ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

মামলার যৌক্তিকতায় প্রশ্ন : প্রত্যাহারে ইউনাইটেড হাসপাতালের চিঠি

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ২৭ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মামলার যৌক্তিকতায় প্রশ্ন : প্রত্যাহারে ইউনাইটেড হাসপাতালের চিঠি

এম এ রহমান মাসুম : হোল্ডিং-করবাবদ সাড়ে ২১ কোটি টাকা আত্মসাতে ইউনাইটেড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ দুইজনকে আসামি করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলার যৌক্তকতা নিয়ে প্রশ্ন উপস্থাপন করেছে ইউনাইটেড হাসপাতাল লিমিটেড।

দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বরাবর লিখিত চিঠিতে মামলা দায়ের করার বিরুদ্ধে কিছু যুক্তি উপস্থাপন করে তা প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করেছে হাসপাতালটি।

ইউনাইটেড হাসপাতাল লিমিটেডের পক্ষে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাজমুল হাসানের সই করা চিঠিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মামলা দায়ের করার বিপক্ষে ৮টি যুক্তি উপস্থাপন করেছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ঢাকা সিটি করপোরেশনের কর অঞ্চল-৯ এর উপ-কর কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন সরেজমিনে হাসপাতাল ভবনটি পরিদর্শন করে ২৯ কোটি ৩৮ লাখ ৬৩ হাজার টাকা বার্ষিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে ২০০৬ সালের ২৪ আগস্ট ত্রৈমাসিক হোল্ডিং ট্যাক্স ৮৮ লাখ ১৫ হাজার ৮৯০ টাকা নির্ধারণ করে ২০০৭ সালের ২৬ আগস্ট নোটিশ দেন। কিন্তু ২০০৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর হাসপাতালের এমডি ফরিদুর রহমান ওই করারোপের পরিপ্রেক্ষিতে আপত্তি জানিয়ে অ্যাসেসমেন্ট রিভিউ বোর্ড (এ আর বি) বরাবর আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ইউনাইটেড হাসপাতাল লিমিটেডের বার্ষিক কর ২৯ কোটি ৩৮ লাখ ৬৩ হাজারের পরিবর্তে ২৪ কোটি ৯৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা নির্ধারণে হাসপাতালে নোটিশ দেয় সিটি করপোরেশন। এরপর ধার্য করা হোল্ডিং ট্যাক্সের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্ধ হয়ে ইউনাইটেড হাসপাতাল লিমিটেড হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে। যার নম্বর ১৪১২৯/২০১২। আর ওই রিট পিটিশনটি বর্তমানে হাইকোর্টে বিচারাধীন। যেহেতু হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ সম্পর্কিত বিষয়টি এখনো আদালতে বিচারাধীন এবং পুনঃনির্ধারিত ট্যাক্সের হার যেহেতু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কখনোই গ্রহণ করেনি বরং ওই নির্ধারিত ট্যাক্সের হার চ্যালেঞ্জ করে মামলা করা হয়েছে। যা বর্তমানে হাইকোর্টে বিচারাধীন। সেই একই বিষয়ে ফৌজদারী মামলা দায়ের করা সাব-জুডিস বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল।

চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অন্যান্য সমপর্যায়ের হাসপাতালের সঙ্গে সমতা বজায় রেখে কর নির্ধারণ করতে আবেদন করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাৎসরিক হোল্ডিং ট্যাক্স বেজমেন্ট ১৫ টাকার স্থলে ৫ টাকা এবং বেজমেন্ট ব্যতীত অন্যান্য ফ্লোরে ৫০ টাকার পরিবর্তে ১৬ টাকা নির্ধারণ করে সিটি করপোরেশন। যা এখনো বলবৎ রয়েছে। সেখানে ইউনাইটেড হাসপাতালের বেজমেন্ট ২০ ও অন্যান্য ফ্লোরে ১০০ টাকা নির্ধারণ করা যুক্তি সংগত নয়।

তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে রিট মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত গুলশান থানার মামলাটি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান রাইজিংবিডিকে বলেন, যেহেতু আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই, এর আইনি কোনো ব্যাখ্যার বিষয়ে আমি মন্তব্য করব না বা করা উচিত হবে না। তবে কোনো বিষয়ে আগে থেকে কোনো বিষয় রিট থাকতেই পারে। এর সঙ্গে মামলার কোনো সম্পর্ক থাকার কথা নয়।

এর আগে গত ১১ জানুয়ারি হোল্ডিং-করবাবদ সাড়ে ২১ কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে ইউনাইটেড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফরিদুর রহমান খানসহ দুইজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলায় অপর আসামি হলেন অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রাক্তন কমিশনার মিসেস রহিমা বেগম। রাজধানীর গুলশান থানায় দায়ের করা মামলার বাদী হন দুদক উপপরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম। মামলার বিষয়টি দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য রাইজিংবিডিকে নিশ্চিত করেছেন।

ইউনাইটেড হাসপাতালের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০১১ পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ ২১ কোটি ৪৪ লাখ ২৬ হাজার ৯৯৩ টাকা পরিশোধ না করে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে। দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলাটি করা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০০৬ সালে রাজধানীর গুলশান-২ আবাসিক এলাকার ৭১ নম্বর রোডের ১৫ নম্বর বাড়ির বেইজমেন্টসহ একটি আটতলা ভবনে কার্যক্রম শুরু করা ‘কন্টিনেন্টাল হাসপাতাল’ পরের বছর মালিকানা ও নাম বদলে ‘ইউনাইটেড হাসপাতাল লিমিটেড’ হয়। কিন্তু ঢাকা সিটি করপোরেশনের তালিকায় এখনো আগের নামই বহাল রয়েছে। ২০০৬ সাল থেকে হাসপাতালটির ত্রৈমাসিক হোল্ডিং ট্যাক্স ৮৮ লাখ ১৫ হাজার ৮৯০ টাকা নির্ধারণ করে ২০০৭ সালের ২৬ আগস্ট নোটিশ দেয় ঢাকা সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা পরিশোধ না করে সিটি করপোরেশনের অ্যাসেসমেন্ট রিভিউ বোর্ডে (এআরবি) আবেদন করে। সে সময় চার সদস্যের ওই বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন সিটি করপোরেশন ২১ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন কমিশনার এম এ কাইয়ুম। সদস্য হিসেবে ছিলেন কমিশনার রহিমা বেগম, প্রকৌশলী কাজী জহিরুল আজম ও আইনজীবী মালেক মোল্লা।

এজাহারে আরো বলা হয়, এআরবি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও অপর দুইজন সদস্যের অনুপস্থিতিতে রহিমা বেগম এককভাবে ২০০৯ সালে ইউনাইটেড হাসপাতালের ত্রৈমাসিক কর কমিয়ে ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৫৫০ টানায় পুনঃনির্ধারণ করেন। এতে ইউনাইটেড হাসপাতাল লিমিটেডের ত্রৈমাসিক কর ১৩ লাখ ২২ হাজার ৩৪০ টাকা কমে যায়। এরপরও ইউনাইটেড হাসপাতাল কোনো কর পরিশোধ করেনি। করের পরিমাণ না কমালে ২০১১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সিটি করপোরেশন পাওনা হতো ২১ কোটি ৪৪ লাখ ২৬ হাজার ৯৯৩ টাকা। ২০১২ সালের শেষের দিকে অনুসন্ধান শুরু করেছিল দুদক। তদন্তকালে বর্ণিত ঘটনার সঙ্গে অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা ও অন্য কোনো তথ্য পাওয়া গেলে তা আমলে নেওয়া হবে বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ জানুয়ারি ২০১৮/এম এ রহমান/এসএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়