ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ঈদে এদের রোজগার

জাহাঙ্গীর আলম বকুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৮, ২৭ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঈদে এদের রোজগার

নুরুল ইসলাম ও আবু তাহের

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদে সবাই আপনজনের সান্নিধ্য পেতে গ্রামে যান। গ্রামে যেতে আগে থেকেই পরিকল্পনা করেন।সাধ্যমতো স্বজনদের জন্য কিছু নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু আবু তাহেরের বেলায় ঘটেছে উল্টোটা। তিনি ঈদকে সামনে রেখে রোজার শুরুতেই ঢাকায় চলে এসেছেন।

বয়স্ক আবু তাহের খোঁড়া পায়ে কোনো রকমে লাঠি ভর দিয়ে হাঁটেন। ঢাকায় এসে খিলগাঁওয়ের একটি মসজিদের নিচতলার এক কোণায় থাকেন। সেখানে তিনি সব সময় থাকেন না। কেবল রাতে গিয়ে ঘুমান। দিনের বেলায় মহল্লার রাস্তার মোড়ে বসে থাকেন দান-খয়রাত পাওয়ার আশায়।

তিনি জানালেন, রোজার মাসে দান-খয়রাত বেশি পাওয়া যায়। এ জন্য শরীর ভালো না থাকলেও ভোলায় গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় এসেছেন। বাড়ি ফিরে যাবেন দুই-তিন মাস পরে। কয়েক মাস বাড়িতে থেকে অনেক ঋণ হয়ে গেছে, সেই টাকা উঠলে বাড়ি যাবেন।

টাকা-পয়সা কেমন পেয়েছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রোজার ঈদ ফকিরের, খলিকা (দর্জি) আর কাপুড়ের (কাপড় ব্যবসায়ী)। এ সময় তাদের রোজগারের সময়।’ তিনি জানান, রোজায় খাবারের অভাব হয় না। একটি ফ্ল্যাট থেকে তাকে প্রতিদিন দুবার খাওয়া দেওয়া হয়। ইফতার করেন মসজিদে।

তিনি জানান, এবার ঈদে তিনটি শাড়ি এবং ছয়-সাতটি লুঙ্গি পেয়েছেন। জাকাত, ফিতরা এবং দান পেয়েছেন ২২০০০/২৩০০০ টাকা। বছরের অন্য সময় এমন আয় হয় না। তখন মাসে ৪০০০/৫০০০ টাকা হয়।

রোজার মাসে একই রকম আয়ের হিসাব দিলেন সাদেক আলী। তার দুটি পা নেই। খিলগাঁওয়ের আমান মসজিদের পাশের রাস্তায় তার দেখা মেলে। তিনি জানালেন, ব্যবসার সিজন হলো রোজার মাস। এ সময় তার খাবারের অভাব হয় না। আয়ও ২০,০০০/২২,০০০ হাজার টাকা হয়।

কিন্তু হতাশার কথা শোনালেন রাজু আহমেদ। তিনি সারা বছর বাসাবো-খিলগাঁও এলাকায় ফেরি করে মুরগি বিক্রি করেন। গ্রামের বাড়ি বরিশালের সদর উপজেলায়। দুই মাস আগে ঢাকায় এসেছেন। গ্রামে যাবেন ঈদের দু-একদিন পরে। এবার রোজগার ভালো হয়নি। আশা ছিল ঈদের আগে কিছুটা বাড়তি আয় করতে পারবেন। কিন্তু মুরগির ক্রয়মূল্য হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি বেশি হলেও বাড়তি আয় তেমন হয়নি।

প্রতি মাসে থাকা-খাওয়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাদে ১০/১২ হাজার টাকা করে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেন তিনি। এবারের ঈদে বাড়তি ৩/৪ হাজার টাকা আয় হয়েছে। তাই নিয়ে বাড়ি যাবেন। বাড়িতে স্ত্রী, এক মেয়ে ও বাবা-মা রয়েছে। আয় ভালো না হওয়ায় তাদের জন্য তেমন কিছু কিনতে পারেননি। মেয়ের জন্য জামা, বৌয়ের জন্য শাড়ি কিনেছেন। তাই নিয়েই বাড়ি যাবেন।

নুরুল ইসলাম বছরের ছয় মাস ঢাকায় রিকশা চালান। বাকি সময়টা গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠিতে ক্ষেত-খামারে কাজ করেন। তিনি ঢাকার সব এলাকায় রিকশা চালাতে পারেন না। তার এক ভাই এবং কিছু আত্মীয়-স্বজন থাকেন আশুলিয়া এবং মিরপুরে। আশুলিয়ায় বড় ভাই বাড়ি করেছেন। তাদের চোখ এড়ানোর জন্য মতিঝিল-যাত্রাবাড়ী এলাকায় রিকশা চালান।

তিনি এখানে বিয়ে করেননি, দায়-দায়িত্বও কম। বাবা-মা থাকেন গ্রামের বাড়িতে। এবার রোজা অর্ধেক হলে ঢাকায় এসেছেন। রোজা পালন করায় দিনের বেশির ভাগ সময় রিকশা চালাননি। সকালের দিকে কয়েক ঘণ্টার জন্য চালিয়ে ২০০-২৫০ টাকা যা পেয়েছেন, তাই দিয়ে নিজের চলেছে।

তিনি জানালেন, তিনি প্রত্যাশার করছেন ঈদের কয়েক দিন রিকশা চালিয়ে বাড়তি কিছু আয় করবেন। এ সময় যাত্রীদের কাছ থেকে কিছুটা বকশিশ নেওয়া যায়। যারা ঘুরতে বের হন, তাদের কাছ থেকে ভাড়া একটু বেশি চাইলেও দিতে আপত্তি করেন না।

নুরুল ইসলাম জানান, ঈদে বাড়ি যেতে পারলেন না। কিছু টাকা জমাতে পারলে দুই/তিন সপ্তাহ পর বাড়ি যাবেন। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আলীম শেখ জানালেন, তিনি পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকেন। তাই তার বাড়ি যাওয়ার তাগিদ নেই। তিনি বলেন, ‘সারা রমজান মাস রিকশা চালিয়েছি। এতে আয় ভালোই হয়েছে। প্রতিদিন ৭০০ খেকে ১০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়েছে। ঈদেও রিকশা চালাচ্ছি। কিছুটা বাড়তি আয়ের চেষ্টা করছি।’

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ জুন ২০১৭/বকুল/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়