ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

যে কারণে সিলেট থেকে আ.লীগের নির্বাচনী যাত্রা

নৃপেন রায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৩০ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যে কারণে সিলেট থেকে আ.লীগের নির্বাচনী যাত্রা

সিলেট থেকে নৃপেন রায় : সিলেট নামটি মনের মাঝে উঁকি দেওয়ার সঙ্গেই চোখের সামনে চলে আসে পাহাড়, টিলা, ঝরনা, হাওর, নদী, বন-বনানীর এক সবুজ ছায়ার প্রান্তর। ভেসে ওঠে যেন ঢেউ খেলানো ঘন সবুজে আচ্ছাদিত নৈসর্গিক দৃশ্য। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকেই এ জনপদ ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’র দেশ হিসেবে সুপরিচিত। ৩৬০ আউলিয়ার পুণ্যভূমি খ্যাত সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহপরান (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করে প্রতিবারের ন্যায় এবারও একাদশ জাতীয় নির্বাচনে হ্যাট্রিক জয়ের লক্ষ্য নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু কেন? ৩৬০ আউলিয়ার পূণ্যভূমি বলেই কি বারবার সিলেটকে অগ্রাধিকার দিয়ে নির্বাচনী শুভযাত্রা করেন শেখ হাসিনা? কী এমন অদৃশ্য যোগসূত্রতা?

মঙ্গলবার সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় নির্বাচনী প্রচারণার শুরুর আগে দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ হিসেবে খ্যাত সিলেটবাসীর জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বা প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তরও করবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। তিনি মঙ্গলবার সিলেট থেকেই আগামী নির্বাচনের প্রচারণা শুরু করবেন। তার আগে সিলেটবাসীকে উন্নয়ন উপহার ও বাস্তবায়নের ঘোষণা দেবেন বলে দলীয় একাধিক সূত্র জানান।

এদিকে চলতি বছরের মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে সিলেটসহ দেশের পাঁচ সিটি করপোরেশন এবং বছরের শেষ নাগাদ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচন দুটি সামনে রেখেই শেখ হাসিনা সিলেট থেকেই আগাম প্র্রচারণায় নামছেন এমনটিই দলের নেতারা বলছেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে আওয়ামী লীগ জনসমুদ্রে পরিণত করতে কয়েকদিন থেকে অবিশ্রান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন স্থানীয় নেতাসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় নেতারা। আগামী জাতীয় নির্বাচনে মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনটিতেও জয়ী হতে চায় দলটি। সরকার গঠনের ক্ষেত্রে এ আসনে জয় লাভের বিকল্প নেই এমন একটি মিথ দীর্ঘদিন থেকে চালু থাকায় এ আসন থেকেই দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন।

