ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

বিদেশে প্রথম সংরক্ষিত হলো মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্থান

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৫, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিদেশে প্রথম সংরক্ষিত হলো মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্থান

নির্মিত ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যানে মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধক্ষেত্রের একটি ম্যারাল

হাসান মাহামুদ : একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত ছিল আমাদের মিত্রপক্ষ। ভারত আমাদের যুদ্ধে সহযোগিতা করেছে, কূটনৈতিক সহযোগিতা দিয়েছে, ভারতে অবস্থান করে বীর বাঙালি যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছে।

তেমনি একটি স্থান হলো ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিলোনিয়ার রাজনগর ব্লকের ‘চোত্তাখোলা’। দু’দেশের বন্ধুত্বের স্মারক হিসেবে এখানে তৈরি করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের ‘ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান’।

এই প্রথম বাংলাদেশের বাইরে কোথাও যুদ্ধের স্মৃতিস্থান সংরক্ষণ করা হলো। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান, মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনা, যুদ্ধের সময় ত্রিপুরায় আগত শরণার্থী প্রভৃতি বিষয় ম্যুরালের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ম্যুরালগুলো তৈরি করেছেন আগরতলা সরকারি চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকরা। মৈত্রী উদ্যানে স্থাপিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও সেই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর দুটি পূর্ণবায়ব মূর্তি। এছাড়াও স্থাপিত হয়েছে স্মৃতি-স্মারকস্তম্ভ। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিতে বিভিন্ন স্মারকও স্থাপিত হয়েছে এই উদ্যানে।

জানা গেছে, আট বছরের প্রচেষ্টায় ত্রিপুরা রাজ্য সরকার মৈত্রী উদ্যানটি নির্মাণ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ ও ভারতের নিহত সেনাদের স্মৃতির প্রতি এখানে সম্মান জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশের ৪৬তম বিজয় দিবসের ক্ষণে আগামী ১৬ ডিসেম্বর এই উদ্যানটি উদ্বোধন করা হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও ভারতের মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবী ও শিল্পীদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

উদ্যানের উদ্যোক্তা দাবি করেছিল, উদ্যানটি যেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এ সময়ে বাংলাদেশে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে ত্রিপুরা যাওয়া হচ্ছে না। তাই এটি প্রধানমন্ত্রীকে ছাড়াই উদ্বোধন করবেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। উদ্বোধনের পর উদ্যানটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জন্য গৌরবের। স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত আমাদের যে সাহায্য করেছে, তার একটি স্মারক হয়ে থাকবে এই উদ্যান।’

মন্ত্রী আরো বলেন, ‘উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ত্রিপুরা যাচ্ছে। প্রতিনিধি দলে মুক্তিযোদ্ধা, গবেষক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং সাংবাদিকরা থাকবেন।’

১৯৭১ সালে চোত্তাখোলায় মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হতেন। যুদ্ধে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে তারা চলে যেতেন,
আবার সুযোগ বুঝে আসতেন দেশে। একাত্তরে তৎকালীন ফেনীর আওয়ামী লীগ নেতা খাজা আহম্মেদ চোত্তাখোলায় ঘাঁটি গড়ে তোলেন। এখান থেকে গিয়েই মুক্তিযোদ্ধারা ফেনী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চল পাকিস্তান হানাদার বাহিনী মুক্ত করে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আসা শরণার্থীরা চোত্তাখোলায় আশ্রয় নিতেন।

 

উদ্যানে ‘গণহত্যা ১৯৭১’ শিরোনামে হাশেম খানের একটি ভাস্কর্য

সেই সব স্মৃতি ধরে রাখতে ২০০৯ সালে স্থানীয় বিধায়ক সুধন দাস ওই স্থানকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি পার্ক নাম দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ উৎসব শুরু করেন। পরে এর নামকরণ করা হয় ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান। ২০১০ সালে ঢাকা সফরকালে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে কিছু করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেন। পরে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি মৈত্রী উদ্যানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত চোত্তাখোলা: আগরতলা শহর থেকে ১৩২ কিলোমিটার দূরে বিলোনিয়ার প্রায় প্রান্তসীমায় চোত্তাখোলা অবস্থিত। চোত্তাখোলার রাজনগর গ্রামে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের একটি শিবির ছিল। এখানে মুক্তিযোদ্ধারা সম্মুখ সমরের প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি নিত। মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় ত্রিপুরার সীমান্তবর্তী এই পাহাড় ঘেরা স্থানটি হয়ে উঠেছিল মুক্তিবাহিনীর অলিখিত ঠিকানা।

