ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘সহায়ক সরকার’ নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২১, ১৪ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘সহায়ক সরকার’ নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি

এস কে রেজা পারভেজ : একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীনদের তোড়জোড় শুরু হলেও আগে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে একটি সমাধানে পৌঁছাতে চায় বিএনপি।

এজন্য ‘তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা’ নিয়ে আন্দোলনে থাকা বিএনপি নির্বাচনকালীন একটি নতুন ফর্মুলা ‘সহায়ক সরকার’ নিয়ে মাঠে নামছে ঈদের পর। এ বিষয়ে আলোচনায় আনতে ক্ষমতাসীনদের চাপে রাখতে সব রাজনৈতিক দল এবং জনমত গঠনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথাও ভাবছে দলটি।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলের নীতি নির্ধারকরা এই বিষয়টিতে জোর দিচ্ছেন যে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোনো দলের সরকার প্রধানকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচন করার মতো রাজনৈতিক সংস্কৃতি বা বিশ্বাসযোগ্যতা এখনো গড়ে ওঠেনি।

এদিকে সংবিধানের সর্বশেষ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল হয়ে যাওয়ার কারণে এ নিয়ে আলোচনারও সুযোগ নেই। এজন্য নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থার নতুন ফর্মুলা ‘সহায়ক সরকার’ সামনে নিয়ে এসেছে দলটি।

নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থাই যে বিএনপির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সেটির মনে করিয়ে দিচ্ছেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে কোনো নির্বাচন মেনে নেওয়া হবে না। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে অবাধ ও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে হবে। যে নির্বাচন একটি সহায়ক সরকারের অধীনে হবে। হাসিনা মার্কা নির্বাচন এদেশে হবে না। হাসিনার অধীনে নির্বাচন কেউ মেনে নেবে না। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ যাকে চাইবে তারাই আসবে।’

রোজার পর দাবি আদায়ে এই বিষয়ে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি প্রধান।

‘প্রতিটি মানুষের উচিত নিজেদের মধ্যে আলোচনা করা, সিদ্ধান্ত নেওয়া যে, এই অবস্থায় কি দেশ চলবে? আমরা কি শুধু হা-হুতাশ করবো? তাই রোজা-ঈদ শেষ হয়ে গেলে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের জুলুম-অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিবাদ করতে হবে। সেটি করলেই সবাই এসে শরিক হবে।”

বিএনপি নেতারা বলছেন, ‘সহায়ক সরকার’ একটি নাম। তবে নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার যে কোনো নামেই হতে পারে। বিএনপি শুধু একটি ফর্মুলা উপস্থাপন করবে। সেটি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্যের ওপর ভিত্তি করে আলোচনা, সংযোজন-বিয়োজন হতে পারে।

বিএনপির নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের জন্য একটি নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য বিএনপি সহায়ক সরকার নিয়ে কাজ করছে। ঈদের পর তা জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে। এটা নিয়ে আলাপ আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব।

বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, ঈদের পর দ্রুততম সময়ে মধ্যে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা উপস্থাপন করবে দলটি। এরই মধ্যে এই সরকারের কাঠামো চূড়ান্ত করতে খালেদা জিয়ার নির্দেশে দলের একটি নীতি নির্ধারক ও উপদেষ্টাদের একটি দল কাজ করছেন। নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠোমো কি হবে, কিভাবে কাজ করবে, কাদের নিয়ে গঠিত হবে, ক্ষমতার পরিধি কেমন হবে-এসব বিষয় নিয়েই নানা দিক বিচার-বিশ্লেষণ করে সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করছেন। একই সঙ্গে এই সরকারের আইনি ও সাংবিধানিক দিকটিকেও বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।

দলের শীর্ষ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি এও ভাবছে যে সংবিধানের আলোকেই কিভাবে একটি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের ফর্মুলা দেওয়া যায় কী না। তবে অবশ্যই সেটি প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতায় রেখে নয়। এজন্য বিভিন্ন দেশের নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে পর্যালোচনা করছেন তারা।

দলীয় সূত্র মতে, ঈদের পরপরই প্রাথমিকভাবে ‘সহায়ক সরকার’ ব্যবস্থার এই ফর্মুলা খসড়া আকারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হবে। পরে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটি ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে সহায়ক সরকারের প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করবেন বিএনপি নেত্রী। সংবাদ সম্মেলন করে তা জাতির উদ্দেশ্য তুলে আলোচনার আহ্বান জানাবেন তিনি।

সহায়ক সরকার নিয়ে কাজ চলছে উল্লেখ করে ঈদের পরপরই তা প্রকাশ করা হবে জানান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমদ আজম খান।

রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, বিএনপি কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। এজন্য সহায়ক সরকারের কথা বলছে। এটি কোনো দলীয় সরকার ব্যবস্থা নয় অর্থাৎ আওয়ামী লীগেরও নয়, বিএনপিরও নয়। সুতরাং সহায়ক সরকার উপস্থাপনের পর সরকার যদি কোনো আগ্রহ না দেখায় সেটি জনগণের ওপরই ছেড়ে দেওয়া হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই শান্তিপূর্ণভাবে দাবি আদায়ে সরকারকে চাপে রাখতে পদক্ষেপ নেবে বিএনপি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ জুন ২০১৭/রেজা/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়