ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভেজালবিরোধী অভিযানে কিছুটা স্বস্তি

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:১১, ১ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভেজালবিরোধী অভিযানে কিছুটা স্বস্তি

ফাইল ফটো

আহমদ নূর : মাহে রমজানের শুরু থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভেজাল খাবারবিরোধী অভিযানের প্রশংসা করে ‘কিছুটা’ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন রাজধানীতে বসবাসরত অনেকে।

তারা বলছেন, এটা সময়ের দাবি এবং সবাইকে ভেজালমুক্ত খাবারের কিছুটা নিশ্চয়তা দিতে সরকারের এ উদ্যোগ কাজে দেবে।

রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে যারা ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেন তাদের মধ্যে রয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি), র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), দুই সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)।

প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি তারা রমজানের আগে থেকে খাবারের ভেজালবিরোধী অভিযান শুরু করেছেন।

তারা আরো দাবি করছেন, আদালত পরিচালনা করে তারা সফল এবং রমজান মাসজুড়ে তারা তাদের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, রমজান মাসের শুরু থেকে প্রথম চার দিনে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে প্রায় ৩৫ লাখেরও বেশি টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর মধ্যে ৩০ মে বিএসটিআইয়ের ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৪ প্রতিষ্ঠানকে ১৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা, রমনা এলাকায় ডিএমপির ভ্রাম্যমাণ আদালত একটি প্রতিষ্ঠানকে ২ লাখ টাকা, গুলশানে ঢাকা জেলা প্রশাসনের অভিযানে একটি সুপার শপকে ১ লাখ টাকা জরিমানা উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া ঢাকার মহাখালীতে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি করায় দুজনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের এমন কর্মকাণ্ডকে স্বাগত জানিয়ে রাজধানীতে বসবাসরতরা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছেন যারা খাবারে ভেজাল মিশ্রণ ও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যে নতুন মেয়াদ বসিয়ে বাণিজ্য করে যাচ্ছেন। এর মাধ্যমে তারা গ্রাহকদের বিভিন্নভাবে প্রতারিত করছেন, যার মধ্যে অন্যতম হলো সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলা।

সরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এটা খুবই উদ্বেগজনক যে, মুনাফার জন্য কিছু ব্যবসায়ী ভেজাল পণ্য বিক্রি করছেন। আমাদের মতো সাধারণ মানুষ আসল বা নকল সেটা বুঝতে পারেন না। নিজেদের অজান্তেই আমরা সেগুলো ব্যবহার করে নিজেদেরই ক্ষতি করছি। বিশেষ করে এসব খাওয়ার কারণে শরীরে নানা অসুখ বাঁধে। সরকারের সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে সজাগ হয়েছেন এটা আমাদের জন্য স্বস্তির। শুধু একটা মাস নয়, তাদের এ বিষয়ে সবসময় কাজ করা উচিৎ।’

রমজানে বিশুদ্ধ খাবারের নিশ্চয়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়মিত পরিচালনা করার তাগিদ দেন তিনি।

স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আপেল মাহমুদের দাবি রমজানের পবিত্রতা রক্ষার স্বার্থে ব্যবসায়ীরা যেন খাবারে ভেজাল যোগ না করেন।

তিনি বলেন, ‘এ মাসে রোজাদাররা ইফতারে ও সেহরিতে ভেজালমুক্ত খাবার খেতে চান। আমরা যখন বাজার থেকে খাবার বা পণ্য কিনে আনি তখন ব্যবসয়ীদের ওপর বিশ্বাস করি যে তারা যেন আমাদের ভালো কিছু দেন। এখন তারা যদি ভেজাল পণ্য আমাদের কাছে বিক্রি করেন তাহলে রোজার পবিত্রতা কীভাবে রক্ষা হয়। তারাও তো রোজা রাখেন।’

রমজানে ভেজালবিরোধী অভিযানের প্রশংসা করে একটি দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক কাজী ফয়সাল ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালতগুলো যদি সারা বছর চলত, হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও কমে যেত।’

তবে ধানমন্ডিতে সালাউদ্দীন আহমেদ নামের এক ব্যবসায়ীর আশঙ্কা সারা মাস জুড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা হবে কি না তা নিয়ে।


তিনি বলেন, ‘রমজানের শুরুতে হয়তো সরকারের নির্দেশে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু সারা মাস কী এভাবে চলবে? যদি চলে তাহলে ভালো। আর যদি না চলে তাহলে একটু আশা দেখিয়ে লাভ কীসের?’

এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, মতিঝিল এলাকার কাগজ ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম, নিউ মার্কেট এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান, এলিফ্যান্ট রোড এলাকার কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার মুকিত তালুকদারসহ অনেকে।

ধানমন্ডির একটি মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা আব্দুল মুকিত। তিনি বলেন, ‘যারা হালালভাবে ব্যবসা করে না তাদের ব্যবসায় আল্লাহর রহমত থাকে না। আমি ব্যবসায়ীদের হালালভাবে ব্যবসা করার আহ্বান জানাই।’

তিনি বলেন, ‘সারা বছরই ভেজাল পণ্য বাজারে পাওয়া যায়। আমরা অন্তত রমজান মাসে বিশুদ্ধ ও ভেজালমুক্ত খাবার পেতে চাই। এ জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা রাখা উচিৎ।’

তিনি জানান, হালাল ব্যবসার তাগিদ দিয়ে পবিত্র কোরআনের সুরা নিসার ২৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না। কেবল তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ।’

সুরা আর-রাহমানের ৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা ন্যায্য ওজন কায়েম কর এবং ওজনে কম দিও না।’

এ ছাড়া মিশকাত শরিফের ২৭৮৩ নম্বর হাদিসেও ব্যবসা সম্পর্কে হজরত মোহাম্মদ (স.) বলেছেন, ‘নিজ হাতে কাজ করা এবং হালাল পথে ব্যবসা করে যে উপার্জন করা হয় তা-ই সর্বোত্তম।’

এদিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রমজানে ভেজাল খাবারের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে জেল-জরিমানা ও মামলা দেওয়ার ক্ষমতা নিয়ে সারা দেশে খাবার দোকান পরিদর্শনে ৬০০ স্যানিটারি ইন্সপেক্টর কাজ করছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সারা দেশের স্যানিটারি ইন্সপেক্টরদের কাছে এই নির্দেশনা রমজানের আগেই পাঠানো করা হয়েছিল। খাদ্যে ভেজালের প্রমাণ পেলে ৫ বছরের জেল অথবা ৫ লাখ টাকা জরিমানার মামলা করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তাদের।

এসব বিষয়ে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘রমজানে ভেজাল খাদ্যবিরোধী অভিযান পরিচালনায় বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে র‌্যাব। মাসজুড়ে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

ডিএমপির ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মশিউর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এটা আমাদের দায়িত্ব, সাধারণ মানুষের জন্য ভেজালমুক্ত খাবারের নিশ্চয়তা তৈরি করা। রমজানে যেন কেউ ভেজাল খাবার বিক্রি করতে না পারে সে বিষয়টি নজরে এনে সারা মাস ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।’




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ জুন ২০১৭/নূর/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়