ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

গাইবান্ধা-১ উপ-নির্বাচন : জাতীয় পার্টির অ্যাসিড টেস্ট

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩৮, ২১ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গাইবান্ধা-১ উপ-নির্বাচন : জাতীয় পার্টির অ্যাসিড টেস্ট

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন : আগামীকাল বুধবার গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের উপ-নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ভাবা হচ্ছে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির অ্যাসিড টেস্ট।

২২ মার্চ দলটির ভোটযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক প্রথম যাত্রা। এদিনই পরীক্ষা হবে এরশাদ ও তার দলের জনপ্রিয়তা। প্রমাণ হবে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি।

দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিজেই এই উপ-নির্বাচনকে দলের আগামীদিনের জন্য অগ্নিপরীক্ষা বলে আসছেন। উপ-নির্বাচনে নিজের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শামীমকে মনোনয়ন দিয়ে তাকে বিজয়ী করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি নিজেই এই নির্বাচনের তদারকি করছেন। শামীমকে বিজয়ী করে যেকোনো মূল্যে এরশাদ তার হারানো এই আসন পুনরুদ্ধার করতে চান।

জানা গেছে, গাইবান্ধার উপ-নির্বাচনকে দলের জন্য অ্যাসিড টেস্ট হিসেবে গ্রহণ করে এক মাস আগে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত পার্টির এক যৌথসভায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এরশাদ বলেন, ‘গাইবান্ধা উপ-নির্বাচনই জাতীয় পার্টির ভোটযুদ্ধের প্রথম পরীক্ষা। এতে আমাদের পাস করতেই হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমরাই জয়ী হবো। এর মধ্য দিয়েই জাতীয় পার্টির জয়যাত্রা শুরু হবে।’

নির্বাচনের দিন প্রয়োজনে রংপুর থেকে ৫ হাজার নেতাকর্মী দিয়ে নির্বাচনী কেন্দ্র পাহারা দেওয়ার নির্দেশনাও দেন তিনি।

দলীয় সূত্র জানায়, আগামী সংসদ নির্বাচনের আগেই জাতীয় রাজনীতিতে দলের গুরুত্ব বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এরশাদ। একই সঙ্গে চেষ্টা করছেন জাতীয় পার্টিকে নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করতে। এজন্য তিনি দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী ময়দানে মহাসমাবেশ করে শোডাউন করেন। আর বলে বেড়াচ্ছেন তার দল আগামীতে আওয়ামী লীগ- বিএনপি কারো সঙ্গে জোট করবে না, একক নির্বাচন করে ক্ষমতায় যাবে। জাতীয় পার্টি শক্তিশালী, নির্বাচনী লড়াইয়ের মাধ্যমে দলটি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।

জানা গেছে, আগামী নির্বাচনী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে দলের সাংগঠনিক শক্তি ও জনপ্রিয়তা যাচাই করতে এই উপ-নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন এরশাদ। ২২ মার্চ এই উপ-নির্বাচনের মধ্যদিয়েই যাচাই হবে তার জনপ্রিয়তা। একই সঙ্গে প্রমাণ হবে এককভাবে নির্বাচন করে এরশাদ আদৌ ক্ষমতায় যেতে পারবেন কিনা। যদিও এই নির্বাচনে বিএনপি জোটের কোনো প্রার্থী নেই। জাতীয় পার্টির প্রার্থী এরশাদেরই উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তার মূল প্রতিদ্বন্ধী আওয়ামী লীগের সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা। তার সঙ্গে লড়াই করেই এরশাদের প্রার্থীকে জিততে হবে।

দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, জাতীয় পার্টির দুর্গ বলে খ্যাত বৃহত্তর রংপুরের এই আসনটি পুনরুদ্ধারের মধ্যদিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভাল ফলাফলের ইঙ্গিত দিতে চান এরশাদ। কারণ এই উপ-নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের মধ্যদিয়ে জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ অনেক কিছু নির্ভর করছে। এই নির্বাচনে ভরাডুবি ঘটলে আগামী সংসদ নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে এরশাদের যে মিশন তা ব্যর্থ হয়ে যাবে। জনগণের মধ্যেও জাতীয় পার্টি নিয়ে এক ধরনের হতাশা ও আস্থাহীনতা তৈরি হবে। এসব কারণে ২২ মার্চের এই উপ-নির্বাচন জাতীয় পার্টির জন্য বড় টার্নিং পয়েন্ট।

এরশাদের ঘরের দুর্গে পরাজয়ের মতো ঘটনা ঘটলে আগামীতে জাতীয় পার্টি ‘জাতীয় রাজনীতি ও ক্ষমতার ফ্যাক্টর’- হবে না বলেও মনে করেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।

তাদের মতে, উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টি জিতলে আগামী নির্বাচনে দলটি বড় দুটি দলের সঙ্গে ভালমতো দরকষাকষি করতে পারবে। তাছাড়া একক নির্বাচনের কথা বলে এরশাদ আওয়ামী লীগ-বিএনপির মনোয়নবঞ্চিত বিত্তশালীদের দলে টানতে পারবেন। তাছাড়া বড় দুই দলের বাইরে নির্বাচনের খায়েশ আছে এমন পেশাজীবীদেরও দলে নিয়ে আসতে সক্ষম হবেন।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর দক্ষিণ সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি রাইজিংবিডিকে জানান, ২২ মার্চ আসলে আমাদের জন্য অগ্নিপরীক্ষা।

তিনি বলেন, এই নির্বাচনে জেতা ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই। পার্টির চেয়ারম্যান নিজেই এই উপ-নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। কারণ এটি আমাদের আসন। ব্যারিস্টার শামীমকে বিজয়ী করে হারানো আসন আমরা পুনরুদ্ধার করবই।

জানা গেছে, এই উপ-নির্বাচনকে জাতীয় পার্টির অগ্নিপরীক্ষা ধরে নিয়েই জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার শামীম পাটোয়ারীকে বিজয়ী করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে দলটি।

দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি হওয়ায় তারা নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারছেন না। কিন্তু সার্বক্ষণিক নির্বাচন তদারকি করছেন তারা।

এরশাদ-হাওলাদার ছাড়া জাতীয় পার্টির একাধিক টিম মাঠে রয়েছে। দলের শীর্ষনেতারা দলীয় প্রার্থী ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে জেতাতে সুন্দরগঞ্জে অবস্থান নিয়েছেন। অংশ নিয়েছেন নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায়। কেন্দ্র পাহারা দিতে করা হয়েছে একাধিক টিম। যেকোনো মূল্যে বিজয় ছিনিয়ে আনতে চান নেতাকর্মীরা।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি এসএম ফয়সল চিশতী রাইজিংবিডিকে বলেন, সুন্দরগঞ্জ উপ-নির্বাচনে একমাত্র যোগ্য প্রার্থী ব্যারিস্টার শামীম পাটোয়ারী। শিক্ষিত ও মার্জিত মাটির মানুষ তিনি। নির্বাচন  সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে জাতীয় পার্টির প্রার্থীই জিতবেন।

জাপার প্রার্থী ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী জানান, নির্বাচনী জোয়ার জাতীয় পার্টির পক্ষে। তবে সরকারি দল অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে ২২ মার্চ ইনশাআল্লাহ আমিই জিতব।’

গত ৩১ ডিসেম্বর দুর্বৃত্তের গুলিতে সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন নিহত হলে গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসন শূন্য হয়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ মার্চ ২০১৭/নঈমুদ্দীন/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়