ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

রসিক নির্বাচন : হার্ডলাইনে এরশাদ

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১২, ১৯ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রসিক নির্বাচন : হার্ডলাইনে এরশাদ

মুহাম্মদ নঈমুদ্দীন : আসন্ন রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে দলীয় কোন্দল মেটাতে হার্ডলাইনে যাচ্ছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারী সে যেই হোক, তাকে দল থেকে বহিস্কারের মত কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন তিনি।

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থিতা ঘোষণা করায় আপন ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ারের উপর চরম ক্ষুব্ধ পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ। সিদ্ধান্ত অমান্য করায় তাকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। এরশাদ নিজেই তাকে চূড়ান্তভাবে সতর্ক করে শনিবার এই চিঠি দেন। শুধু তাই নয়, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করলে ভাতিজাকে দল থেকে বহিস্কার করার কথাও জানিয়ে দেন। তাছাড়া রংপুর নির্বাচন নিয়ে কোন্দল সৃষ্টি করায় আব্দুর রউফ মানিকের বিরুদ্ধেও বিবৃতি দেন জাপা চেয়ারম্যান।

নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় কোন্দল মেটাতে তৎপর এইচ এম এরশাদ। তিনি তার নিজের দূর্গ হিসেবে বিবেচিত রংপুরে ‘রংপুর সিটি কর্পোরেশনের’ নিয়ন্ত্রণ বর্তমান আওয়ামী লীগের কাছ থেকে উদ্ধার করে জাতীয় পর্টির হাতে নিতে চান। এজন্য প্রয়োজনে তিনি তার নিকটাত্মীয়কেও দল থেকে বহিস্কারের মত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। প্রয়োজনে তিনি আরো কঠোর হবেন। দলের নীতি নির্ধারকরা এমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেন, ‘রংপুরে আমাদের দলীয় প্রার্থী হিসেবে পার্টির চেয়ারম্যান মহোদয় মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। জয়ের হিসাব নিকেশ করেই তিনি এই মনোনয়ন দেন। তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। কিন্তু পার্টির চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ কেউ প্রার্থিতা ঘোষণা করে দলে কোন্দল সৃষ্টি এবং আমাদের প্রার্থী মোস্তফার সুনিশ্চিত বিজয় ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘রংপুর সিটি নির্বাচনের বিষয়টি পার্টির চেয়ারম্যান নিজেই দেখছেন। এই নির্বাচন নিয়ে তিনি কাউকেই খেলতে দেবেন না। সে যেই হোক, প্রয়োজনে দল থেকে বহিস্কার করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। রংপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে পার্টির চেয়ারম্যান এখন কঠোর অবস্থানে। কোন্দল মিটিয়ে জাতীয় পার্টির জয় সুনিশ্চিত করতে পার্টির চেয়ারম্যান যে কোন সিদ্ধান্ত নেবেন। কারণ, এই নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে আমাদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম হবে।’

জানা গেছে, নিজের দূর্গ রংপুরে কোন্দলের কারণে প্রথম নির্বাচনে রংপুর সিটি করপোরেশনে কর্তৃত্ব হাতছাড়া হয়েছে। এবার সেই সুযোগ হেলায় হারাতে চান না তিনি। তাই নির্বাচনে শুরু থেকেই কঠোর অবস্থানে এরশাদ। নির্বাচনে দলীয় প্রার্থিতা নিয়ে কাউকেই কোন্দল করতে দিতে নারাজ। তৃণমূলের মতামত ও স্থানীয় জনপ্রিয়তা যাচাই করে শুরুতেই একক প্রার্থী ঘোষণা করেছেন  প্রাক্তন এই রাষ্ট্রপতি।

জানা গেছে, রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্তৃত্ব উদ্ধার করার আশা নিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফাকে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন এরশাদ। ইতিমধ্যে রংপুরে গিয়ে মোস্তফাকে তিনি মেয়র প্রার্থী হিসেবে নেতাকর্মী ও স্থানীয়দের কাছে পরিচয় করিয়ে দেন। কিন্তু এরশাদের সিদ্ধান্তে বেঁকে বসেন তারই ভাতিজা প্রাক্তন এমপি আসিফ শাহরিয়ার। নিজেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হওয়ার যোগ্য দাবি করে প্রয়োজনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। এরশাদের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বরং তাকে চ্যালেঞ্জ করেই মাঠে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন আসিফ। তাকে কেন্দ্র করে বর্তমানে দুই গ্রুপে বিভক্ত রংপুর জাতীয় পার্টি। একটি মোস্তফার পক্ষ, অন্যটি আসিফের পক্ষ। নির্বাচন নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অবস্থান ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। নির্বাচনের আগে এমন পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। কোন্দল নিরসন করা না গেলে এবং একক প্রার্থী করা না গেলে শেষ পর্যন্ত বিজয় হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। সবকিছু চিন্তা করে এরশাদ রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

বহিস্কারের বার্তা দিয়ে শনিবার আসিফ শাহরিয়ারকে পাঠানো এরশাদের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আসন্ন রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সম্পর্কে জানানো যাচ্ছে যে, এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পার্টির প্রার্থী হিসেবে মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। তিনি লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ প্রকাশকারী আসিফ শাহরিয়ারকে পার্টির পক্ষ থেকে চুড়ান্তভাবে সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে যে, তিনি যদি পার্টির চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত অমান্য করে রসিক নির্বাচনে প্রার্থী হন কিংবা তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে না নেন- তাহলে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাকে জাতীয় পার্টির প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পদ থেকে বহিস্কার করা হবে।’

দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় রংপুরের এক সময়ের জাতীয় পার্টির নেতা আব্দুর রউফ মানিকের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেন এরশাদ। শনিবার বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আব্দুর রউফ মানিক যিনি কোথাও কোথাও নিজেকে জাতীয় পার্টির লোক হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন- তার সম্পর্কে জানানো যাচ্ছে যে, তিনি এখন জাতীয় পার্টির একজন সাধারণ সদস্যও নন। তাই মানিকের কোন বক্তব্যে বিভ্রান্ত হবেন না। সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী প্রশ্নে বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ নভেম্বর ২০১৭/নঈমুদ্দীন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়