শুরুতে এটি একটি ট্রানজিট শরণার্থী ক্যাম্প ছিল। চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী, খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসা শরণার্থীদের শুরুতে এখানে আশ্রয় দেওয়া হতো। একটু সুস্থ হলে তাদেরকে আগরতলা, মেঘালয়, বিশালগড় এবং অনেক সময় ত্রিপুরার বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হত। মে মাস থেকে এটি ট্রানজিট ক্যাম্পের পাশাপাশি মুক্তি বাহিনীর একটি ঘাঁটিতে পরিণত হয়। ভারতীয় বাহিনীর সহায়তায় এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের খুব সন্নিকটে হওয়ায় এখান থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাজোয়া যানে বেশ কয়েকটি আক্রমন চালানো হয়। মূলত এখান থেকে অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপ ঢুকে পড়ত ফেনী, কুমিল্লাসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোতে। অপারেশন শেষে আবার ফিরে আসতো চোত্তাখোলায়।

মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে চোত্তাখোলা হয়ে উঠে পাক বাহিনীর আক্রমনের কেন্দ্রবিন্দু। পাল্টা আক্রমনের জন্য মুক্তিবাহিনীর পাশাপাশি ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ও সেনাবাহিনী এখানে শক্ত অবস্থান নেয়। এখানে বেশ কয়েকটি বাংকার তৈরি করা হয়। যে বাংকারগুলো এখনো চোত্তাখোলা মৈত্রী উদ্যানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহন করছে। এছাড়াও এখানে রয়েছে বেশ কিছু শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর, পাশাপাশি এখানে অনেক পাকিস্তানি সৈন্যকেও কবর দেওয়া হয়েছে।

পেছনের কথা: এই মৈত্রী উদ্যান গড়ে ওঠার পেছনে রয়েছে এক অনন্য ইতিহাস। ১৯৯৩ সালের ২ জানুয়ারি পার্টির বিশেষ তহবিল সংগ্রহে চন্দ্রপুর যান সিপিআইএম নেতা সুধন দাস। তহবিল সংগ্রহের পাশাপাশি আসন্ন নির্বাচনের প্রচারণাও একটি উদ্দেশ্য ছিল। চন্দ্রপুর গিয়ে তিনি এখানকার গহীণ অরণ্যে একটি ৪০০ বছরের প্রাচীন মসজিদের কথা জানতে পারেন। স্থানীয় নেতাদের কাছে শোনেন বাবরি মসজিদ ভাঙার পর থেকে সংখ্যালঘু মুসলমানদের নিরাপত্তাহীনতা, শঙ্কার কথা। রাজ্যে তখন কংগ্রেস টিইউজিএস সরকার।

সুধন দাস চন্দ্রপুরে ঘোষণা দিলেন সিপিআইএম ক্ষমতায় এলে মসজিদটি সংস্কার করা হবে, মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা হবে এবং প্রতি বছর ৬ ডিসেম্বর এখানে সংহতি মেলা করা হবে। ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে নির্বাচনে বিপুল মানুষের সমর্থন নিয়ে রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সুধন দাস এই এলাকা থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ব্লকের সভায় বাবরি মসজিদ ভাঙার পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। সভায় চন্দ্রপুর গ্রামের প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো মসজিদ প্রাঙ্গণে ৬ ডিসেম্বর সংহতি মেলার প্রস্তাব করা হয়। সর্বসম্মতিক্রমে আন্তরিকতার সঙ্গে এই প্রস্তাব গৃহীত হয়। সেই বছরই প্রথম পালন করা হয় সংহতি মেলা। এরপর প্রতিবছরই পালিত হতে থাকে সংহতি মেলা। ২০০৪ সালে ক্ষমতাসীন সিপিআইএম প্রত্যেক বিধায়ককে নিজ নিজ ব্লকে জনগণের বিনোদন ও সকালে হাঁটার জন্য ১টি করে পার্ক স্থাপনের নির্দেশ দেয়।

