ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আলোচিত মামলায় দৃষ্টি থাকবে সুপ্রিম কোর্টে

মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ৬ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আলোচিত মামলায় দৃষ্টি থাকবে সুপ্রিম কোর্টে

মেহেদী হাসান ডালিম: প্রায় ৩ সপ্তাহের অবকাশকালীন ছুটি শেষে বোরবার খুলছে সুপ্রিম কোর্ট। রোববার থেকে আইনজীবী-বিচারপ্রার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকবে সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গন।

নিম্ন আদালতে বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা বিধিমালা, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের আপিল শুনানি, জামায়াত নেতা সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড চেয়ে রিভিউ শুনানি, এরশাদের সাজার বিরুদ্ধে আপিলের রায়, ঐশী রহমানের আপিলের রায়, রমনায় বোমা হামলা মামলার শুনানির মত আলোচিত মামলার ভিড়ে জমজমাট থাকবে উচ্চ আদালত অঙ্গন। এই সময় সারাদেশের মানুষের দৃষ্টি থাকবে সুপ্রিম কোর্টের দিকে। 

বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি:  নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করতে সরকারকে আগামী ৮ মে পর্যন্ত সময় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ওই দিন এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

গত ৪ এপ্রিল গেজেট প্রকাশে রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সময় আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করে বলেন, ‘এরপর আর কোন অজুহাত দেখাবেন না।’

এর আগেও গেজেট প্রকাশে কয়েক দফা সময় নেয় সরকার।

নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন না করায় আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে ১২ ডিসেম্বর তলবও করেন আপিল বিভাগ। 

গত বছরের ৭  নভেম্বর  বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা ২৪ নভেম্বরের মধ্যে গেজেট আকারে প্রণয়ন করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।

১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেওয়া হয়। ওই রায়ের আলোকে নিন্ম আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল।

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের আপিল শুনানি:   বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শুনানির জন্য ৮ মে দিন ধার্য রয়েছে। একইসঙ্গে   নিয়োগ দেয়া ১২ অ্যামিকাস কিউরিকে (আদালতের বন্ধু) এই সময়ের মধ্যে লিখিত বক্তব্য দাখিল করতে বলা হয়েছে। 

গত ৭ মার্চ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

গত বছর ৫ মে  বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে রায় ঘোষণা করেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইনসভার কাছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা রয়েছে। দেশের সংবিধানেও শুরুতে এই বিধান ছিল। তবে সেটি ইতিহাসের দুর্ঘটনা মাত্র।

রায়ে আরও বলা হয়, কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্র​গুলোর মধ্যে ৬৩  শতাংশ রাষ্ট্রেই অ্যাডহক ট্রাইব্যুনাল বা ডিসিপ্লিনারি কাউন্সিলরের মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণের বিধান রয়েছে।

সাঈদীর রিভিউ  শুনানি: আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা রিভিউ আবেদন ও খালাস চেয়ে করা সাঈদীর রিভিউ আবেদন শুনানির জন্য আগামী ১৪ মে দিন ধার্য রেখেছেন আপিল বিভাগ।

গত ৬ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন।

গত বছরের ১৭ জানুয়ারি আপিলের রায় থেকে খালাস চেয়ে রিভিউ আবেদন করেন সাঈদী। 

মোট ৯০ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে আমৃত্যু কারাদণ্ড থেকে খালাস পেতে ১৬টি যুক্তি দেখানো হয়েছে।

গত বছরের ১২ জানুয়ারি সাঈদীর অপরাধের শাস্তি অমৃত্যু কারাদণ্ড থেকে বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড করার জন্য সুপ্রিমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রাষ্ট্রপক্ষ রিভিউ আবেদন করে। রাষ্ট্রপক্ষের ৩০ পৃষ্ঠার মূল আবেদনে ৫টি গ্রাউন্ড দেখানো হয়।

২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে  ২০১৩ সালের  ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। 

এরশাদের  আপিলের রায়: বিভিন্ন উপহার রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দেওয়ার অভিযোগ করা মামলায় ৩ বছরের সাজার বিরুদ্ধে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের করা আপিলের  রায় আগামী ৯ মে রায় ঘোষণা করবেন হাইকোর্ট।

গত ১২ এপ্রিল বিচারপতি মো: রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন।

গত বছরের ৩০ নভেম্বর ২৪ বছর পর দূনীর্তি মামলায় সাজার বিরুদ্ধে এরশাদের আপিল শুনানি শুরু হয়।

১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি থাকাকালে বিভিন্ন উপহার রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এরশাদের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগে ১৯৯১ সালের ৮ জানুয়ারি তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরোর উপপরিচালক সালেহ উদ্দিন আহমেদ সেনানিবাস থানায় মামলাটি করেন। ওই মামলায় ১৯৯২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের রায়ে এরশাদের তিন বছরের সাজা হয়। 

রমনায় বোমা হামলা মামলা: রমনায় বোমা হামলার ঘটনায় করা হত্যা মামলার আপিলের পরবর্তী শুনানি  আগামী ১৪ মে অনুষ্ঠিত হবে। ওইদিনই শুনানি শেষ হবে বলে জানিয়েছেন এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম আইনজীবী সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোরশেদ।

চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল শুনানি শুরু হয়।

২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হন। ঘটনাস্থলেই মারা যান ৯ জন। 

ঐশীর আপিল শুনানি: পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত ঐশী রহমানের আপিলের চূড়ান্ত শুনানি কোর্ট খোলার পরই শুরু হবে।

এর আগে গত ১০ এপ্রিল ঐশী রহমানের মানসিক অবস্থা পর্যক্ষণ করেন হাইকোর্ট।

গত ৩ এপ্রিল মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত ঐশী রহমানের মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য তাকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ ডিআইজি প্রিজনকে দেন হাইকোর্ট।

গত ১২ মার্চ পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত ঐশীর ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শুরু হয়।

ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষা বিধিমালা নিয়ে রায়: দেশের সকল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের প্লে গ্রুপ থেকে এ লেভেল পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, পুন:ভর্তি ফি ও সেশন চার্জ বিষয়ে শিক্ষা বিধিমালা গঠনে জারি করা রুলের  আগামী রায় ১১ মে ঘোষণা করবেন হাইকোর্ট।

গত ৫ এপ্রিল বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো: বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ধার্য করেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৪ সালে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জাভেদ ফারুক  শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, পুন:ভর্তি ফি ও সেশন চার্জ বিষয়ে শিক্ষা বিধিমালা গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।

পিলখানা হত্যা  মামলার আপিলের রায়: বিডিআর বিদ্রোহের সময় পিলখানা হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৫২ আসামির ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও আসামিদের আপিলের রায় ঘোষণা করবেন হাইকোর্ট।

গত ১৩ এপ্রিল বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিশেষ হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষামাণ রাখেন।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআরের সদর দপ্তরে পিলখানা ট্র্যাজেডিতে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। এছাড়া খালেদা জিয়ার ৪ মামলা বাতিলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি, মওদুদের নাইকো মামলা নিয়ে শুনানি, সুন্দরবনের চারপাশের স্থাপনা উচ্ছেদ নিয়ে রিটের শুনানিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলা ও রিটের শুনানি হবে সুপ্রিম কোর্ট খোলার পর থেকেই।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ মে ২০১৭/মেহেদী/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়