ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

তৈরি পোশাক শ্রমিকের আড়ালে জঙ্গিবাদ

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ৪ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তৈরি পোশাক শ্রমিকের আড়ালে জঙ্গিবাদ

আহমদ নূর : দেশের অর্থনীতিতে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ও গ্রহণযোগ্যতাকে কাজে লাগানোর অপচেষ্টা করছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্যরা।  পোশাক শিল্প কারখানায় শ্রমিকের বেশে তারা জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের বিস্তার ঘটানোর চেষ্টা করছে বলে তথ্য পেয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

র‌্যাবের দাবি, সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হওয়া বেশ কয়েকজন জঙ্গি শিল্প কারখানায় কাজ করে- এমন তথ্য উঠে আসে। এরপর গাজীপুর জেলার বেশ কিছু পোশাক শিল্প কারখানায় নজরদারি চালিয়ে সেখানে জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব, বিস্তার ও এর চর্চার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে র‌্যাব।

এ বিষয়ে র‌্যাব-২ এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ইফতেখারুল মাবুদ বলেন, ‘কিছু দিন আগে নারায়ণগঞ্জে যে কয়জন জঙ্গি ধরা পড়েছিল তাদের সবাই বিভিন্ন শিল্প করাখানায় কাজ করত। এর পর পোশাক শিল্প কারখানাসহ সব শিল্প কারখানাগুলোতে আমরা গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছি। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন জঙ্গিরা কিছু সংখ্যক গার্মেন্টসে কাজ করছে।’

সম্প্রতি ঢাকার শিল্পাঞ্চল থানা এলাকা থেকে জেএমবির তিন সক্রিয় সদস্য মফিজুল ইসলাম ওরফে তুষার ওরফে তাওহিদ (২৯), রকিবুল ইসলাম ওরফে রকিব মোল্লা (২৩), ইলিয়াছ আহমেদকে (১৯) আটক করে র‌্যাব-২। র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা জানিয়েছেন, ‘তারা পুরাতন ধারার জেএমবির সদস্য’। তারা গাজীপুরের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কাজ করতেন এবং তাদের এক সহকর্মী ইয়াসিনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন; যিনি জেএমবির ময়মনসিংহ অঞ্চলের নেতা ছিলেন। ২০১৬ সালের ১৩ মার্চ তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন।

তাদের মতো আরো উগ্রবাদে বিশ্বাসী সদস্য বিভিন্ন পোশাক শিল্প কারখানায় রয়েছে বলে তথ্য দেন তারা। আটককৃতদের দেওয়া তথ্যে নড়েচড়ে বসে র‌্যাবের গোয়েন্দারা। পরবর্তীতে সেখানে আরো নজরদারি বাড়ানো হয়।

র‌্যাব আটকৃতদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে জানতে পারে, তারা কেউই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত নয়। স্বল্প শিক্ষা নিয়ে জীবিকার অন্বেষণে তারা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পোশাক শিল্পের শ্রমিক হিসেবে গাজীপুর আসে।

জঙ্গিবাদ নির্মূলে যারা কাজ করছেন তারা বলছেন, প্রাথমিকভাবে চিন্তা না করলেও পোশাক শিল্প কারখানায় জঙ্গিবাদ থাকতে পারে। 

পোশাক কারখানায় জঙ্গিদের অস্তিত্ব থাকা এবং না থাকার বিষয়ে বিশ্লেষকেরা দুটি কারণ উল্লেখ করেছেন। তারা বলছেন পোশাক শ্রমিকেরা প্রতিদিন যে পরিশ্রম করে তাতে তাদের জঙ্গিবাদ নিয়ে চর্চা করার সুযোগ খুবই কম। তবে সেখানে যে পরিমাণ জনশক্তি রয়েছে তাতে কিছু লোককে বিচ্ছিন্নতাবাদের দিকে নিয়ে যাওয়া (র‌্যাডিক্যালাইজড) অসম্ভব কিছু নয়।

এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারণা, যেহেতু এত দিন পোশাক শিল্প কারখানাগুলোতে তাদের নজরদারি কম ছিল, সেহেতু সেখানে জঙ্গিদের আনাগোনা বাড়তে পারে। অন্য একটি দিক থেকে জঙ্গিরা ওই এলাকাকে সুবিধাজনক হিসেবে দেখতে পারে। কারণ যেসব পোশাক শ্রমিককে জঙ্গিবাদে যুক্ত করা হচ্ছে, তাদের চিহ্নিতকরণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর খানিকটা বেগ পোহাতে হবে। এই সুযোগটা জঙ্গি নেতারা নিচ্ছে।

অপরাধ বিশ্লেষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান মনে করছেন, জঙ্গিরা যেখানে নিজেদের নিরাপদ মনে করে সেখানেই আশ্রয় নেয়। এটা হতে পারে প্রত্যন্ত অঞ্চল বা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এ বলেন, ‘জঙ্গিরা এমন জায়গায় থাকতে পছন্দ করে যেখানে তাদের কেউ সন্দেহ করে না। এটা তাদের ন্যাচার। সেই জায়গাটি হতে পারে লোকালয় অথবা জনশূন্য এলাকা। তবে তারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকতে পছন্দ করে। সেখান থেকে তারা যেকোনো নাশকতার পরিকল্পনা ও হামলার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সঞ্চয় করে। পরবর্তীতে তারা তাদের টার্গেট প্লেসে হামলা চালায়।’

র‌্যাব-২ এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ইফতেখারুল মাবুদ বলেন, ‘সাভার থেকে গাজীপুর পর্যন্ত যে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা রয়েছে সেখানে জঙ্গিরা আত্মগোপন করলে তাদের খুঁজে বের করা খুবই মুশকিল। বিশেষ করে নির্ভরযোগ্য তথ্য ছাড়া সেসব এলাকায় জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালানোটাও ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া ওই এলাকায় পোশাকসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা রয়েছে; যেখানে জঙ্গিদের অস্তিত্ব থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।’

এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধান করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ জুন ২০১৭/নূর/হাসান/এসএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়