ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বন্ড নয়, মূলধন ঘাটতি পূরণে নগদ সহায়তা

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৫, ৬ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বন্ড নয়, মূলধন ঘাটতি পূরণে নগদ সহায়তা

কেএমএ হাসনাত :  মূলধন ঘাটতি পূরণে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর কোনো বন্ড ইসু্যু করা হবে না। ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী বন্ড ইস্যু করা হলে তা সরকারের ওপর দীর্ঘমেয়াদী দায় সৃষ্টি করবে। এ কারণে ব্যাংকগুলোর বিপরীতে কোনো বন্ড ছাড়ার অনুমতি দেয়া ঠিক হবে না। তবে সরকারি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি মোকাবেলায় বাজেট বরাদ্দ থেকে আর্থিক সহায়তা দেয়া হতে পারে। অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে বেসিক ব্যাংক সরকারের কাছে তাদের মূলধন ঘাটতি মোকাবেলায় দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকার বন্ড ছাড়ার অনুমতি চেয়েছিল। একই সঙ্গে জনতা ও রূপালী ব্যাংকও মূলধন ঘাটতি পূরণে ‘সাব-অর্ডিনেট’ বন্ডে গ্যারান্টি দেয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ৫টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি রয়েছে ১৪ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। এই ব্যাংকগুলো হচ্ছে সোনালী, জনতা ও রূপালী ব্যাংক। আর বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। মূলধন ঘাটতি কীভাবে মোকাবেলা করা যায় তার জন্য ব্যাংকিং বিভাগ থেকে সম্প্রতি ৪টি পন্থা সরকারের নীতি নির্ধারকদের সামনে তুলে ধরা হয়। এই পন্থাগুলোর মধ্যে তিনটি রয়েছে- সরাসরি নগদ মূলধন সরবরাহ বা শেয়ার ইস্যু। নীট মুনাফা বন্টন না করে বোনাস শেয়ার ইস্যু করা। শ্রেণিকৃত ঋণ কমিয়ে প্রভিশন ঘাটতি কমানো।

সূত্র জানায়, প্রথম পন্থার বিষয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে মতামত দেয়া হয়- এক্ষেত্রে প্রয়োজনের তুলনায় বাজেট বরাদ্দ নিতান্ত কম। আর দুই ও তিন নম্বর পন্থার বিষয়ে বলা হয়- কাাঙ্খিত, তবে বাস্তবসম্মত নয়। অন্যদিকে, রিক্যাপিটালাইজেশন বন্ড ও সাব-অর্ডিনেট বন্ড ইস্যু’র বিষয়ে ব্যাংকিং বিভাগের মন্তব্য হচ্ছে- এতে সরকারের নগদ কোনো দায় নেই, তবে ব্যাংকগুলো ক্রেতাদের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হলে এর দায় সরকারের ওপর বর্তাবে।

অন্যদিকে, ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে প্রস্তাবিত মূলধন সহায়তা দেয়ার বিষয়ে ব্যাংকিং বিভাগের মতামত হচ্ছে- এই পদক্ষেপ নেয়া হলে বেসেল-২ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বেসেল-৩) গাইডলাইন প্রতিপালনের লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোর মূলধন অবস্থানের উন্নয়ন হবে। তবে বর্তমানে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় বিদ্যমান প্রয়োজন অতিরিক্ত তারল্য পরিস্থিতি ও গড় কস্ট অব ফান্ড বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তাবিত মূলধন সহায়তার ফলে ব্যাংকগুলোর ব্যালেন্স শিটে উন্নতি হলেও ব্যাংকগুলোর ব্যবসার উন্নয়নে মুনাফা বৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং তফসিলি ব্যাংকের ঋণদানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে কু-ঋণের পরিমান কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হবে।

বেসিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে ২০ বছর মেয়াদি রিক্যাপিটালাইজেশন বন্ড ইস্যু করা হলে তাতে সরকারের দায় নেই বলে ব্যাংকটি উল্লেখ করেছিল। কিন্তু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের মতামত হচ্ছে- বেসিক ব্যাংকের এই মতামত সঠিক নয়। রিক্যাপিটালাইজেশন বন্ড ইস্যু করা হলে তাতে সরকারের নগদ সহায়তার মতই বাজেট ঘাটতি বাড়বে। এ ছাড়া জনতা ও রূপালী ব্যাংকের জন্য প্রস্তাবিত সাব-অর্ডিনেট বন্ডে গ্যারান্টি দেওয়াও সরকারের পক্ষে সমীচীন নয়।

তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যাংকিং বিভাগ থেকে মতামত দেওয়া হয়েছে- অর্থ বিভাগের ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকের মূলধন পুনর্গঠন খাতে বরাদ্দকৃত ২ হাজার কোটি টাকা হতে ব্যাংকগুলোর মূলধন অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে এ খাত থেকে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে মূলধন সহায়তা দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ এপ্রিল ২০১৭/হাসনাত/শাহনেওয়াজ                

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়