পাওয়া যায়। দেশের মোট চাহিদার বেশির ভাগ অর্থাৎ ৩৩ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল বছরে প্রয়োজন হয়। এর মূল্য সমন্বয় বা হ্রাস করা হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, বিনিয়োগ, পরিবহন, কৃষি, বিদ্যুৎ ইত্যাদি খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে প্রতীয়মান হয়।’ ডিজেল বাংলাদেশে জ্বালানি হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় এবং তা ব্যবহৃত হয় শিল্পকারখানায় ও কৃষিতে পানি সেচের কাজে। এতে করে কৃষি উৎপাদন খরচও কমে যায়।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার পর ডিজেল বিক্রি করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) প্রচুর মুনাফা করছে উল্লেখ করে অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ডিজেলের ক্ষেত্রে দেখা যায় ৮৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ আমদানি এবং ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ পরিশোধনের পর বিক্রি করা হয়। বিপিসির জানুয়ারি-ডিসেম্বর ২০১৬-এর তথ্য মতে, ১২ মাসে শুধুু আমদানিকৃত ডিজেল থেকে গড়ে লিটার প্রতি লাভ হয় ১৪ টাকা এবং স্থানীয়ভাবে পরিশোধনের পর লাভ হয় ২৬ টাকা ২১ পয়সা। যেহেতু বেশির ভাগ ডিজেলই আমদানি করে সরাসরি বিক্রি করা হয়, তাই হিসাব করলে দেখা যায় ২০১৬ সময়ে এ বাবদ গড়ে লাভ হয় চার হাজার ৮৪৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। অপর দিকে স্থানীয়ভাবে বিক্রিতে লাভ হয় এক হাজার ২৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। ফলে ২০১৬ সালে মোট ডিজেল বিক্রি করে বিপিসির মুনাফা হয়েছে ছয় হাজার ৬২৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। দুই বছরে এই লাভ হবে আনুমানিক ১৩ হাজার ২৫১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।’

অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ করা হয়েছে, ‘পুনরায় জ্বালানি তেলের দাম কমানো হলে উল্লেখিত খাতসহ অর্থনীতির অন্যান্য খাতও এর সুফল পাবে।’

এরই প্রেক্ষাপটে গত জানুয়ারি মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চার ধরনের তেলের দাম কমানোর জন্য একটি প্রস্তাব অর্থমন্ত্রীর কাছে দেয়া হয়েছে। এই তেলগুলো হচ্ছেÑ ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রল ও অকটেন। লিটার প্রতি ডিজেল ও কেরোসিন ৮ শতাংশ এবং পেট্রল ও অকটেনের দাম ৫ শতাংশ কমানোর সুপারিশ করা হয়। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত ফার্নেস অয়েলের দাম কমানোর কোনো প্রস্তাব দেয়া হয়নি। কারণ, বিগত দিনে এই তেলের দাম লিটার প্রতি ৩০ শতাংশ কমানো হয়েছিল।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ অনুযায়ী, প্রতি লিটার অকটেন বিদ্যমান ৮৯ টাকা থেকে কমিয়ে ৮৪ দশমিক ৫৫ টাকা, পেট্রল ৮৬ টাকা থেকে ৮১ দশমিক ৭০ টাকা, ডিজেল ও কেরোসিন ৬৫ টাকা থেকে কমিয়ে ৬০ টাকা করার কথা সুপারিশ করা হয়েছে। তবে বিমানের জন্য জেট ফুয়েল ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত ফার্নেস অয়েলের মূল্য কমানোর কোনো প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে না। এগুলো বিদ্যমান দামে বিক্রি হবে। এখন এ দু’টি পণ্য লিটার প্রতি বিক্রি হচ্ছে জেট ফুয়েল ৬৩ টাকা ও ফার্নেস অয়েল ৪২ টাকা করে।

চার ধরনের তেলের দাম কমানো হলেও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এগুলো বিক্রি করে লাভ করবে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রস্তাব অনুযায়ী তেলের দাম হ্রাস করা হলেও বিপিসি লিটার প্রতি অকটেনে মুনাফা করবে ছয় টাকা ৯ পয়সা, কেরোসিনে ১০ টাকা ৫৬ পয়সা, ডিজেলে তিন টাকা ২২ পয়সা ও পেট্রলে মুনাফা হবে পাঁচ টাকা আট পয়সা। আর বছরে এই চার পণ্য বিক্রিতে বিপিসির মুনাফা দাঁড়াবে মোট এক হাজার ৮৫৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/হাসনাত/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়