ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পারিবারিক দ্বন্দ্বে দু’টুকরো খেলাফত আন্দোলন

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৫, ৬ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পারিবারিক দ্বন্দ্বে দু’টুকরো খেলাফত আন্দোলন

মুহাম্মদ নঈমুদ্দীন : ভেঙে দু’টুকরো হলো হাফেজ্জি হুজুর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। হাফেজ্জি হুজুরের পারিবারিক দ্বন্দ্ব, নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের লড়াইয়ের কারণে দলটির এই ভাঙন। এ যেন চাচা-ভাতিজার লড়াই, আবার ভাইয়ের সঙ্গে ভাইয়ের চরম বিরোধ।

বৃহস্পতিবার হাফেজ্জি হুজুরের বড় ছেলে মাওলানা আহমদুল্লাহ আশরাফের দ্বিতীয় ঘরের ছেলে মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ আশরাফের নেপথ্যে আরেকটি খেলাফত আন্দোলন আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। খেলাফত আন্দোলনের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা দিয়ে পুরানা পল্টনের একটি রেস্তোরাঁয় মাওলানা জাফরুল্লাহ খানকে আমির, মুহিবুল্লাহ আশরাফকে মহাসচিব করে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে নতুন কমিটিকে আসল দল বলে দাবি করা হয়।

এর আগে নতুন কমিটির আমির মাওলানা জাফরুল্লাহ খান একসময় খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব ছিলেন। তখন ওই কমিটির আমির ছিলেন হাফেজ্জি হুজুরের বড় ছেলে মাওলানা আহমাদুল্লাহ আশরাফ। তিনি অসুস্থ হলে বেশ কিছুদিন আগে খেলাফতের মূল কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়।

জানা গেছে, হাফেজ্জি হুজুরের ছোট ছেলে মাওলানা আতাউল্লাহকে আমির ও আহমদুল্লাহ আশরাফের বড় ঘরের ছেলে মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজিকে মহাসচিব করে কমিটি গঠন করা হয়। আর আগের মহাসচিব মাওলানা জাফরুল্লাহ খানকে করা হয় আমিরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা। কিন্তু মূল নেতৃত্ব থেকে জাফরুল্লাহকে সরিয়ে দেওয়ায় তার অনুসারী ও আহমাদুল্লাহ আশরাফের অন্য ছেলেরা মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। তাছাড়া অসুস্থ হলেও মাওলানা আহমাদুল্লাহ আশরাফের জীবদ্দশায় তার পরিবর্তে ছোটভাইকে আমির করায় বিষয়টি নিয়ে নেতাকর্মী ও হাফেজ্জি হুজুরের পরিবারের মধ্যে চরম বিরোধ দেখা দেয়। একপর্যায়ে বিরোধ গড়ায় দলীয় ভাঙনে।

দলীয় সূত্র জানায়, পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও নেতৃত্বের বিরোধকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার খেলাফত আন্দোলন ভেঙে যায়। চাচা ও বৈমাত্রেয় ভাইয়ের নেতৃত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন মুহিবুল্লাহ আশরাফ। তার নেপথ্যে নতুন এই কমিটি গঠিত হয়। তিনি এই দলের মহাসচিব নির্বাচিত হন। আর অপর খেলাফতের বর্তমান যিনি আমির তিনি এই মুহিবুল্লাহর আপন চাচা। আর ওই কমিটির মহাসচিব তার বৈমাত্রেয় ভাই। ফলে খেলাফত আন্দোলনের আরেকটি কমিটি গঠিত হওয়ায় চাচা-ভাতিজা ও ভাই-ভাইয়ে নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের লড়াই জমে উঠেছে। এখন দুপক্ষই নিজেদের আসল খেলাফত দাবি করছে। আসল কারা এটি নির্ধারণে শেষ পর্যন্ত তাদের নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হতে হবে। দলটির নামে যারাই নিবন্ধন পাবে হয়তো তারাই টিকে যাবে, এমনটাই জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। তবে তারা এ বিষয়টিকে দুঃখজনক বলেও মত দিয়েছেন।

নতুন কমিটি গঠনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে খেলাফত আন্দোলনের আমির মুহাম্মদ জাফরুল্লাহ খান বলেন, আত্মশুদ্ধি, সমাজশুদ্ধি ও রাষ্ট্রশুদ্ধির জন্যই বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের জন্ম।

তিনি বলেন, অধিকাংশ নেতাকর্মী বর্তমান কমিটি মেনে নেয়নি, তারা নতুন কমিটি গঠনের তাগাদা দিয়েছেন। তাই আমরা নিয়মতন্ত্র রক্ষা করতেই নতুন কমিটি গঠন করতে বাধ্য হয়েছি। প্রতিনিধি সম্মেলন করে নেতাকর্মীদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফলে আজ থেকে খেলাফত আন্দোলন নামে আর কোনো কমিটির অস্তিত্ব নেই।

তবে মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ ও মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজির নেতৃত্বাধীন খেলাফত আন্দোলনই মূল বৈধ কমিটি দাবি করেছেন এই কমিটি প্রচার সম্পাদক সুলতান মহিউদ্দিন।

তিনি বলেন, নিবন্ধন আমাদের পক্ষে। আমাদের কমিটিই মূল কমিটি। আজকে যে কমিটি গঠিত হয়েছে তার কোনো ভিত্তি নেই। বরং মাওলানা জাফরুল্লাহ খান আমাদের বর্তমান কমিটির রাজনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি নতুন কমিটি গঠন করে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় তাকে আজ দলের সব পদ-পদবি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি এ নিয়ে নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ এপ্রিল ২০১৭/নঈমুদ্দীন/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়