ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মা ও দুই শিশুর আত্মহনন: বিচার ঝুলে আছে ৭ বছর 

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩১, ৯ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মা ও দুই শিশুর আত্মহনন: বিচার ঝুলে আছে ৭ বছর 

মামুন খান : রাজধানীর জুরাইনে দুই শিশু সন্তানসহ গৃহবধূ রীতার আত্মহত্যায় প্ররোচণা দেওয়ার মামলার বিচার সাত বছর ধরে ঝুলে আছে। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে বিচারিক আদালত মামলাটির বিচারকাজ করতে পারছেন না।

২০১০ সালের ১০ জুন দিবাগত রাতে রীতা, তার ছেলে প্লাবন ও মেয়ে পায়েল ২২৯ আলমবাগ নতুন জুরাইনের সোনারতরী নামের ভবনে আত্মহত্যা করে। ওই ঘটনায় পরদিন রীতার মা মাজেদা বেগম একটি মামলা দায়ের করেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধ তদন্ত বিভাগের পরিদর্শক শেখ মাহবুবুর রহমান মামলা তদন্ত করে ওই বছরের ১১ আগস্ট রীতার স্বামী রাশেদুল কবির ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা স্মৃতিসহ নয়জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। 

অভিযোগপত্রে অপর অভিযুক্তরা ছিলেন রীতার শ্বশুর সাংবাদিক শফিকুল কবির, শ্বাশুড়ি নূরবানু, ননদ কবিতা কবির, সুখন কবির, কবিতার স্বামী দেলোয়ার হোসেন পাটোয়ারি, ফার্মেসি মালিক আব্দুল গফফার এবং রীতার ড্রাইভার আল আমিন। 

এরপর ২০১১ সালের ২২ মে মামলায় রীতার স্বামী রাশেদুল কবির ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা স্মৃতিসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর তৎকালীন বিচারক মো: মোজাম্মেল হোসেন। 
অভিযুক্ত অপর দুজন হলেন রীতার ননদ কবিতা কবিরের স্বামী দেলোয়ার হোসেন পাটোয়ারী এবং নিহত রীতার ড্রাইভার আল আমিন।

একই সাথে আদালত রীতার শ্বশুর সাংবাদিক শফিকুল কবির, শ্বাশুড়ি নূরবানুসহ পাঁচজনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন।
অব্যাহতি পাওয়া অপর তিনজন হলেন, রীতার ননদ কবিতা কবির, সুখন কবির এবং ফার্মেসির মালিক আব্দুল গফফার।

আসামি রাশেদুল কবির, তার স্ত্রী স্মৃতিসহ চারজনের অব্যাহতির আবেদন নামঞ্জুর হওয়ায় অভিযোগ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে তারা হাইকোর্টে আবেদন করেন।

উক্ত আবেদনে হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন। ফলে এরপর থেকে নিম্ন আদালতে এ পর্যন্ত মামলাটিতে একাধিক সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য থাকলেও তা স্থগিতাদেশের জন্য হয়নি। 

মামলাটি সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৪ জানুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু হাইকোর্ট মামলাটির স্থগিতাদেশের মেয়াদ বৃদ্ধি করেন। এজন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক আবু আহমেদ জমাদার পরবর্তী শুনানির তারিখ রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছেন।

উল্লেখ থাকে, অভিযুক্ত চার আসামির বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচণা দেওয়ার জন্য দ-বিধির ৩০৫ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়। এছাড়া ড্রাইভার আল আমিনকে ৩০৫ ধারা ছাড়াও ৩৮১ ধারায় চুরির অপরাধেও অভিযুক্ত করা হয়।

মামলা স্থগিত সম্পর্কে আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন রাশেদ বলেন, ‘হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ রয়েছে তাই এই আদেশ বলবৎ থাকা অবস্থায় মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণের কোন সুযোগ নেই।’

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রফিক উদ্দিন বাচ্চু জানান, মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু আসামিরা চার্জ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে গেছেন। উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে মামলাটির বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে। আমরা মামলাটির বিচারকাজ শেষ করতে প্রস্তুত আছি। উচ্চ আদালতের কার্যক্রম শেষ হলে মামলাটি আমাদের কাছে এলে আমরা মামলাটির বিচারকাজ শেষ করতে সচেষ্ট থাকবো।

এদিকে এ মামলার অভিযুক্ত চার আসামির মধ্যে তিনজন জামিনে আছেন। আর রীতার ড্রাইভার আল আমিন জামিনে গিয়ে পালিয়েছেন। আদালত তার জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। অন্যদিকে রীতার শ্বশুর সাংবাদিক শফিকুল কবির মারা গেছেন বলে জানা গেছে। 

ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারে রীতার মা মাজেদা বেগম অভিযোগ করেন, প্রায় ১০ বছর আগে রীতার শ্বশুড় বাড়িতে স্মৃতি কাজ করতে আসে। স্মৃতির সাথে রাশেদুলের অবৈধ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রীতা ২০০৮ সালের ৮ আগস্ট রাশেদুল ও স্মৃতির বিয়ের কথা জানতে পারে। কিন্তু তারা এটা অস্বীকার করে। এ নিয়ে রীতা ও রাশেদুলের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়। রাশেদুল প্রায় প্রতি রাতে বাইরে থাকত। রাশেদুল একদিন তাকে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলে অন্যথায় তাকে তালাকের হুমকি দেয়। রীতা মে মাসে তার মায়ের বাসায় চলে। রীতা আসার আগে আসামিরা রীতার কাছ থেকে জোর করে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে দেয়। এরপর ২০১০ সালের ১০ জুন দিবাগত রাতে রীতা, তার ছেলে প্লাবন ও মেয়ে পায়েল ২২৯, আলমবাগ নতুন জুরাইনের সোনারতরী ভবনে আত্মহত্যা করে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ আগস্ট ২০১৭/মামুন খান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়