ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ভ্যাট হার কমিয়ে রাজস্ব আদায়ে বিকল্প পথে সরকার

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১২, ২২ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভ্যাট হার কমিয়ে রাজস্ব আদায়ে বিকল্প পথে সরকার

এম এ রহমান : মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন-২০১২ (ভ্যাট/মূসক) বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় বিতর্ক ভ্যাট হার। ব্যবসায়ীদের ক্রমাগত দাবির মুখে সরকার শেষ পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল ‍মুহিত ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ থেকে কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তবে ভ্যাট হার কমিয়ে সরকার রাজস্ব ঘাটতি পুষিয়ে নিতে বিকল্প পথে হাঁটছে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সর্বক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দেওয়ার পরিবর্তে বিভিন্ন স্তরে হ্রাসকৃত হারে আদায়ের কথা বলছে। তবে সরকার ভ্যাট হার কমিয়ে একক হারই রাখতে চাইছে। কিন্তু ভ্যাট হার কমালে কমে যেতে পারে রাজস্ব আদায়। কারণ বড় অঙ্কের ভ্যাট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানও এ সুবিধার আওতায় চলে আসবে। রাজস্ব কমে যাওয়ার ধাক্কা সামলাতে তাই বড় অঙ্কের ভ্যাট প্রদানকারী কিছু খাতের ওপর সম্পূরক শুল্ক আরোপের চিন্তা করছে সরকার।

ভ্যাটের হার কমানোর কারণে এসব খাত থেকে যে পরিমাণ রাজস্ব কমে যাবে, তা বাড়তি সম্পূরক শুল্ক আরোপের মাধ্যমে আদায় করতে চাইছে সরকার। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন অর্থমন্ত্রী।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, ভ্যাটের হার ১২ কিংবা ১৩ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা চলছে। এর ফলে রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক ধাক্কা তৈরি হতে পারে। আর তাই রাজস্ব পুষিয়ে নিতে সিগারেট, মোবাইল ফোনসহ কিছু খাতের ওপর বাড়তি সম্পূরক শুল্ক আরোপ হতে পারে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআর এক ঊর্ধ্বতন সূত্র রাইজিংবিডিকে বলেন, সিগারেট, মোবাইল ফোন, গ্যাস সঞ্চালন খাত, সিমেন্ট, সারসহ প্রায় ৩০টি খাত থেকে আদায় হয় মোট ভ্যাটের প্রায় ৮০ শতাংশ। ফলে ভ্যাটের হার কমালে তারাও ওই সুবিধার আওতায় আসবে। এসব খাতের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট রেখে কিছু খাতের ওপর ভ্যাটের হার কমানোর আলোচনা চলছিল। কিন্তু এ কাজটি করতে গেলে নতুন ভ্যাট আইনের মৌলিক উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। নতুন ভ্যাট আইনের মূল বিষয়ই হচ্ছে ভ্যাটের একক হার। অথচ কিছু খাতে ১৫ শতাংশ আর কিছু খাতে ১২ শতাংশ করা হলে কার্যত বহুস্তর ভ্যাটই হচ্ছে। তাতে পুরো প্রক্রিযাটিতে ফের জটিলতা তৈরি হতে পারে। প্রয়োজন হবে বাড়তি সময়েরও। এজন্য সরকার ভ্যাটের হার কমিয়ে সম্পূরক শুল্ক আরোপের বিকল্প চিন্তা করছে। তবে সব খাতেই আবার সম্পূরক শুল্ক আরোপ নাও হতে পারে। গ্যাস, সারসহ কিছু খাতে এ শুল্ক আরোপ হবে কিনা, তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, কিছু খাতে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হলেও এনবিআরের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কমতে পারে। তবে নতুন আইন বাস্তবায়নে বাড়তি রাজস্ব আদায়ের কারণে বেশি পরিমাণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রাজস্বের আওতায় আসবে। তাই শেষ পর্যন্ত ভ্যাট আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতি নাও হতে পারে। প্রথম বছর কিছুটা ধাক্কা এলেও পরবর্তী বছরগুলোতে তা স্বাভাবিক হবে। আদায় হবে বাড়তি ভ্যাট।

নতুন ভ্যাট আইনের বিষয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে আমরা ব্যবসায়ীদের ওপর আস্থা রাখছি। এনবিআর ব্যবসায়ীদের পার্টনার ঘোষণা করেছে। তারা হচ্ছেন ভ্যাট স্মার্ট ও ভ্যাট ট্রাস্টি।

তিনি বলেন, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে কোনোভাবেই জনসাধারণের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক চাপ ফেলবে না। কারণ নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য সম্পূর্ণ ভ্যাটের বাইরে রাখা হয়েছে। নতুন আইন হচ্ছে স্বচ্ছ, আধুনিক, সময়োপযোগী, সর্বোপরি দেশি-বিদেশি ব্যবসাবান্ধব ও চাহিদার উপযোগী আইন। এ আইন পুরনো আইনের চেয়ে উৎকৃষ্ট।

২০১২ সালে সরকার নতুন ভ্যাট আইন পাস করে। এর তিন বছর পর ২০১৫ সাল থেকে আইনটি কার্যকর করার কথা ছিল। নতুন আইনে সব ধরনের পণ্য ও সেবাকে ঢালাওভাবে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাটের আওতায় আনা হয়। সঙ্কুচিত ভিত্তিমূল্য ও ট্যারিফ মূল্যের ভিত্তিতে হ্রাসকৃত হারে ভ্যাট দেওয়ার সুযোগও বাতিল করা হয়। বাতিল করা হয়, প্যাকেজ পদ্ধতির ভ্যাট ব্যবস্থাও।

যদিও বড় আকারের ভ্যাট প্রদানকারী কিছু খাতের পক্ষে উপকরণ কর রেয়াত নেওয়া তুলনামূলক সহজ। কিন্তু উপকরণ কর রেয়াত নিতে ব্যর্থ, সঠিক হিসাবরক্ষণে অসমর্থ এমন সাধারণ ব্যবসায়ীদের দাবি ছিল ভ্যাটের হার কমানোর।

নতুন আইনে ভ্যাট আদায়কারী কর্মকর্তাদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্বও বাড়ানো হয়। এসব বিষয়ে ব্যবসায়ীদের আপত্তি ছিল। এসব ইস্যু সমাধানের লক্ষ্যে ২০১৪ সালে সরকার এনবিআর ও ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে। ওই কমিটি ভ্যাটের ভিন্ন ভিন্ন হার নির্ধারণসহ সাত দফা সুপারিশ দিলেও কার্যত তা আমলে নেওয়া হয়নি বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ।

সমাধানের উপায় খুঁজতে দফায় দফায় বৈঠক হয় এনবিআর ও ব্যবসায়ীদের। সর্বশেষ বাজেট আলোচনায় সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এ নিয়ে হট্টগোল করেন ব্যবসায়ীরা। এর পর ভ্যাটের হার কমানোর ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী।

ঘোষণায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আইন কার্যকর হবে। ভ্যাট আইন নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। নতুন আইনে ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত ভ্যাট হার কিছুটা কমানোর বিবেচনা করা হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ মে ২০১৭/এম এ রহমান/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়