বিশেষ করে সিলেটের প্রতি আওয়ামী লীগ সভাপতির এক ধরনের দুর্বলতা সব সময়ই রয়েছে। তিনি ১৯৮১ সালের মে মাসে দেশে ফিরে ঢাকার বাইরে প্রথমেই সিলেট সফর করেছিলেন এবং জনসভায় বক্তব্য দিয়েছিলেন। আর জাতীয় নির্বাচনে সিলেট-১ আসন একটি মর্যাদাপূর্ণ আসন বলে খ্যাত। স্বাধীনতার পর থেকেই এ আসনে যে দলের প্রার্থী জয় লাভ করেছেন, সে দলই সরকার গঠন করেছে এমনটিই মিথ বা কাকতালীয়ভাবে ঘটেছে। বিশেষ করে ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের মধ্যে শুধু সিলেট-১ আসনে বিএনপির খন্দকার আবদুল মালিক জয়ী হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে বাকি ১৮টি আসনে দলীয় প্রার্থীরা পরাজিত হলেও সরকার গঠন করেছিল বিএনপি। তেমনিভাবে সপ্তম, অষ্টম ও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দুইবার আওয়ামী লীগ ও একবার বিএনপির প্রার্থী এ আসনে জয়ী হলে তাদের দল সরকার গঠন করে। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী (স্পিকার), ২০০১ সালে বিএনপির এম সাইফুর রহমান (অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী) এবং ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের আবুল মাল আবদুল মুহিত (অর্থমন্ত্রী) জয়ী হন। এ কারণেই আসনটি প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়া ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগ করে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত হলেও প্রশ্ন ওঠে আসামের অংশ সিলেটের ভাগ্যে কী হবে। ১৯৪৭র ৩ জুন এক ঘোষণায় সিলেটের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের দায়িত্ব স্থানীয় জনসাধারণের কাঁধে বর্তায়। সিদ্ধান্ত হয় গণভোট অনুষ্ঠানের। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ জুলাই সিলেটে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। দেশভাগের ইতিহাসে সিলেটের গণভোট এক বিরল ঘটনা। এই ভোটে জয়ী হতে মুসলীম লীগ ব্যাপক প্রচার চালায়। সে সময় পাকিস্তানের পক্ষে ভোট দেওয়াকে ফরজ ঘোষণা করে ফতোয়াও জারি করা হয়। যা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইয়ে উল্লেখ রয়েছে। সে সময় গণভোটের জন্য শেখ মুজিবুর রহমান ৫০০ কর্মী নিয়ে কলকাতা থেকে সিলেট এসেছিলেন। বইয়ে শেখ মুজিব লিখেছেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অনুরোধে হিন্দু রায় বাহাদুর আরপি সাহা একাধিক লঞ্চ সিলেটে পাঠিয়েছিলেন মুসলীম লীগের পক্ষে। সিলেটে গণভোটে জয় লাভ করে তারা আবার কলকাতা ফিরে যান।

দলীয় নেতারা জানান, সিলেটে মাজার জিয়ারত এবং জনসভার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করছেন। এ বিষয়ে সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত ২০ জানুয়ারি সিলেটে দলের এক বর্ধিত সভায় বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৩০ জানুয়ারি নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন। ওই দিন সিলেটে জনসভা থেকে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে নৌকা প্রতীকে ভোট চাইবেন। ওই একই সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে জননেত্রী শেখ হাসিনা সিলেট থেকেই তার সফর শুরু করবেন। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের জন্য এখন থেকেই আমরা মাঠে নেমেছি। এছাড়া গত ২৬ জানুয়ারি থেকে ১৫টি টিম সারা দেশে তৃণমূল সফর শুরু করেছে। এদিকে সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন গত শনিবার রাতে নগরের সোবহানী ঘাট পয়েন্টে এক পথসভায় স্পষ্ট করেই বলেছেন, সিলেট-১ আসনে যে বিজয়ী হবে তার দলই সরকার গঠন করবে। সুতরাং আলিয়া মাদ্রাসার জনসভা শেখ হাসিনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জনসভা।

এ বিষয়ে সোমবার রাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রাক্তন মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করার লক্ষ্যে আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। আশা করি জনসভার মাঠসহ আশপাশের এলাকা বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হবে। তিনি এই আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বলেছিলেন সিলেটের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজ হাতে নিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তার প্রতিশ্রুতি রেখেছেন। আমরা সেই প্রমাণ এরই মধ্যে পেয়েছি। এই সরকারের আমলে সিলেটের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এবারের সফরেও প্রধানমন্ত্রী অনেক উন্নয়নকাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীকে সিলেটে স্বাগত জানাতে এবং জনসভাকে সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিলবোর্ড-ব্যানার আর তোরণে পুরো নগরী ছেয়ে গেলেও জনসভাস্থলের চারপাশে কোনো ব্যানার ফেস্টুনের ঠাই হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সিলেট নগর উৎসব আমেজের শহরে পরিণত হয়েছে। সিলেট ছাড়াও বিভাগের অন্য তিন জেলা সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জেও নেতা-কর্মীরা জনসভা সফল করতে সিলেটে আসবেন।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩০ জানুয়ারি ২০১৮/নৃপেন/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়