রাজনগরের বিধায়ক সুধন দাস চন্দ্রপুরের এই মসজিদ ও আশপাশের বেশ কয়েকটি পাহাড়, হ্রদকে কেন্দ্র করে একটি পার্ক স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেন। সুধন দাস জানতেন এই পাহাড়, চন্দ্রপুর চোত্তাখোলা গ্রাম বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের স্মৃতি বহনকারী। মুক্তিযোদ্ধারা এখান থেকেই পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। তাই তিনি নির্মাণাধীন এই পার্কের নাম দিলেন ‘মুক্তিযুদ্ধ পার্ক’।

২০০৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর সুধন দাস এই পার্ক উদ্বোধনের জন্য আমন্ত্রন জানান রাজ্য সিপিআইএমের মুখপাত্র শ্রী গৌতম দাসকে। গৌতম দাস চোত্তাখোলায় এসে এই পার্ক দেখে আপ্লুত হন এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়কার স্মৃতিচারণ করেন। এই চোত্তাখোলার সাথে মুক্তিযুদ্ধের যে স্মৃতি সেটাকে আরো বড় পরিসরে তুলে ধরার জন্য তিনি ফিরে এসে বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে জানান। এখানে উল্লেখ্য যে, গৌতম দাস ১৯৭১ সালে সিপিআইএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই- এর সভাপতি হিসেবে চোত্তাখোলায় নানা সময়ে আসতেন। তিনি জানতেন এই চোত্তাখোলার প্রকৃত ইতিহাস।

মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার ও তৎকালীন পর্যটন মন্ত্রী জিতেন চৌধুরী, গৌতম দাস মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই চোত্তাখোলায় একটি বৃহৎ পার্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ২০ হেক্টর জমি, সাতটি টিলা ও একটি প্রাকৃতিক ঝর্ণা নিয়ে গড়ে তোলা হবে এই সুরম্য উদ্যান। এই উদ্যান নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয় তৃষ্ণা অভয়ারণ্যের সহকারী বন্যপ্রাণী সংরক্ষক অভিজ্ঞ জনার্দন রায় চৌধুরীকে। সম্পৃক্ত করা হয় বাংলাদেশের কিছু অভিজ্ঞ লোককে।

ভারত সরকারের অনুরোধে উদ্যানটির পরিকল্পনা, নকশা ও অন্যান্য আনুসাঙ্গিক বিষয়ের জন্য চার বাংলাদেশীর সমন্বয়ে গঠন করা হয় একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি। এর চার সদস্য হচ্ছেন- ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, শিল্পী হাশেম খান, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন ও অধ্যাপক মেসবাহ কামাল। বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মণি এই পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর শুরু হয় এর বহুমুখী নির্মাণকাজ।

উদ্যানে কি কি থাকছে : বিলোনিয়া মহকুমার জগন্নাথদিঘি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে গড়ে উঠা এই উদ্যানে নির্মাণ করা হয়েছে ২টি সৃদৃশ্য ঝুলন্ত সেতু, সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের অনুকরনে একটি স্মৃতিসৌধ, বেশ কিছু ভাস্কর্য। এর ভেতরে বয়ে চলা প্রাকৃতিক হ্রদ বৃদ্ধি করেছে উদ্যানের সৌন্দর্য্য। পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা আছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নানা চিত্রকর্ম। বাংলাদেশের খুলনায় অবস্থিত ‘১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’-এর সৌজন্যে এখানে স্থাপিত হয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ভাস্কর্য পার্ক’।

এখানে একটি গেস্ট হাউস বা পর্যটন নিবাস গড়ে তোলা হয়েছে। গড়ে তোলা হয়েছে একটি ইকো পার্ক। নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় ১২ ফুট লম্বা স্মৃতিসৈাধ। যার প্রতিবিম্ব লেকের জলে অপূর্ব আবহের সৃষ্টি করে। বিচ্ছিন্ন টিলাগুলোকে যুক্ত করে প্রাকৃতিক আবহ ধরে রাখতে তৈরি হয়েছে কাঠের সেতু।

উদ্যানে বঙ্গবন্ধু এবং ইন্দিরা গান্ধির আলাদা পূর্ণবায়ব ভাস্কর্য

ভাস্কর্যের পেছনে টেরাকোটায় চিত্রিত করা হয়েছে সাতচল্লিশ থেকে একাত্তর পর্যন্ত বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের নানা বাঁক। এর মধ্যেই বিপুল সংখ্যক পর্যটক চোত্তাখোলায় ঘুরতে যাচ্ছেন।

উদ্যানের মাঝে রয়েছে ৫২ ফুট উচ্চতার স্মৃতিসৌধ। এই স্মৃতিসৌধটি সাভার স্মৃতিসৌধের আদলে তৈরি করা। ২০ হেক্টর জুড়ে থাকা সবকিছুই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও স্মৃতি ঘিরে। মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিদেশের মাটিতে তৈরি স্মৃতিস্থান এটিই প্রথম।

রাজ্য সরকারের উদ্যোগে ২০ হেক্টর জমির ওপর গড়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক মানের এই উদ্যান। এটি নির্মাণে প্রায় দশ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।

মৈত্রী উদ্যানে প্রবেশের পরই চোখে পড়বে তর্জনী উঠিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য। এর পাশেই আছে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর পূর্ণাবয়ব ভাস্কর্য। দুটি ভাস্কর্য থেকে কিছুটা দূরে রয়েছে সৌধ। এ ছাড়া পরম শ্রদ্ধায় গড়ে তোলা হয়েছে এমন অনেক ভাস্কর্য, জাদুঘর ও একাত্তরে গণহত্যা জাদুঘর মঞ্চ। রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের কবর। স্থাপত্যগুলো ঠিক সেই সময়ের প্রতিচ্ছবি। কোনো ভাস্কর্য যুদ্ধরত সৈনিকের, কোনো ভাস্কর্য যুদ্ধাহত সৈনিককে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার। যুদ্ধের সময়ে তৈরি করা বাংকারগুলোও রয়েছে। ২০ হেক্টর জায়গার পুরোটাই ঘন বন। বনের মাঝে আছে সাতটি টিলা এবং একটি প্রাকৃতিক ঝর্ণা। প্রবেশের রাস্তাটিও অপূর্ব।

ফাইবার গ্লাসের ভাস্কর্যে টিলার ওপর মুক্তিযুদ্ধের নানা মুহূর্ত ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতীয় সেনাদের ত্রাণসামগ্রী বিতরণ, শরণার্থী শিবির, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও যুদ্ধক্ষেত্রের নানা ছবি। উদ্যানের মধ্যে থাকা জলাশয়টির ওপর তৈরি করা হয়েছে ঝুলন্ত সেতু। যুদ্ধের সময় টিলার ওপরে তৈরি করা মুক্তিযোদ্ধাদের বাঙ্কারগুলো একইভাবে রেখে দেওয়া হয়েছে।

পুরো উদ্যানকে বাহারি গাছপালায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে। পর্যটকদের ঘুরে দেখার জন্য তৈরি করা হয়েছে বাহারি টাইলসে ছাওয়া রাস্তা। আছে বড় বড় জলাশয়, ঝুলন্ত সেতু। বন, পূর্ত, হর্টিকালচার, গ্রামোন্নয়ন, বিদ্যুৎ প্রভৃতি দপ্তরের নিরলস প্রচেষ্টায় তিলে তিলে সেজে উঠেছে চোত্তাখোলার ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান।

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এই উদ্যান আমাদের মুক্তিসংগ্রামের দুর্বার দিনগুলো যেমন স্মরণ করিয়ে দেবে, ঠিক তেমনি ফুটিয়ে তুলবে একাত্তর সালের ত্রিপুরা রাজ্যের সহমর্মিতা ও সহযোগিতার ইতিহাস। এই উদ্যানটি হতে পারে দুই দেশের পর্যটনের নতুন ঠিকানা।

তিনি বলেন, ‘এই মৈত্রী উদ্যান একদিকে হতে পারে বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস, অন্যদিকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন মাত্রা।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ ডিসেম্বর ২০১৭/হাসান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়